ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

ভোটারদের মন জয়ে কুমিল্লার মন্ত্রী-এমপিরা

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
ভোটারদের মন জয়ে কুমিল্লার মন্ত্রী-এমপিরা কুমিল্লার ভোটারদের মন জয়ে কৌশলী মন্ত্রী-এমপিরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে এলাকামুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের কুমিল্লার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। ভোট ব্যাংক বৃদ্ধি ও জনগণের সাথে দূরত্ব কমাতে এলাকায় সময় দিচ্ছেন তারা। ভোটারদের মন জয় করতে বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছেন হেভিওয়েট নেতারা। বিগত দিনে এলাকায় যারা সময় দিতে পারেননি তারা উঠে পড়ে লেগেছেন হারানো অবস্থান ফিরে পেতে।

কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-নাঙ্গলকোট)
এ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ক্রিকেট অনুরাগী এই নেতা এলাকায় খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেননি বিগত সময়ে।

সম্প্রতি প্রতি সপ্তাহে নিজ আসনে সময় দিচ্ছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকায়। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেখা করছেন ভোটারদের সঙ্গে তিনি।  

আ হ ম মুস্তফা কামালকখনো পায়ে হেঁটে, কখনো মোটরসাইকেলে চড়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুস্তফা কামাল। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ধান মাড়াই করছেন, কখনো শিশুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আবার কখনও বিলে জাল ফেলে মাছ ধরছেন। ভোটারদের ঘরের চৌকাঠে বসে কথা বলছেন। সব মিলিয়ে জনগণের সাথে দূরত্ব কমিয়ে জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন তিনি। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে সমাধানের চেষ্টা করছেন। এ আসনে তার সাথে মনোনয়ন লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকলেও এখানে বিএনপির রয়েছে শক্ত ঘাঁটি।

নিজের তৎপরতা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। রাজনীতি করি মানুষের সেবা করতে। তাই তাদের কাছে গিয়ে খোঁজ-খবর না নিলে হবে কীভাবে? জনগণের দুয়ারে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শুনতে হবে, সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তাদের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। তাদের কষ্টের টাকায় দেশ চলে, সরকার চলে। তাই জনগণের খোঁজ-খবর রেখে তাদের কথা শোনা আর সেবা করাই রাজনীতির প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করি।

রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হককুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) 
রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব এই আসনের সংসদ সদস্য। গত ৯ বছরে প্রতি সপ্তাহেই এলাকায় এসেছেন তিনি। অন্তত একদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩/৪টি সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নমূলক কাজগুলো তদারকি করেছেন। তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে তার গভীর সর্ম্পক। এখনও এলাকায় নিয়মিত আসছেন। এ আসনে তার সাথে মনোনয়ন লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকলেও আসনটিতে রয়েছে জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি। যদিও গত কয়েক বছরে গ্রেফতার ও মামলার কারণে জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে।

রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি জানান, কর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। আমি তৃণমূলের রাজনীতি করি। জনগণই আমার শক্তি। আমি তাদের নিয়েই সামনে এগিয়ে যাবো। তাই আমি সবসময় মানুষের সাথেই আছি।

আলী আশরাফকুমিল্লা-৭ (চান্দিনা)
জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এ আসনের বর্তমান এমপি। তার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত। এ কারণে সম্প্রতি মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এমপি আশরাফ। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। রিকশা ও মোটরসাইকেলে চড়ে ভোটারদের গণসংযোগ করছেন।

সংসদ সদস্য আলী আশরাফ বলেন, চান্দিনায় আওয়ামী লীগকে নিয়ে এখন গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিককাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেই আছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চান্দিনাবাসীর সেবা করে যাব। আমি মাঠে আছি। চান্দিনাবাসী আমাকে চায়।

রাজী ফখরুল মুন্সিকুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার)
বর্তমান এমপি রাজী ফখরুল মুন্সি আগামী নির্বাচনেও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এক সময় অভিযোগ ছিল তরুণ বয়সের এমপি রাজী ফখরুল তরুণদের নিয়ে রাজনীতি করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতাদের সাথে তেমন সর্ম্পক রাখেন না। কিন্তু এখন প্রায় দলীয় অনুষ্ঠানে এমপি রাজী ফখরুলের সাথে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের দেখা যাচ্ছে। তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি সব বয়সের রাজনীতিবিদদের সাথে নিয়ে দেবিদ্বারের উন্নয়ন করেছেন। এ আসনে মনোনয়ন লড়াইয়ে রাজী ফখরুলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি এবিএম গোলাম মোস্তফা, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অধ্যক্ষ হুমায়ন মাহমুদের সঙ্গে।

এমপি রাজী ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলা হচ্ছে একটি রোল মডেল, এটি আমার একটি স্বপ্ন, এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতায় দেবিদ্বারকে একটি সোনার দেবিদ্বার হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তাজুল ইসলাম
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি । মনোনয়ন লড়াইয়ে অনেকের নাম শোনা গেলেও মাঠে প্রকাশ্যে কেউ নেই। তারপরেও লাকসাম-মনোহরগঞ্জ সংসদীয় আসনটি বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হওয়ায় মাঠে বেশ তৎপর হয়েছেন এমপি তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এ আসন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। এখানে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কাজ অনেক হয়েছে। জয় আমাদেরই হবে।

আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা যাই বলুন না কেন কুমিল্লার ভোটাররা বলছেন, ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দু’একটি আসন ছাড়া প্রায় আসনেই কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের। বেশ কয়েজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য জনগণের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। যদিও সম্প্রতি তারা এলাকামুখী হয়েছেন। সময়ই বলে দেবে ভোট কোথায় যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।