ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কারেন্ট জালে পাখি নিধনে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪
কারেন্ট জালে পাখি নিধনে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেনাপোল (যশোর): ক্ষেতের ফসল রক্ষায় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে পাখি নিধন শুরু করেছেন চাষীরা। বিশেষ করে কুল, বেগুন ও টমেটো ক্ষেতে কারেন্ট জাল বেশি ব্যবহার হচ্ছে।

  এর ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পাখি, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

যশোরের শার্শা উপজেলার অধিকাংশ ফসলের ক্ষেতে দীর্ঘদিন ধরে কারেন্ট জাল ব্যবহার হলেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। এ অপরাধ সমাজের কিছু বিবেকবান মানুষের কাছে অত্যন্ত জঘন্য মনে হলেও অপরাধী ও প্রশাসনের কাছে এর তেমন গুরুত্ব নেই।  
 
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে উপজেলা অফিসের পাশে ত্রিমোহনী শামলাগ্যাছি গ্রামের দুই বিঘা একটি কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের চারপাশে প্রায় ৩০ ফুট উচু করে কারেন্ট জাল দিয়ে বাগানের মালিক পুরো ক্ষেত মুড়িয়ে রেখেছেন। জালে শালিক, ফিঙে রাজা, টিয়া, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৪টি পাখি জড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে দু’একটি পাখি জাল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বাকি পাখিগুলো দু-একদিন আগেই মারা গেছে।  
 
কথা হয় জমির অস্থায়ী মালিক সাতক্ষীরার বহুড়া গ্রামের মতলেবের ছেলে জিয়াউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি পাঁচ বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে কুল চাষ করছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, জাল পেতে পাখি নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ, তিনি জানেন কিনা।  
 
তিনি জানান, পাখির হাত থেকে কুল রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, তেমন উপকার আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে গত এক মাস ধরে তিনি এ পদ্ধতি (কারেন্ট জাল) ব্যবহার করছেন। কারেন্ট জাল ব্যবহার করা অপরাধ কিংবা এর বিকল্প হিসাবে অন্য কোনো পদ্ধতির ব্যবহারের নির্দেশনা কৃষি কর্মকর্তাসহ কেউ তাকে দেয়নি বলে জানান তিনি।  
 
স্থানীয় খোকন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন এই কুল ক্ষেতে ১০/১৫টি করে পাখি জালে আটকে মারা যায়। জমির মালিক সপ্তাহে ২/৩ বার জাল থেকে পাখি নামিয়ে মাটিতে পুতে ফেলেন। এ রকম দৃশ্য দেখতে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের কথা কি তারা আর শুনবে। বিষয়টি প্রশাসনিক ভাবে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।  
 
উপজেলার সমান্ধকাঠি গ্রামের কুল চাষী ইছাহাক আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। পাখি তাড়াতে তিনি বিকল্প হিসেবে টিন বাজিয়ে ও বোতলে গুলি ভোরে দড়ি টাঙিয়ে শব্দ তৈরি করে পাখি তাড়িয়ে থাকেন। এতে কুলের তেমন একটা ক্ষতি হয়না।  
 
এছাড়া ফসলের ক্ষেতে জরি কাগজ উড়িয়েও তিনি পাখি উড়ান। কৃষি অফিস চাষীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সতর্ক হলে অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে পাখি নিধন বন্ধ হবে বলে জানান তিনি।  
 
শার্শা প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা জয়দেব শুভ্র শনিবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, পাখি ফসলের ক্ষেত থেকে পোকা, মাকড় খেয়ে একদিকে ফসলকে রক্ষা করে অন্যদিকে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু ক্ষেতে জাল দিয়ে পাখি নিধনে চাষীদের যে উপকার হবে, সামগ্রিকভাবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।
 
শার্শা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, উপজেলাতে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে কুল চাষ হচ্ছে। তার কাছে যারা পরামর্শ নিতে আসেন তিনি তাদের কারেন্ট জাল ছাড়া বিকল্প পদ্ধতিতে পাখি তাড়ানোর বিষয়ে অবহিত করেন। কিন্তু কখনো মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এ বিষয়ে কাউকে পরামর্শ কিংবা নিষেধ করা হয়নি। বিষয়টি এখন থেকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে জানান তিনি।  
 
শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদার রহমান বাংলানিউজকে জানান, কারেন্ট জাল পেতে পাখি নিধনের বিষয়টি তিনি জানেন না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪    

** নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ফাঁদে বিপন্ন পাখি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।