ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ জুলাই ২০২৫, ২৬ মহররম ১৪৪৭

অন্যান্য

ব্যাংকঋণ যাচ্ছে সরকারি বন্ডে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:২৫, জুলাই ১৯, ২০২৫
ব্যাংকঋণ যাচ্ছে সরকারি বন্ডে গ্রাফিক্স

বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা নেই। নতুন বিনিয়োগেও যাচ্ছে না বড় কোনো শিল্প গ্রুপ।

বন্ধ রয়েছে বড় প্রকল্পের কাজ। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় কমিয়ে কোনোভাবে ব্যবসা ধরে রাখছে ছোট-বড় শিল্পকারখানা। এর প্রভাব পড়ছে ব্যাংক ঋণে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন বেসরকারি খাতে ঋণ না দিতে পেরে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে ব্যবসা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসাবাণিজ্যে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নানা ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিনিয়োগ নিষ্ক্রিয়তা দেখা দিয়েছে দেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগকেই নিরাপদ মনে করছে তফসিলি ব্যাংকগুলো।  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরে ট্রেজারি বন্ড ও বিলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়েছে। আর এই বন্ডে বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকে তারল্য থাকলেও বেসরকারি খাত থেকে বড় ধরনের কোনো প্রকল্প ঋণের চাহিদা দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে অনেক ব্যাংক ছোট ছোট ভোগ্যঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। তবে ব্যাংকগুলোকে যেহেতু আমানতকারীদের ঋণের সুদ দিতে হয়, সে কারণে তারল্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যাচ্ছে সরকারি ট্রেজারি বন্ড ও বিলে। বেসরকারি খাতের মতো এই ঋণে ঝুঁকি কম, খেলাপির আশঙ্কা নেই, সুদের হারও ১১ শতাংশের কাছাকাছি।

সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নিরাপদ মনে করা হলেও এটি অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের ফলে বেসরকারি খাত ঋণ পাচ্ছে না, এমনটি নয়; প্রকৃত তথ্য হচ্ছে- বেসরকারি খাত ঋণ নিচ্ছে না। কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসাবাণিজ্যে মন্দা, নানা কারণে বেসরকারি খাত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য বিপদের।

বিনিয়োগ নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির তথ্যেও। একইভাবে মিলেছে বেসরকারি খাতের ঋণ কমে যাওয়ার তথ্যও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা আগের মাসের তুলনায় কম। এর আগের মাস মার্চে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে মূলধনি যন্ত্র আমদানির এলসি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৪১ কোটি ৯১ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বেসরকারি খাতের ঋণ এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার তথ্য দেশে বিনিয়োগ নিষ্ক্রিয়তাই প্রমাণ করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা নতুন কোনো বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। ব্যবসা সম্প্রসারণেও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না; বরং রড-সিমেন্টসহ অনেক খাতের শিল্পকারখানা ব্যয় হ্রাস করে কোনোভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতেও বড় ঋণের চাহিদা নেই। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সামগ্রিক আমদানি গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির এলসি খোলা ও এলসি নিশ্চিতকরণ উভয় খাতে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। এ থেকে বোঝা যায়, বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।