ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বেল, আনারস, আখের রস, সরবত আর ডাব বেচাকেনার ধুম

মাঝারি তাপদাহে পুড়ছে মেহেরপুর

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
মাঝারি তাপদাহে পুড়ছে মেহেরপুর

মেহেরপুর: মেহেরপুরে প্রায় এক সপ্তাহের বেশি তীব্র তাপদাহে মানুষ থেকে শুরু প্রাণীকুলের হাসফাঁস শুরু হয়েছে। জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে তাবদাহের দাপট।

কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস চারদিক। সেই সঙ্গে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। তাপদাহ ও প্রচণ্ড গরমে রোজাদারদের কাছে ইফতারিতে ডাব, বেল, আনারস, আখের রসের চাহিদা বেড়েছে।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার সময় চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানিয়েছেন, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এদিন বিকেল ৩ টার সময় মেহেরপুর জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯ শতাংশ। এর আগে দুপুর ১২টার সময় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আরও এক সপ্তাহ যাবত এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, ২০ তারিখের পর তাপমাত্রা কমতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে জেলার তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র হতে পারে। সেই সঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

এদিকে প্রচণ্ড গরম ও তীব্র তাপদাহে মেহেরপুর শহর, গাংনী উপজেলা সদর ও মুজিবনগর উপজেলা সদর বিভিন্ন স্থানে ও হাটবাজারে আখের রস, বেল, তরমুজসহ অন্যান্য শরবত জাতীয় পানীয়র বিক্রি বেড়েছে।

জানা গেছে, গত ৯ দিন ধরে এ জেলায় তাবদাহের দাপট দিন দিন বাড়ছে। সকাল থেকেই সূর্যের প্রচণ্ড তাপে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে রুক্ষ। সেই সঙ্গে রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম। সূর্যের প্রখর তাপে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রাণষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হলেই গরম বাতাস লাগছে আগুনের হলকার মতো।

অনেকে সামান্য স্বস্তির জন্য ছুটে চলেছেন গাছের ছায়া তলে। গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূলও। তাপদাহের কারণে বিপাকে পড়ছেন রোজাদারসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া লোকজন।

আব্দুর রহিম ও জালাল উদ্দীন গাংনী বাজারে এসেছিলেন বেল ও আখের রস কিনতে। দুজনেই জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে এখন বেলের দামও বেড়ে আকাশচুম্বি হয়েছে। ছোট ছোট বেল পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা, মাঝারি বেল ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং বড় সাইজের বেল কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। তারপরও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা শহরের বড় বাজার এলাকায় ডাব কিনতে আসা তাইজেল হোসেন জানান, এই তীব্র গরমে ইফতারের সময় একটু আখের রস খেতে পারলে ভাল লাগে। আখের রস আগে এক গ্লাস ১০ টাকা ছিল কিন্তু এখন সেটা বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। এছাড়া একটা ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

গাংনী হাসপাতাল বাজার এলাকার ডাব বিক্রেতা শিশিরপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলাম ও রুহুল আমিন বলেন, একটা ছোট সাইজের ডাব ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং বড় সাইজের একটা ডাব ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি। এই প্রচণ্ড গরমে ডাবের চাহিদা বাড়ায় আমরা বেশি দাম দিয়ে গাছ মালিকদের কাছ থেকে কিনে আনছি। তাই ডাবের দাম অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন কিছুটা বেশি।

ফল ব্যবসায়ী শামীম জানান, এই সময়ে আনারসের চাহিদা বাড়ছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন আনারস খেয়ে তা দূর করেন।

আখেররস বিক্রেতা জাহারুল ইসলাম বলেন, বছর জুড়ে আখেররস বিক্রি হলেও রোজা আসার পর তাপমাত্রা বাড়ায় এর চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টাকার রস বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এমনিতেই পাড়া মহল্লায় আখেররসের ভালো চাহিদা রয়েছে। তার ওপর রোজা আসায় বিক্রি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রতি গ্লাস আখের রস ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। আর এক লিটার রস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। দৈনিক ২ হাজার টাকার আখেররস বিক্রি করছি।

শরবত বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, রোজার শুরুতে স্বাভাবিকভাবে অন্য সময়ের মতো বিক্রি হয় না। ইফতারির সময় সারাদিনের বিক্রি একবারে হয়ে যায়। তারপরও তাপমাত্রা বাড়ায় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।