ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার চাপ বাংলাদেশের একা বহন করা উচিত নয়

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার চাপ বাংলাদেশের একা বহন করা উচিত নয় জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ইয়ান ফ্রাই

ঢাকা: চরম আবহাওয়ার প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক তহবিলের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ একা বহন করা উচিত হবে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ইয়ান ফ্রাই বলেন, আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরূপ প্রভাবিত কিছু অঞ্চল পরিদর্শন করেছি এবং বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার যে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই চাপ বাংলাদেশের একা বহন করা উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলি তাদের সৃষ্ট এই সমস্যার দায় অস্বীকার করে আসছে। এর অবসান হওয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে সহায়তা করতে তহবিল প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলির একটি স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বাংলাদেশে ১০ দিনের সফর শেষে এক বিবৃতিতে ফ্রাই বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনতিবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর পুনরুদ্ধারে অর্থায়নের জন্য একটি লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠন করতে হবে।

ফ্রাই বলেন, নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের একটি বিশাল চাপের মুখোমুখি হয়। সুপেয় পানি আনতে তাদেরকে দীর্ঘ দূরত্বে হেঁটে যেতে হয়, যা তাদের যৌন হয়রানির ঝুঁকিতে ফেলে এবং শিশু যত্ন ও কৃষিকাজ থেকে দূরে রাখে। বিশেষ প্রতিবেদকের মতে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটের আকস্মিক বন্যায় নারীরা তাদের গবাদিপশু, ফসল ও সঞ্চিত বীজ হারিয়েছে। তাদের সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ সফরকালে আদিবাসীদের সাথে অনলাইনে বৈঠক করেছেন এবং সেখানে তারা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেহেতু তাদের জমির গাছ কাটা তাদের ঐতিহ্যগত জীবিকা ধ্বংস করছে এবং মিঠা পানি, খাদ্য ও ওষুধের সংকট তৈরি করছে।

জাতিসংঘের এই বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, এই গাছ কাটা, বন নিধন এবং বন উজাড় করা জনিত নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশ সরকার কতৃক গৃহীত কর্মসূচিকে অমান্য করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার এই সম্প্রদায়গুলিকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং তাই তাদের দুর্দশা উপেক্ষিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুতির বিষয়টি আমার কাছে গভীরভাবে উদ্বেগজনক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যায় ভুগছেন এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন সুযোগের সন্ধানে শহরে চলে যাচ্ছে। অনিবার্যভাবে এই মানুষগুলো বড় বড় শহরের বস্তি এলাকায় এসে আশ্রয় নিচ্ছে, যেখানে তারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিশেষ প্রতিনিধি জানান তিনি প্রতিবেদন পেয়েছেন যে, শহুরে বস্তিতে শিশুদের অবস্থা ভয়াবহ। তারা উচ্চ হারে অপুষ্টি, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং নির্যাতনের শিকার।

ফ্রাই জানান জলবায়ু পরিবর্তন কর্মীদের সাথেও তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন, যারা দাবি করেন, নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তারা সরকার কর্তৃক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকার জলবায়ু কর্মীদের কণ্ঠস্বর বন্ধ করতে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ব্যবহার করছে বলে প্রতীয়মান হয়। এটি স্পষ্টতই একটি অতি-প্রতিক্রিয়া। ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখিত না হয়েই জনগণের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।

ফ্রাই ২০২২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, ক্ষয়ক্ষতি এবং অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রচার এবং সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে, এমন একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। বিষয়গুলোর ওপর তাঁর সফরকালে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। তার বাংলাদেশ সফরের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ২০২৩ সালের জুনে মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।