ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

হাইকোর্টের প্রতি বিএনপির শ্রদ্ধা নেই বলছেন তোফায়েল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
হাইকোর্টের প্রতি বিএনপির শ্রদ্ধা নেই বলছেন তোফায়েল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর বিএনপি নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেছেন, ঢাকা উত্তরের নির্বাচনকে স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে।

এটাও নাকি রাজনীতি। সুতরাং বোঝা যায় হাইকোর্টের প্রতি, বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিএনপির কোনো শ্রদ্ধা-ভক্তি নেই।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল এ কথা বলেন। ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ৯ বছর’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি।

বিএনপি পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পক্ষ নিয়েছিল মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা মনে করেছিল কী একটা হয়ে যাবে। মনে রাখবেন সত্য-মিথ্যার যুদ্ধে হয়তো মিথ্যার সাময়িক জয় হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়, এই কথাটা জাতির জনক সব সময় বলতেন।

তিনি বলেন, বিএনপি মন্তব্য করেছে সরকারের যোগসাজশে নাকি ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন খুব দক্ষতার সঙ্গে রংপুর ও নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন পরিচালনা করছে।  

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের দিকে ইঙ্গিত করে তোফায়েল বলেন, বিএনপির অফিসে একজন থাকেন, প্রত্যেকদিনই কথা বলেন। কখনো হাসতে দেখি না। ডানেও তাকান না, বামেও তাকান না, বলেই যাচ্ছেন। তারা বোঝেন না, প্রতিদিন কথা বললে সেটা মানুষ ভালভাবে নেয় না। এখন আবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছেন (বিএনপি মহাসচিব) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিশ্চিত পরাজয় জেনে সুযোগ নিয়েছে সরকার- ডিএনসিসি নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে বিএনপির নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট, আর সুযোগ নিলাম আমরা? এসব বক্তব্যের জবাব দেওয়াটা কোনো ভদ্র লোকের উচিত হবে না। এসব বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আমরা আইন মানি।

মন্ত্রী বলেন, অাজকের বাংলাদেশ অান্তর্জাতিক বিশ্বে উন্নয়নের মডেল। ২০২০-২১ অর্থবছর বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের বছর। ৫০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র কোথায় যাবে, তা চিন্তা করেই অাওয়ামী লীগ ভিশন দিয়েছিল। যা বাস্তবায়ন হচ্ছে।  

সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠা সিপিডির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, সিপিডির বক্তব্য আর বিএনপির বক্তব্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমাকে একজন বললেন, সিপিডির সঙ্গে বিএনপির তুলনা করাটা ঠিক হয়নি। পরে আমি তাকে বললাম, দেখো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াটা দেওয়ার কথা বিএনপির। কিন্তু সেই বক্তব্যটা দিলো সিপিডি। বিএনপি আর সিপিডি তো একই। বিএনপি যে নেগেটিভ কথাগুলো বলে, আমাদের বিরুদ্ধে সেই কথাগুলোই সিপিডি বলেছে।

এর আগে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গ্রাম বাংলায় এখন আর পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীনের কুঁড়ে ঘর আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। গ্রামে এখন আর কোনো কাঁচা ঘর নেই। সব পাকা, না হয় আধপাকা ঘর। এখনকার কবিদের যদি কুঁড়ে ঘর নিয়ে কবিতা লিখতে হয়, তাহলে কুঁড়ে ঘর খুঁজে বের করতে হবে। কারণ কুঁড়ে ঘরে এখন আর মানুষ থাকে না। থাকে গরুর বাছুর, না হয় রান্না ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গ্রামে এখন আর কোনো কাদা মাটির কাঁচা রাস্তা নেই। সব পাকা রাস্তা। এটি হচ্ছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, ৯ বছর আগে বিদেশে যাওয়া যুবক এখন যখন দেশে আসছেন, তখন প্লেন ঢাকার আকাশে চক্কর দিতে থাকলে ওই যুবক দেখতে পান কুড়িল ফ্লাইওভার, বড় বড় অট্টালিকা। তখন তিনি ভাবেন, প্লেন মনে হয় ভুলে করে সিঙ্গাপুরে বা ব্যাংককে চলে এসেছে। কারণ ৯ বছর আগে এ রকম ফ্লাইওভার ঢাকায় ছিল না। ছিল ইংরেজি সিনেমায় আর ব্যাংককে। সেই ছেলেটি যখন গ্রামে যায়, তখন সে দেখে, তার গ্রামের যে কাদা মাটির রাস্তা পেরিয়ে অনেক কষ্ট করে ঢাকায় এসে প্লেনে উঠেছিল, সে কাদা মাটির রাস্তা আর নেই। এটি হচ্ছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ৯ বছর আগে আমরা দু’টি স্বপ্নের কথা বলেছিলাম। একটি স্বপ্ন হচ্ছে দিনবদল, আরেকটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিন্তু অনেকে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে হাস্যরসিকতা করতো। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৪ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যখন কেউ ঢাকায় ফোন করে টাকার দরকার বলে, তখন তৎক্ষণাৎ টাকা পৌঁছে যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যখন বিদেশে ছেলের কাছে বাবা ফোন করে বলেন টাকা দরকার, তখন মুহূর্তে টাকা পাঠালে দেশে পৌঁছে যায়। এর নামই ডিজিটাল বাংলাদেশ।

হাছান মাহমুদ বলেন, আজকের বাংলাদেশের চিত্র আর ৯ বছর আগের চিত্র যদি তুলনা করা হয়, তাহলে বোঝা যাবে বাংলাদেশ কতোটা বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।

সেমিনারে আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আয়োজনের সভাপতি এইচটি ইমাম প্রশ্নোত্তর পর্বের জবাব দেন।

প্রশ্নফাঁস নিয়ে সরকারের অবস্থান কী? এ প্রশ্নের জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, প্রশ্নফাঁস বর্তমানে একটা বড় রকমের সমস্যা। কোনো দেশ এগিয়ে যাওয়ার সময় এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। এটা সরকারকে যন্ত্রণা দিয়ে থাকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য কোচিং সেন্টার একটা সমস্যা। পাবলিক সার্ভিসের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয় না, অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে প্রশ্নফাঁস হয়? সবাইকে পাবলিক সার্ভিসেস কমিশনের মতো পরীক্ষা নেওয়া উচিৎ।

সিপিডি সরকারপ্রধানের বক্তব্যের সমালোচনা করছে কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, সিপিডি এখন পলিটিক্যাল ইকোনমি করছে, তারা অন্য একটি রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি নিয়ে ব্যস্ত। আসলে ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’। ওদের মূল্য দিলে চলবে না, আমাদের নিজেদের মতো করে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. অাবুল বারকাত বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে নতুন দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে। পদ্মাসেতু অামরা নিজেদের অর্থ দিয়ে তৈরি করছি। এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে কতোটা এগিয়ে গেছে।

এর আগে সেমিনারের শুরুতে সরকারের উন্নয়নের সাফল্যগাথাঁ তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামছুল অালম।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।