ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

লড়াইয়ে নীতিহীন নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না: শেখ হাসিনা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
লড়াইয়ে নীতিহীন নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না: শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং

ঢাকা: আদর্শের জন্য নেতাকর্মীদের যেকোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নীতিহীন নেতাদের লড়াই-সংগ্রামের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নীতিহীন নেতা নিয়ে অগ্রসর হলে সাময়িকভাবে কিছু ফল পাওয়া যায়।

কিন্তু লড়াই-সংগ্রামের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। ’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক নেতার জীবনে নীতি-আদর্শ সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর সে আদর্শের জন্য যেকোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। যিনি প্রস্তুত থাকতে পারেন, ত্যাগস্বীকার করতে পারেন, তিনি সফল হতে পারেন। দেশকে কিছু দিতে পারেন। জাতিকে কিছু দিতে পারেন। ’

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অতীতে ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নেতৃত্ব আসে সংগ্রামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, কেউ আকস্মিকভাবে একদিনে নেতা হতে পারে না। তাকে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আসতে হবে। তাকে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মত্যাগ করেছে এবং তারই ফসল বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতি-সমৃদ্ধির পথে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেটাই করতে চাই। ’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে গঠন করা কোনো দল নয়। একেবারে গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। ’

তিনি বলেন, ‘যে কারণে বাংলাদেশের মানুষের যতটুকু অর্জন তা যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে জনগণের কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে কিছু দিতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ পায়- এটাই প্রমাণিত সত্য। ’

আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী সংগঠন

আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা বাধাসহ প্রতিকূল অবস্থার কথা উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত করা, এধরনের একটা অবস্থা ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো। ’

‘এই আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা। তারপরও আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগে ভাঙন এসেছে। সেই ভাঙন আবার নতুন করে গড়ে তুলেছি। সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। এই সংগঠনকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছি। ’

আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরে ১৯৮১ সাল থেকে টানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালনকারী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগ এই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। ’

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। রাজনীতি আমার জন্য নতুন কিছু ছিল না। স্কুলজীবন থেকে মিছিল-মিটিং করতাম। স্কুলের দেওয়াল টপকে আন্দোলন-সংগ্রামে যেতাম। ’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘কলেজ জীবনে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলাম। সেখানে ছাত্রলীগ সংগঠন তৈরি করা, বিভিন্ন কলেজে ঘুরে সংগঠন করা এবং কলেজে ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেও প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু কখনো চিন্তাও করিনি আওয়ামী লীগের মতো দলের নেতৃত্ব আমাকে দিতে হবে। ’

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে বারবার আঘাত আসে, আওয়ামী লীগ সংগঠনকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা অনেকেই করেছে। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই যদি দেখি- ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান। এরপর ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হলো, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলো জিয়াউর রহমান। এরপর জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া। যে যখন এসেছে সবার আগে আঘাতটা কিন্তু আওয়ামী লীগের ওপরই এসেছে। ’

‘কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া আদর্শের সংগঠন দেখে কেউ একে নিঃশেষ করতে পারেনি। সংগঠন সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে একেবারে ধ্বংস করতে পারেনি। ’

সম্মেলন মঞ্চ

তৃণমূল থেকে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা হবে

আওয়ামী লীগ তৃণমূল থেকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দলটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশে প্রায় ২৯টি জেলার কাউন্সিল হয়ে গেছে। বাকিগুলো সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বর মাস আমাদের অত্যন্ত ব্যস্ততার মাস, তাই আর করতে পারিনি। ’

‘যেহেতু আমাদের জাতীয় কাউন্সিল। এর পরপরই বাকি সব জেলার কাউন্সিলগুলো আমরা করবো। একেবারে তৃণমূল থেকে প্রত্যেকটা ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলার কাউন্সিল হবে। সংগঠনকে তৃণমূল থেকে আরও শক্তিশালী করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। ’  

যেসব কমিটির এখনো কাউন্সিল হয়নি সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা করতে পারেননি, আশা করি তারা খুব দ্রুত সম্পন্ন করবেন। কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই সংগঠন চাঙ্গা হয়, সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়। ’

এর আগে, বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দেশাত্মবোধক গান, কবিতার সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরা হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

এরপর শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অভ্যর্থনা উপ-পরিষদের সভাপতি ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

এর আগে, সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

সম্মেলন উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশালাকৃতির নৌকার আদলে নির্মাণ করা মঞ্চ। তার সামনে স্থাপন করা হয় পদ্মাসেতুর প্রতিকৃতি। এছাড়া নৌকার প্রতিকৃতি, ব্যানার-ফেস্টুন, রঙিন বাতি দিয়ে সাজানো হয় গোটা উদ্যান।

সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯ (আপডেট: ২১৫৫)
এসকে/এমইউএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।