ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

ক্রিকেট

বিদায় ডিকি বার্ড: হাস্যরস আর মানবিকতায় ভরা এক কিংবদন্তি আম্পায়ার

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১৪, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫
বিদায় ডিকি বার্ড: হাস্যরস আর মানবিকতায় ভরা এক কিংবদন্তি আম্পায়ার ডিকি বার্ড/সংগৃহীত ছবি

৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম প্রিয় ও ব্যতিক্রমী আম্পায়ার ডিকি বার্ড। আম্পায়ার হিসেবে শুরু করলেও, তিনি ছিলেন আংশিক কৌতুকাভিনেতা, আংশিক গল্পকার, যিনি ক্রিকেট মাঠ ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

১৯৭৩ সালে প্রথম টেস্টে দায়িত্ব পালন করেন বার্ড। ঠিক দুই বছর পরেই আসে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। বিনোদনপ্রিয় দর্শকদের কাছে এই সময়টা ছিল একেবারে উপযুক্ত একজন রসিক, দারুণ মিশুক আম্পায়ারের জনপ্রিয় হওয়ার জন্য। ১৯৯৬ সালে শেষ টেস্ট পরিচালনার সময় ক্রিকেটে প্রযুক্তি ঢুকে গেছে, টিভি আম্পায়ারের যুগ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বার্ড থেকে গিয়েছিলেন অন্যরকম আবহের প্রতীক।

খেলোয়াড়রা তাকে সম্মান করতেন তার ন্যায্যতার জন্য, খেলার আনন্দে মেতে থাকার জন্য। অনেক সময় খেলোয়াড়রা মজার ছলেই তাকে খেপাতেন—ডেনিস লিলি তার সোয়েটারের ভেতর রাবারের সাপ লুকিয়ে দিয়েছিলেন, অ্যালান ল্যাম্ব খেলার মাঝখানে মোবাইল ফোন তাকে জমা দিয়ে গিয়েছিলেন, যা পরে ইয়ান বোথাম ড্রেসিং রুম থেকে কল করে ‘প্র্যাঙ্ক’ সম্পূর্ণ করেছিলেন।

ইয়র্কশায়ারের মানুষ তাকে পরিবারের সদস্যের মতো সুরক্ষা দিতেন, যদিও এলবিডব্লিউ না দেওয়ায় অনেক সময় সমালোচনা শুনতে হতো। তবে তার অদ্ভুত সব আচরণে মাঠে সবসময় এক ভিন্ন রঙ যোগ হতো। ১৯৮০ সালের শতবর্ষী টেস্টে টানা বৃষ্টির কারণে তিনি দর্শকদের গালাগালি শুনে চোখের জল ফেলেছিলেন।

সবসময় সময়ের আগে পৌঁছে যেতেন, কখনো কখনো মাঠ খোলার আগেই।  একবার লর্ডসে দেয়াল টপকেও ঢুকতে হয়েছিল তাকে। এমনকি ১৯৮৪ সালে এক ম্যাচে ভুলে দু’বার টি-বিরতি দিয়েছিলেন। সবকিছুই তার গল্পের খোরাক হয়ে যেত।

বার্নসলিতে জন্ম নেওয়া বার্ড খেলোয়াড় হিসেবেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছিলেন ইয়র্কশায়ার ও লেস্টারশায়ারের হয়ে। তবে সফলতা পাননি। অবসরের পর জন ওয়ারের অনুপ্রেরণায় ১৯৭০ সালে কাউন্টি আম্পায়ার হন। তিন বছর পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যোগ দেন। সবমিলিয়ে ৬৬টি টেস্ট ও ৬৯টি ওয়ানডে পরিচালনা করেন।

১৯৯৭ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘ডিকি বার্ড, মাই অটোবায়োগ্রাফি’ যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ক্রীড়া স্মৃতিকথা হয়। জন্মশহর বার্নসলির কেন্দ্রে তার মূর্তি স্থাপন করা হয়। ২০১৪-১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের টানা দুইবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে তিনি ‘লাকি মাসকট’ হয়ে ওঠেন।

২০০৯ সালে স্ট্রোক থেকে সেরে ওঠেন তিনি। নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন থেকে দরিদ্র কিশোরদের ক্রীড়া-সহায়তায় অবদান রেখেছেন।

ডিকি বার্ড বিয়ে করেননি কখনো। তার ভাষায়, ‘আমি ক্রিকেটকেই বিয়ে করেছি। ক্রিকেটই আমার স্ত্রী। ’ 

শেষ পর্যন্ত সেই স্ত্রীকেই ভালোবেসে কাটিয়ে দিলেন তিনি পুরো জীবন।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।