ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

বসন্ত ও ভালোবাসায় রঙিন বইমেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
বসন্ত ও ভালোবাসায় রঙিন বইমেলা বসন্ত ও ভালোবাসার রঙিন দিনে মেলায় তরুণ-তরুণীরা ছিল মাতোয়ারা। ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে। তেমনই প্রাণের মেলাকেও যেন ফাগুনের আগুন ছুঁয়েছে।

অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন আগে থেকেই। ওরা যেন বইপ্রেমীদের বার্তা দিচ্ছিল- ‘বসন্ত এসে গেছে…। ’ আর তাই তো বইমেলায়ও সেই বসন্ত চলে এসেছে।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শুধু ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন ছিল না; ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। তাই তো ফাগুনের রঙের সঙ্গে ছিল লাল আভার উষ্ণতা। বসন্ত ও ভালোবাসার রঙিন দিনে মেলায় তরুণ-তরুণীরা ছিল মাতোয়ারা। এদিন মেলার পরতে পরতে লেগেছিল ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া।

পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের রেশ ছড়িয়েছে অমর একুশে বইমেলায়। এদিন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এবং দুটি বিশেষ দিবস একসঙ্গে থাকায় মেলায় পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। মেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতার কথাই মাথায় আসে, ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। ’

রেওয়াজ অনুযায়ী এতদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসছিল পয়লা ফাল্গুন। হলুদ পোশাকে, গাঁদা ফুল দিয়ে মানুষ দিনটি বরণে ব্যস্ত থাকতেন। পরদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রঙ বদলে যেত। কিন্তু নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে বসন্ত আসে ভালোবাসার চাদর নিয়ে। তাই প্রাণের মেলায় তরুণ-তরুণীরাও বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে নিজেদের রাঙানোর সুযোগ পেয়ে যায়। তাদের উচ্ছ্বাসে বসন্ত-ভালোবাসায় একাকার ছিল বইমেলা।

সরেজমিন দেখা যায়, বিকেল থেকেই মেলায় ভিড় ছিল লক্ষণীয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই মেলা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। মেলার প্রবেশমুখগুলোতে ছিল দীর্ঘ লাইন। প্রবেশমুখগুলোতে মানুষের চাপ সামলাতে বেগ পেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও।

মেলার ভেতরের অবস্থা ছিল আরও অন্যরকম। এক পা এগোলে আরেক পা এগোনো যায় না এমন। প্যাভিলিয়নগুলোর পাশাপাশি স্টলগুলোতেও ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তবে প্যাভিলিয়নগুলোতে দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে বিক্রয়কর্মীদের।  

বিক্রয়কর্মীরা জানান, এমন ভিড় আজই প্রথম এবারের বইমেলায়।

প্রকাশক ও আয়োজকরা জানান, ফাল্গুনের প্রথম দিন থেকে মেলায় যে বসন্তের ছোঁয়া লাগে তা মেলার শেষ অবধি অব্যাহত থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। বরং অন্যান্যবারের চেয়ে মেলা আরও প্রাণবন্ত হবে এবং মেলায় বিক্রিবাট্টাও বেশি হবে বলে তারা আশা করছেন। কেননা করোনা এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে ঢিমেতালে চলা বইমেলা এবার পুরোপুরি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই বসন্তের এই রঙ মেলার সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। অন্যান্যবারের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হবেও বলেও কেউ কেউ ধারণা করেন।

বরাবরের নিয়ম ধরে বুধবার বিকেল ৩টায় বইমেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। আর সঙ্গে সঙ্গে তারুণ্যের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। হলুদ কিংবা লাল রঙের শাড়িতে মেয়েরা আর ম্যাচিং করা পাঞ্জাবি পরে ছেলেদের মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। তরুণীদের মাথায় ছিল ফুলের মালা। কারও কারও হাতে ছিল প্রিয়জনের উপহার দেওয়া লাল গোলাপ কিংবা অর্কিড ফুল। বিকেলের পর গোটা মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়।

