ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

বাগেরহাটে ধান সংগ্রহে ধীরগতি, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

এস এস সোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
বাগেরহাটে ধান সংগ্রহে ধীরগতি, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

বাগেরহাট: বাগেরহাটে চলছে ধীরগতিতে চলছে সরকারি বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম। সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর ২৪ দিনেও বাগেরহাটে পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি।

এখনও দুই-একটি উপজেলায় ধান সংগ্রহ কমিটির সভাও হয়নি।

অন্যদিকে জেলার বেশিরভাগ কৃষক ধান মারাই শেষে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। যার ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে উপকূলীয় এই জেলায়। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে এখনও সময় রয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করবেন তারা।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে বাগেরহাট জেলায় আট হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৯ টন, মোরেলগঞ্জে ১ হাজার ৪৩, রামপালে ৬২৯, শরণখোলায় ৬৫, ফকিরহাটে ১ হাজার ২৩৬, মোল্লাহাটে ১ হাজার ২০৬, কচুয়ায় ১ হাজার ১১০ এবং চিতলমারী উপজেলায় ১ হাজার ৮০৭ টন রয়েছে। ২৮ এপ্রিল খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করার ১৯ দিন পরে ১৭ মে বাগেরহাটে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। রোববার (২২ মে) পর্যন্ত জেলায় মাত্র ১৩৪ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালেও জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০২০ সালে ৬ হাজার ৪১৮ টন লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয়েছিল ৫ হাজার ৯৭৬ টন, ২১ সালে ৮ হাজার ৫৩০ টন লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয়েছিল ৬ হাজার ৭৩৭ টন। এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ আগস্টের মধ্যে এই মৌসুমের  সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

এদিকে সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিয়ম কানুন ও হয়রানির কারণে সরকারিভাবে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কচুয়া উপজেলার কৃষক আমজেদ আলী মোল্লা বলেন, এ বছর প্রায় ১১০ মন ধান হয়েছে। বছরের খোরাক রেখে ঈদের আগেই ৭৫০ টাকা দরে ৭০ মন ধান বিক্রি করেছি। শুনেছি সরকারি গুদামে ১ হাজার ৮০ টাকা মন বিক্রি করা যায়। কিন্তু কীভাবে বিক্রি করব, আমিতো সিস্টেম জানি না।

ধান বিক্রির উদ্দেশ্যে খাদ্য গুদামে কখনো গেছেন? এমন প্রশ্নে আমজাদ আলী মোল্লা বলেন, অশিক্ষিত মানুষ, কার কাছে যাব কী বলব তাই যাইনি।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, এলাকার ধান কেটে বিক্রি করার অন্তত ২০ দিন পরে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বেশি দামের জন্য এতদিন অপেক্ষা করলে, পাওনাদারদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তাই কম পাই-বেশি পাই, লোকসান স্বীকার করে আগেই বিক্রি করে দিয়েছি।

বাগেরহাট সদর উপজেলার পাতিলা খালি গ্রামের কৃষক মাহাবুবুল আলম কাজল বলেন, ফড়িয়া আর মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে প্রতি বছর প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে প্রতি মন বোরো ধান বিক্রি করলেও, খোলা বাজারে প্রতি মন বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৭২০-৭৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হতে পারত। এজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকার কর্তৃক সরাসরি ধান কেনার ব্যবস্থা নেওয়া ও ভরা মৌসুমে চাল আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান এই কৃষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত হওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। বাগেরহাট সদর এবং ফকিরহাট উপজেলায় অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তারপর লটারি হয়, সেখানে টিকলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের সময় মত ধান বিক্রি করা যায়। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় উপজেলা অফিস থেকে খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে তালিকা দেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কৃষকের তালিকা যায় ব্যক্তি সম্পর্ক ও রাজনৈতিক বিবেচনায়। যারা কৃষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, তাদেরও ধান বিক্রি করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচার প্রচারণারও অভাব রয়েছে। এসব কারণে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এম.এম তাহসিনুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের কারণে বাজার মূল্য যে দিকে যাচ্ছে, তাতে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তারপরও আমাদের হাতে সময় রয়েছে, আমরা শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করব। আশাকরি এবার আমাদের জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। এছাড়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬ হাজার ৬৮৫ টন চাল সংগ্রহের জন্য ২৪ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এই মৌসুমে বাগেরহাটে ৫৯ হাজার ২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি। এতে প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। শতভাগ কৃষক তাদের ধান মাড়াই সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।