ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

ছুটির আহ্বানে মুখরিত প্রাণের মেলা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
ছুটির আহ্বানে মুখরিত প্রাণের মেলা সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার জমে উঠেছিল বইমেলা | ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ছুটির আমন্ত্রণে বইমেলা ডেকেছে নগরবাসীকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ; সে ডাক উপেক্ষা করেনি কেউই।

মেট্রোরেল, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশা; যে যেভাবে পেরেছে, সাড়া দিয়েছে বইমেলার ডাকে। অনেকে তো আবার চলে এসেছে পায়ে হেঁটেও। এক কথায়, শুরু থেকেই যেন মেলার মাঠ সরগরম। স্টলে স্টলে ঘুরে বই বাছাই ও বই নিয়ে আড্ডায় এসেছে বইমেলার চিরচেনা দৃশ্যপট।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) চিল একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন। শনিবার সকালটা ছিল শিশুদের। সকাল ১১টার দিকে খুলে দেওয়া হয় সব ফটক। দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এ সময় প্রাণখুলে স্টলে স্টলে বাবা-মায়ের হাত ধরে ছুটে বেড়িয়েছে শিশুরা।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, পুরো সকালজুড়েই নতুন বই নিয়ে মেতেছিল খুদে পাঠকের দল। তবে সিসিমপুর কার্টুনের জনপ্রিয় চরিত্র হালুম, টুকটুকি, ইকরি আর শিকুকে নিয়েও আগ্রহ মোটেই কম ছিল না। আর বিকেল ৩টার পর থেকে শিশু চত্বরের বাইরেও দ্রুত ভিড় বাড়তে থাকে পুরো মেলাজুড়ে। এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আগেই মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

জায়গায় জায়গায় জমতে দেখা যায় আড্ডা। অনেকেই বই উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। বেলা গড়ালে বেড়ে ওঠে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ততাও। সব মিলিয়ে অমর একুশে বইমেলার চিরচেনা রূপটা যেন ধরা দিয়েছে বইমেলা শুরুর এই প্রথম লগ্নেই। তবে মেলার অবকাঠামো তৈরির কাজ অনেকটা বাকি এখনো।

মেলা প্রাঙ্গণ এখনো অগোছালো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে বেশ কিছু প্রকাশকের স্টলের নির্মাণকাজ এখনো চলছে। একাডেমির নতুন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের শুধু ছাউনি তোলা হয়েছে, মঞ্চের কাজ বাকি। খাবারের দোকানগুলোর স্থান পূর্ব দিকে। সবে সেখানে বাঁশের খুঁটি বসানো হচ্ছে। নামাজের জায়গায় প্রথম দিনে আলো ও মাদুর, কিছুই ছিল না। গতকাল আলোর ব্যবস্থা হলেও মাদুর বিছানোর কাজ শেষ হয়নি। এমন অনেক কিছুই অসমাপ্ত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু হয়ে আছে মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিস্তর জঞ্জাল।

এছাড়া মেলার মাঠে আগে যেমন বেঞ্চ তৈরি করা হতো, বসার জন্য এবার তাও নেই। ফলে বয়স্ক মানুষদের বেশ অসুবিধাই হয়েছে। এসব নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন আর বইমেলা নেই, যা আছে তা এলোমেলো, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বইয়ের হাট। বইমেলা এত বড় করার দরকার ছিল না। কারণ দেশে যথার্থ প্রকাশক হাতেগোনা। বাংলা একাডেমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিস্তৃত করে এলোমেলো করা হয়েছে। চারদিকে আবর্জনা, ধুলাবালির স্তূপে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আর আমাদের মতো বয়স্ক লোকদের জন্য বসার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন ছিল। প্রাণে সঞ্জীবনী শক্তি জাগানোর মতো বইয়েরও অভাব লক্ষণীয়। হাটের মতো বারোয়ারি অবস্থা ফিরে আসছে। এই দিকগুলো নিয়ে আয়োজকদের ভাবতে হবে। ’



বিকেল থেকে সন্ধ্যা; অনেক প্যাভিলিয়নেই দেখা গেল কয়েকজন তরুণ লেখক আড্ডায় মেতে আছেন। নতুন কী বই এসেছে, কারা কেমন লিখছে সেসব নিয়েই আগ্রহ তাদের। দুপুর ১টায় শিশুপ্রহর শেষ হলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভিড় বাড়তে থাকে সাধারণ ক্রেতা পাঠকের। তাদের কেউ নতুন বইয়ের সঙ্গে খুঁজেছেন প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য, কেউ স্টলে স্টলে ঘুরে জোগাড় করেছেন নতুন বইয়ের তালিকা। কিন্তু যে ক্রেতা পাঠক আকর্ষণের জন্য এত আয়োজন, তা এখনও গুছিয়েই উঠতে পারেনি মেলা কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকাশকদের বিশ্বাস, একটু একটু করেই জমে উঠবে এই মেলা।

কথা হয় অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হকের সঙ্গে। তার বিশ্বাস, এ বছর মেলা বেশ জমবে। করোনার কারণে দুই বছর মেলা এলোমেলো ছিল। গত বছর কাগজের দাম বৃদ্ধির একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এ বছর সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ইতিবাচক।

বহু বিখ্যাত বইয়ের প্রকাশক মনিরুল হক জানান, এবার তারা শতাধিক বই প্রকাশ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও গবেষণা। এরই মধ্যে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সাম্প্রতিককালে লেখা গল্পের সংকলন ‘অন্ধকার নামতে পারেনি’ এবং কিশোরদের জন্য লেখা গল্পগ্রন্থ ‘চোর এসে গল্প করেছিল’ বই দুটি মেলায় এসেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ছোটদের বই ‘ওগো টুনটুনি কীগো ছোটাচ্চু’ এসেছে। গোয়েন্দা কাহিনি লেখক রকিব হাসানের কয়েকটি বইও এসেছে অনন্যার স্টলে।

শনিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৭৪টি। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্বিশতজন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খসরু পারভেজ এবং হোসনে আরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন এবং কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন মুস্তাফা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নাসির আহমেদ, তারিক সুজাত, শাহনাজ মুন্নী এবং নাহার মনিকা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মিলন কান্তি দে, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং আফরোজা কণা।

এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং লক্ষ্মীকান্ত হাওলাদার-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেখ রাসেল ললিতকলা একাডেমি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুরাধা ম-ল, মুহাঃ আব্দুর রশীদ, সঞ্চিতা রাখি এবং পাপড়ি বড়ুয়া।

রোববার অমর একুশে বইমেলার ৪র্থ দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাফর ওয়াজেদ এবং আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুনতাসীর মামুন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।