ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

কোথাও নেই সাবেক দাপুটে মন্ত্রী নাহিদ!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
কোথাও নেই সাবেক দাপুটে মন্ত্রী নাহিদ!

সিলেট: নুরুল ইসলাম নাহিদ। সিলেট-৬ আসন থেকে চারবারের সংসদ সদস্য তিনি। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদ, এরআগেও ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা এক দশক ছিলেন মন্ত্রীর চেয়ারে। প্রভাব-প্রতিপত্তিও কম ছিল না। বছরখানেক আগের সেই দাপুটে মন্ত্রী নিজভূমেই কোণঠাসা।

বিগত দিনে সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক স্পিকার প্রয়াত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ স্বনামধন্য রাজনীতিবিদরা। তাদের ছাপিয়ে ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে জায়গা করে নেন দলটির সাবেক শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ।


 
গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে বিজয়ী হলেও মন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারেননি।
 
সিলেট থেকে কেন্দ্রের নেতৃত্বে থাকা সেই নুরুল ইসলাম নাহিদ স্থানীয় পর্যায়েও যেন একেবারে অবমূল্যায়িত! বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং কাউন্সিল। সম্মেলন সামনে রেখে সাজ সাজ রব সিলেটে। প্রচার-প্রচারণায় নগরের আনাচে-কানাচে শোভা পাচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, তোরণ।  

হাজার, হাজার ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে শোভা পাচ্ছে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয়, ওয়াবদুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের ছবি। কিন্তু কোথাও নেই সিলেট থেকে দলের প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পাওয়া এই নেতার ছবি। এমনকি বিগত দিনে মন্ত্রী থাকাকালে যেসব নেতারা সুবিধা নিয়েছেন, তাদের ব্যানারেও নেই নাহিদের ছবি।

অথচ স্থানীয়, জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রের অন্য নেতাদের ছবি গুরুত্বের সঙ্গে হাজার হাজার ডিজিটাল ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার ও তোরণে ব্যবহার হয়েছে।

সম্মেলন ঘিরে সাবেক এই মন্ত্রীর প্রতি অবজ্ঞার বিষয়টি এখন সিলেটে সাধারণ মানুষের মুখে আলোচনায়। যেমনটি বিগত দিনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বেলায় দেখা গেছে। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর প্রথম নিজভূমি সিলেট সফরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের যেতে দেখা যায়নি।

তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, কতিপয় নেতার কারণে নুরুল ইসলাম নাহিদ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এমনকি নিজ নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের কাছেও গুরুত্বহীন সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী।

নেতাককর্মীরা জানান, তার নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে কমিটি নিয়েও তার হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীরা নাহিদের ওপর ক্ষুব্ধ। গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের কমিটিতেও হস্তক্ষেপ করে কাউন্সিলে কমিটি হতে দেননি তিনি। নিজের বলয়ের ‘চার খলিফা’কে নিয়েই ছিল তার পথচলা।
ব্যানার-পোস্টারে কোথাও নেই নুরুল ইসলাম নাহিদের ছবি, ছবি: বাংলানিউজতারা হলেন- কেন্দ্রীয় যুবলীগের পরিচয়ধারী অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, সমালোচিত সিকৃবির রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব, বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক (সাবেক এসপিএস) দেওয়ান মকসুদুল ইসলাম আউয়াল ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মিছবাহ উদ্দিন। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ইতোপূর্বে এই চার খলিফার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এসব নেতাদের অনিয়মের কারণে নিজঘরেই কোণঠাসা নাহিদ।    
  
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন,  শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে নুরুল ইসলাম নাহিদকে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের কাছে ভিড়তে দেননি এই চার নেতা। যারাই মন্ত্রীর কাছে আসার চেষ্টা করেছেন, তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। নেতাকর্মীর আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ধারে কাছেও ছিলেন না তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির কয়েক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পদ অনেক বড় একটি পদ। আর সিলেটের একমাত্র নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ এই পদে আছেন। নিশ্চয়ই বিগত দিনে নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি, তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব ছিল। যে কারণে নেতাকর্মীরা তার ছবিও ব্যবহার করেননি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সাবেক এই মন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ। নয়তো ব্যানার-পোস্টারে তার (নাহিদের) ছবি থাকারতো কথা। নেতাকর্মীর ক্ষোভের প্রতিফলন এটি।
নগরীর রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা পয়েন্টের চারপাশে বিশালাকারের বিলবোর্ড আর ফেস্টুনে হারিয়ে গেছে আশপাশের প্রকৃতিও। অন্তত কোটি টাকা ব্যয় করে বিশালাকারের ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের ছবি দিয়ে প্রচারণা চালালেও কোথাও নেই নুরুল ইসলাম নাহিদের ছবি। আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদও সমাবেশ ও কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।