ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

‘আই অ্যাম নট অলওয়েজ রাইট’

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
‘আই অ্যাম নট অলওয়েজ রাইট’ ওবায়দুল কাদের

“একজন স্কুলশিক্ষকের সন্তান আজ মন্ত্রী, দেশের বৃহৎ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জীবনে এর চাইতে বেশি আর কী-ই বা চাইবার আছে? বড় কথা হলো, এর চাইতে বেশি কিছু পাবার আশাও কিন্তু করি না। কারণ, জীবনে যত কষ্ট করেছি, তার চাইতে অনেক বেশি কিছু পেয়েছি!”

“নেত্রী আমাকে অনেক দিয়েছেন। আমার ওপর আস্থা রেখেছেন।

তাই সর্বপ্রথম তার প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর নেত্রীকে একটি কথাই বলেছি, আমি এমন কিছু করবো না যাতে আপনি কষ্ট পান। আমি আমার দেওয়া প্রতিজ্ঞাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছি। ধন-সম্পদের দিকে কখনোই নজর দিইনি। সাদামাটা জীবনযাপনের জন্যে কতটুকুই বা সম্পদের প্রয়োজন? আমার সীমিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো সম্পদ নেই। আমার গ্রামের বাড়ি যান, দেখবেন প্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের বাড়ির চাইতেও আমার বাড়িটি জীর্ণ। খাটটিও জরাজীর্ণ।

তবে যা চেয়েছি সেটাই বেশি পেয়েছি। মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান। এ দুটোই ধন্য করেছে আমার জীবন। ক’জনাই বা দল করে এত কিছু পেয়েছে! আমার বরাবরই লক্ষ্য থাকে দেশকে আর দেশের মানুষকে সেই ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার প্রতিদান দেওয়া। সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। নিজেকে দেশের জন্যে, মানুষের কল্যাণের জন্যে উজাড় করে দিতে চাই। ”

কোনো আনুষ্ঠানিক ও গুরুগম্ভীর সাক্ষাৎকার নয়, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বাংলানিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বিরাম নেই চরম ব্যস্ত এই নেতার। পদ্মাসেতু প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন করার নেপথ্যে এ পর্যন্ত ১৬৮ বার প্রকল্প এলাকায় গিয়েছেন তিনি।

শনিবারও (২৭ জানুয়ারি) ব্যতিক্রম ছিলো না। সাভারে নিজ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের ফাঁকেই বাংলানিউজের প্রশ্নের জবাবে অবতারণা হয় নানান বিষয়ের। সেই আলাপচারিতায় উঠে আসে মন্ত্রীর সন্তুষ্টি, চ্যালেঞ্জ আর ভবিষ্যতের নানা পরিকল্পনার কথা।

“আমার বাবা মোশারফ হোসেন উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় যান। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন তিনি। বাবা সরকারি চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন মানুষ গড়ার কাজে। যোগ দিলেন হাইস্কুলে। ছিলেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পরে তিনি হেড মাস্টার হয়েছিলেন। আমি যখন স্কুলের ছাত্র তখন থেকেই আমার মাঝে রাজনৈতিক চেতনার উত্থান। নোয়াখালীর বসুরহাট সরকারি এ এইচ সি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাসের পর নোয়াখালী সরকারি কলেজে অধ্যয়নের সময় যুক্ত হলাম ছাত্রলীগে। মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকার ধারাবাহিকতায় একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে ছিলাম মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানার কমান্ডার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিয়োগান্তক ঘটনার পর প্রথমে ভারতে নির্বাসিত জীবন। তারপর দেশে ফিরে কারাবরণ। আড়াই বছর ছিলাম কারান্তরীণ। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। পরপর দু'বার এ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ”

স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলে চলেন, “১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে নেত্রী আমাকে একসঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ”

“২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি আমার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। বাড়ি-ঘরে থাকতে পারতাম না। প্রায় তিন বছর পালিয়ে বেড়িয়েছি। এর বাড়ি, ওর বাড়ি থেকেছি। কত যে কষ্ট করেছি, তা বলে শেষ করা যাবে না। ২০০২ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি।

এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ গ্রেপ্তার হলাম। টানা ১৭ মাস ২৬ দিন ছিলাম কারাগারে। এর মাঝে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেলাম। ”

রাজনীতিতে নিজেকে সব সময় সফল দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, “ছাত্রজীবন থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছি তাকে সফল না বলা হলে খোদাও অসন্তুষ্ট হবেন। এরই মাঝে আবার সাংবাদিকতা করেছি, নয়টির মতো বই লিখেছি। দল করে সবাই তো আর মন্ত্রী হয় না, আমি হয়েছি। এটাই তো সফলতা। তিন বছর প্রতিমন্ত্রী ছিলাম। দুই মেয়াদে টানা ছয় বছর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ক’জনের ভাগ্যে এমন সুযোগ জোটে? সেই তুলনায় আমি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান!”

