ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

হাসিনাকে আজীবন সভাপতি, জয়কে নেতৃত্বে আনাই ছিল মূল দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
হাসিনাকে আজীবন সভাপতি, জয়কে নেতৃত্বে আনাই ছিল মূল দাবি

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে হাজার হাজার কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও নেতাকর্মীর মূল দাবি ছিলো, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আজীবন দলের প্রধান থাকা। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্মানজনক পদে আনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই দলের নতুন নেতা (সভাপতি) নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন, তখনই কাউন্সিলররা নেতাকর্মী ‘না’, ‘না’ বলে চিৎকারে  ফেটে পড়েছেন।

রোববার (২৩ অক্টোবর) কাউন্সিলের সমাপনী ভাষণেও যখন শেখ হাসিনা সভাপতির পদ থেকে বিদায় নেওয়ার কথা বলেন, তখনও অধিবেশন কক্ষে থাকা কাউন্সিলরদের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের বাইরে অপেক্ষমান হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘না’, ‘না’ বলে সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন।     

দু’দিনের সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে জেলার নেতাদের বক্তব্যের প্রধান দাবি হিসেবে উচ্চারিত হয় এ দু’টি বিষয়। জেলা নেতাদের অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দাবিগুলো তুলে ধরতে গিয়ে।

সম্মেলনের দু’দিনই বার বার আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলকে নতুন নেতা নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু উপস্থিত কাউন্সিলররা সমস্বরে তার এ আহ্বানকে নাকচ করে দিয়েছেন।

তাদের একটাই দাবি, শেখ হাসিনা যতোদিন বেঁচে থাকবেন, ততোদিন আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন।

সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মধ্যে শেষ বক্তা ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ। তিনিও শেখ হাসিনাকে আজীবন দলের সভাপতি থাকার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীসহ দেশের ১৬ কোটি মানুষ আপনাকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেখতে চায়’। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আপনি কেন ছেড়ে যাবেন? কাকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন? কেউ কি আছেন দায়িত্ব নেওয়ার? কাউন্সিলররা সমস্বরে ‘না’, ‘না’ বলে চিৎকার করে উঠেন।

এ সময় বেনজির আহমেদ কাউন্সিলরদের আবেগের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাহলে কাকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন?’
 
ফেনী জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ‘যতোদিন জীবিত থাকবেন ততোদিন আওয়ামী লীগ পরিবারকে নেতৃত্ব দেবেন। অন্য কোনো নেতার নেতৃত্ব মানবো না’।

কাউন্সিল অধিবেশনের সভাপতি এবং বিদায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলাম, তখন দল দ্বিধাবিভক্ত ছিলো। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়েছি। এখন আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল’।

আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মা, বাবা, ভাই সবাইকে হারিয়ে আমি যখন দেশে আসি, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং এদেশের মানুষের মধ্যে বাবা, মা, ভাইকে খুঁজে পাই। আপনারা আমাকে অনেক সম্মান, ভালোবাসা দিয়েছেন’।

‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের মানুষ কিছু পায়, এটা প্রমাণ করতে পেরেছি। যে সম্মান আপনারা দিয়েছেন, সেই সম্মান থাকতে থাকতে বিদায় নিতে চাই’।

এ সময় কাউন্সিলররা আবারও সমস্বরে ‘না’, ‘না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাবো না, আওয়ামী লীগেই থাকবো। আমি তো আওয়ামী লীগ পরিবারেরই সন্তান’।

তারপরও চিৎকার চলতে থাকে অধিবেশন কক্ষের ভেতরে-বাইরে।

দু’দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে ৪১ জন জেলা নেতা বক্তব্য দেন। তাদের প্রত্যেকেই শেখ হাসিনাকে আজীবন দলের প্রধান হিসেবে দেখতে চাওয়ার পাশাপাশি জোরালোভাবে আরও একটি দাবি তোলেন সজীব ওয়াজেদকে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিয়ে আসার। তারা নতুন কমিটিতে সম্মানজনক পদে জয়কে দেখতে চান। তাদের কেউ কেউ সজীব ওয়াজেদ জয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিভার প্রভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যে অন্তর্নিহিত শক্তি, তিনি তা জয়কে দিয়েছেন। জয় যেদিন দেশে আসেন, সেদিন আমি নেত্রীকে বলেছিলাম, জয় উইল রুল দ্য কান্ট্রি। আমার দাবি, জয়কে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে আসেন। জয়ের কারণে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছি’।

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, ‘জয়কে নেতৃত্বে নিয়ে এসে আওয়ামী লীগকে মেধা সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে’।

লালমনিহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, ‘নেত্রী, আপনি যেভাবে দলকে গড়ে তুলছেন, জয়কে দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে এসে আপনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেবেন’।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয়তো আমার সঙ্গে কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে। সে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা’।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।