ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

‘লকডাউনে’ বিপাকে গদখালীর ফুল চাষিরা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
‘লকডাউনে’ বিপাকে গদখালীর ফুল চাষিরা

যশোর: চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে গোলাপ আর বিঘা দেড় জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলেন যশোরের গদখালী গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলাম। এসব ফুল চাষে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে তার।

ক্ষেতে সবে মাত্র ফুল উঠা শুরু করেছিল। সপ্তাহে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রিও করছিলেন তিনি। এভাবেই আরও তিন মাস ফুল বিক্রি করা গেলে চলতি বছরের সব খরচ উঠে ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন তিনি।  

করোনা ভাইরাস মহামারির প্রথম ধাক্কার ক্ষতি কাটিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ফুল চাষি মঞ্জুরুল। কিন্তু বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে ফুল বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ফুল চাষি মঞ্জুরুল।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, গদখালীর ছয় হাজার কৃষক তাদের ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে ফুল বিক্রি করতে না পারায় এ অঞ্চলের চাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, চলতি বছর ঝিকরগাছা উপজেলায় ২৭২ হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাস, ১৬৫ হেক্টর জমিতে রজনীগন্ধা, ১০৫ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ৫৫ হেক্টর জমিতে গাঁদা, ২২ হেক্টর জমিতে জারবেরা ও অন্যান্য ফুল চাষ করা হয়েছে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালের মার্চে দেশের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পরপর দেশে লকডাউন শুরু হয়। এতে ফুল বিক্রিতে ধস নামায় জেলার ফুল চাষিদের ব্যাপক লোকসান হয়েছিল। ফুল বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরু ও ছাগল দিয়ে খাওয়াতে হয়েছিল।
করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসার পর আবারো চাষিরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার স্বপ্ন নিয়ে ফুল বিক্রি শুরুও করেছিল। কিন্তু এবার করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সরকারের বিধি নিষেধের কারণে ফুল চাষিদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতেও ফুল রাখতে পারছেন না। ফুল ক্ষেত থেকে তুলতে দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের মজুরি।

ঝিকরগাছার হাঁড়িয়া গ্রামের শাহাজান আলী নামে এক ফুলচাষি বাংলানিউজকে বলেন, এবছর ১৫ বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও জারবেরা চাষ করে ব্যাপক লোকসানে পড়েছি। ফুল না তুললে নতুন করে আর কুঁড়ি আসে না। তাই গোলাপ ফুল কেটে ছাগল ও গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই চাষি, পাইকার, মজুরের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠতো যশোর ও বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত গদখালী বাজার। দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে সাজানো হতো ফুল। পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে ফুল ভর্তি করে ছুটে চলতো ট্রাক ও পিকআপভ্যান। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে কারণে এখন সেটা হচ্ছে না। ফলে ফুল চাষিরা পড়েছেন বিপাকে।  

হাঁড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফুল চাষি ফজলুর হোসেন বলেন, এখন এগুলো শুধুই স্বপ্ন। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনায় ফুল চাষিদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। আজ তারা দিশেহারা। ফুলের বাজার ১৫ দিন ধরে ক্রেতা শূন্য। ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে ফুল। চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে ছাগল ও গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন।  
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ হলো ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ফলে জমিতেই ফুল নষ্ট হচ্ছে।  

এদিকে ফুল তুলে ফেলে না দিলে গাছ মরে যাচ্ছে। একবার ক্ষেতের গাছ থেকে ফুল তুলে ফেলে দিতে খরচ হয় প্রায় চার হাজার টাকা। সপ্তাহে একবার ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে।

কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে বলেও জানান গদখালীর ফুল চাষিরা।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ফুলচাষিরা বিপদে পড়েছেন। তারা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতে ফুল রাখতেও পারছেন না। বাধ্য হয়ে গরু ও ছাগল দিয়ে ফুল খাওয়াচ্ছেন। অনেকে ফুল তুলে দিচ্ছে। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।

এদিকে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম আরও বলেন, গদখালীর ছয় হাজার কৃষক তাদের ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। সবজির মতো ফুলের পাইকারি বাজারগুলো খোলা রাখার অনুমতি দিলে ফুলচাষিরা কষ্ট করে হলেও বাঁচতে পারতো বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২১
ইউজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।