মেলায় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা নাফিসা বলেন, ‘আজ ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুন। বসন্তকে বরণ করে নিতে একটু স্পেশালভাবে বের হয়েছি। দুপুর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরেছি। বিকেলের পর এসেছি বইমেলায়। প্রিয় লেখকের কিছু বইও কিনলাম। ’

অন্বেষা প্রকাশনীর এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ (বুধবার) মেলায় ভিড় বেশি। বইও বিক্রি হয়েছে ভালো। গল্প-উপন্যাসসহ প্রেমের কবিতার বই বেশি বিক্রি হয়েছে। ’

পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের বিক্রয়কর্মী অনামিকা শিকদার বলেন, ‘আজকের মতো ভিড় মেলা শুরুর পর হয়নি। বই দেখিয়ে শেষ করতে পারছিলাম না। চাপ হলেও উপভোগ করছি এত ভিড়। ’

দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মেলায় তরুণ-তরুণীদের শ্রেষ্ঠ উপহার বই-ই তুলে দিতে দেখা গেছে। এসব বইয়ের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে প্রেমের কাব্য ও উপন্যাস। নিজের না বলা কথাগুলো কবি ও সাহিত্যিকদের মাধ্যমে নিজের প্রিয় মানুষটির কাছে পৌঁছে দেন তারা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাস, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজসহ রোমান্টিক কবি-সাহিত্যিকের গল্প-উপন্যাস বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানা যায়। তরুণ লেখকদের প্রেমের কবিতা-উপন্যাসও এদিন কপোত-কপোতিদের নজর কেড়েছে বলে প্রকাশকরা উল্লেখ করেন।

এদিকে মেলার প্রভাবে আশেপাশের সড়কেও তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। শাহবাগ, মৎস্য ভবন, নীলক্ষেত, পলাশি মোড়, আশেপাশের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে দেখা যায় দীর্ঘসময়। মেলাগামী মানুষকে এ সময় রিকশা ও বাস থেকে নেমে মেলায় আসতে দেখা যায়।

মেলায় আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজ বলেন, ‘মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ আসতে প্রায় আধা ঘণ্টা লেগেছে। পরে রিকশা ছেড়ে হেঁটে এসেছি। এখন মেলায় ঢোকার জন্যও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। ’

তবে দর্শনার্থীরা জানান, ভিড় হলেও বসন্ত, ভালোবাসা আর সরস্বতী পূজার দিন বইমেলায় এসে উপভোগ করছেন তারা। ঘুরে ঘুরে কিনেছেন বই, কেউ বা তুলেছেন সেলফি। আবার কেউ কেউ মেলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি, শহীদ মিনারে দিয়েছেন আড্ডা।

ফাল্গুন আর ভালোবাসার দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি:

এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশ নেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, কবি শাহেদ কায়েস, লেখক ও সংগীতজ্ঞ তানভীর তারেক এবং কথাসাহিত্যিক মাজহার সরকার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মারুফুল ইসলাম, মাসুদুজ্জামান, ইসমত শিল্পী এবং সাহেদ মন্তাজ।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাসুদুজ্জামান এবং চৈতালী হালদার। পুঁথিপাঠ করেন মো. শহীদ এবং মো. কুদ্দুস মিয়া। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রফিকুল আলম, খুরশীদ আলম, মামুনুল হক সিদ্দিক, মুর্শিদুদ্দীন আহম্মদ, মো. রেজওয়ানুল হক, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, আঞ্জুমান আরা শিমুল, চম্পা বণিক, শরণ বড়ুয়া এবং অনন্যা আচার্য।

বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: আবদুল হালিম বয়াতি’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবায়ের আবদুল্লাহ। আলোচনায় অংশ নেবেন শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মো. নিশানে হালিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাইদুর রহমান বয়াতি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।