“তবে মন্ত্রী হিসেবে পুরোপুরি সফল বলার সময় আসেনি। এখনো সড়কে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হয়। তবে আমার মন্ত্রণালয়ের সফলতার সকল কৃতিত্ব সরকারপ্রধান হিসেবে নেত্রীর। তার অবদানই বেশি। তাকে ছাড়া কি আমরা একা মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারতাম! কক্ষনো না। এগুলো বাস্তবায়ন করতে যে সাহস লাগে তা একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনারই রয়েছে। তাকে ছাড়া এত বড় বড় প্রকল্প আমরা করতেও পারতাম না।

এই যে জীবনে এত জেল-জুলুম সহ্য করেছি। আল্লাহ কিন্তু আমাকে কষ্টের ফসলও দিয়েছেন। উছিলা আমার নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি না চাইলে কখনোই আমি মন্ত্রী দূরের কথা, সাধারণ সম্পাদক হতে পারতাম না। তাই তার প্রতি আমার ঋণ আর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

আমি আজ দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারি আমরা নেত্রীর জন্যে এগিয়ে থাকি। কারণ অন্যরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আমার নেত্রী কাজ শুরু করে এগিয়ে থাকেন। বলতে পারেন দিনে ছয় ঘণ্টা নেত্রীর জন্যে আমরা এগিয়ে থাকি।

আর সেটার প্রতিফলন কিন্তু আমার জীবনেও ঘটে। তিনিই একমাত্র নেত্রী যাকে প্রয়োজনে ভোরেও টেলিফোনে পাওয়া যায়। যে কারণে সকালে ফজর নামাজ পড়েই শুরু হয় আমার দিন। যে কারণে আমার মন্ত্রণালয়ের সবাই সতর্ক। আমার সাথে তাদের তাল মিলিয়ে চলায় নেত্রীর মতো আমিও এগিয়ে থাকি ছয় ঘণ্টা। যারা দিনের সূচনাতেই এগিয়ে থাকে তাদের টেক্কা দিতে পারা এতো সহজ না। ”

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “২০তম সম্মেলনে আমাকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার পর গত এক বছরে আমি ৬২টি সাংগঠনিক জেলা সফর করেছি। এই তো গত তিন দিনে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও মানিকগঞ্জ সফর করে এলাম। পরিকল্পনা আছে আগামী মার্চের মধ্যেই অবশিষ্ট ১০টি সাংগঠনিক জেলায় সফর করবো। ”

“এখন আমার সামনে একটিই পরিকল্পনা। তা হলো পার্টিকে আরো ঢেলে সাজানো পার্টিটার স্ট্রিমলাইনিং করা। দলটাকে আরো স্মার্ট, আধুনিক একটা অর্গানাইজড পার্টি হিসেবে গড়ে তোলা। যার মূল লক্ষ্যই হবে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। আর চ্যালেঞ্জ যদি বলেন, তবে বলবো জীবনটাই তো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্যে যিনি সৎ সাহস রাখেন তিনিই সফল মানুষ বা সফল রাজনীতিবিদ। ”

নিজের করা ভুল সংশোধনের মতো সৎ সাহস আছে জানিয়ে পরিশ্রমী এই নেতা বলেন, “আমার জীবনের ভুল সম্পর্কে আর কি বলবো! আমি তো মানুষ! আমার ভুল হতে পারে, ভুল করেছিও। কথাবার্তা বলতে গিয়ে কিছু ভুল যে হয়নি তা কিন্তু নয়। কাজ করতে গিয়েও ভুল হয়েছে। কিন্তু ভুল সংশোধনের মতো সৎ সাহসটা আমার আছে। আই অ্যাম নট অলওয়েজ রাইট। ”

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।