ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

আগামী মেয়াদেও ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
আগামী মেয়াদেও ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ

ঢাকা: আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে তা নিশ্চিত করতে কোনো দাবির কাছে নতি স্বীকার বা কারো কাছে কোনো ছাড় দেবে না দলটি। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যে সহায়ক সরকারের কথা বলছে, সে ব্যাপারে একদমই কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির এই দাবি মেনে নেওয়া বা কোনো ছাড় দেওয়া মানে বিরোধীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করা।

এমনটাই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। আর নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে বিরোধীদের কোনো মেনে নেওয়া হলে তা হবে এক ধরনের পরাজয়। আর নির্বাচনে তা আওয়ামী লীগের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করেন তারা।  

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, সহায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা সংবিধানবহির্ভুত নির্বাচনকালীন কোনো সরকারের ফর্মুলা বা দাবি কোনোভাবেই মানবে না দলটি। সংবিধান অনুযায়ী গত ২০১৪ সালের ৫ জানুযারির নির্বাচনের মতোই নির্বাচিত সরকার অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু করে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেসব বাস্তবায়নে কম করেও আরো ৫ বছর সময় প্রয়োজন। আর এই উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আওয়ামী লীগের জন্য তা একটা সুদূরপ্রসারি রাজননৈতিক সুফল বয়ে আনবে। এই রাজনৈতিক সুফল অর্জন করতে হলে আগামী টার্মেও আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় আসতে হবে।

আগামী ২০২১ সাল স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তি জাঁকালোভাবে উদযাপন করা হবে এমন ঘোষণা অনেক আগে থেকেই ফলাও করে দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেই বলা হয়েছিল, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। এরই মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায়ে পৌঁছার টার্গেট পুরণ হবে। তাই ক্ষমতায় থেকেই আওয়ামী লীগ এই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার জন্য মরিয়া।

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুই ইউনিটের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালে প্রথমটি এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয়টির নির্মাণকাজ শেষ করে চালু করার কথা রয়েছে।  

রাজধানীর উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। এই মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ হতে আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।  

এছাড়া বহুল প্রতিক্ষিত এবং দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজও চলছে নিজস্ব অর্থায়নে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই সেতু নির্মাণ আওয়ামী লীগ সরকারের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ ছিল। দুনীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নিলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। সে অনুযায়ীই সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলা শুরু হবে বলে ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। তবে অনিবার্য কারণে নির্মাণকাজ শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছু সময় বেশি লেগে যেতে পারে।  

এছাড়া এলএনজি টার্মিনাল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি বিদুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই এই প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ শেষ করতে চায়। আর এটা করতে হলে আগামী মেয়াদেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতেই হবে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির উৎসবও আওয়ামী লীগ সরকারই করবে।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ কয়েকজনের সঙ্গে।

তাদের ভাষ্য: আওয়ামী লীগের বিজয় অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে, এমন কোনো সমঝোতা আমরা করবো না। তাই কোনো ধরনের ছাড় বা সমঝোতার পথে একদমই হাঁটবে না আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। বর্তমান সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেবে। এটাই হবে সহায়ক সরকার। এর বাইরে আর কোনো সরকারের ফর্মুলা মানা হবে না। সংবিধানের একচুল বাইরে আমরা যাবো না।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭ 
এসকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।