ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

বদরগঞ্জের শোলার খোঁজে দূর-দূরান্তের মালিরা

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
বদরগঞ্জের শোলার খোঁজে দূর-দূরান্তের মালিরা শোলা সংগ্রহ করছেন একজন মালি। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: বদ্ধ জলাশয়ে জন্মানো একটি জলজ উদ্ভিদ শোলা । লোমশ, লম্বাটে, ফাঁপা ও পাতলা এই উদ্ভিদটি আগে বদরগঞ্জ উপজেলার কমবেশি সব বদ্ধ জলাশয়েই দেখা যেত। এখন উপজেলার হাতে গোনা কয়েকটি স্থানে দেখতে পাওয়া যায় এগুলো। 

হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে শোলার কদর অত্যন্ত বেশি। দেব-দেবির পুজা-অর্চনা বিয়ের মুকুটসহ বিয়ে বাড়ি সাজাতে বেশি প্রয়োজন হয় এই উদ্ভিদ।

এছাড়াও বাচ্চাদের খেলনা তৈরিতে উদ্ভিদটির জুড়ি মেলা ভার।

সোমবার (১৬ জুলাই) সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে উপজেলা ঘুরে দেখার সময় উপজেলার লোহানীপাড়া ইউপির মন্ডলপাড়া এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ে কিছু লোকজন বদ্ধ জলাশয় থেকে শোলা নামক জলজ উদ্ভিদটি তুলে রাস্তার ধারে স্তুপ করছেন। কাছে গিয়ে তাদের স্থির চিত্র ধারণ করার সময় কথা হয় নীলফামারি জেলার মাগুড়া হতে আসা মালি দুলাল চন্দ্রের (৩৫) সঙ্গে।  

দুলাল বলেন, আমরা প্রতি বছর নীলফামারির মাগুরা এলাকা থেকে এই এলাকায় শোলা সংগ্রহ করতে আসি।

অপর মালি সুবল দাস (৪০) বলেন, নীলফামারির মাগুরা থেকে বদরগঞ্জের দুরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। আমরা সবাই বাইসাইকেলে করে এসেছি। জলাশয় এলাকায় আসতে গেলে বাইসাইকেলই উত্তম বাহন।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক জলাশয় আছে যেখানে ভালো যাতায়াত ব্যবস্থাই নেই। এখান থেকে এই শোলা সংগ্রহ করে আমরা নীলফামারিসহ আশে পাশের জেলা-উপজেলায় বিক্রি করি।
বাইসাইকেলে করে শোলা বহন করছেন মালিরা।  ছবি: বাংলানিউজ
মালি সুবাস চন্দ্র (৩০) জানান, দেশের বড় বড় জলাশয় পুকুর ডোবা ভরাট হয়ে যাওয়ায় আর আগের মত শোলা পাওয়া যায় না। তাই আমরা আগেই বিভিন্ন জলাশয় এলাকার খোঁজখবর নিয়েই যেখানে শোলা পাওয়া যায় সেখানেই চলে আসি।

তিনি আরও জানান, শোলা দিয়ে পূজার সামগ্রী তৈরি করে থাকি। যেমন কদম ফুল, মুকুট ও নানা প্রকার খেলনা। প্রথমে আমরা শোলা সংগ্রহ করি, তারপর সেগুলো শুকিয়ে বাহারি রঙে রাঙিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে পুজোর বাজারে বিক্রি করি। প্রতি বছর এই শোলার পণ্য বিক্রি করে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করি। এছাড়াও পেশাটি আমাদের পুর্বপুরুষের। তাই কষ্ট করে হলেও ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

বদরগঞ্জ বারোয়ারি কালিমন্দিরের পুরোহিত দিনেশ চক্রবর্তী জানান, শোলা দিয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। যেমন: বিয়ের মুটুক, সাজসজ্জা, দেব-দেবির গলার হার, মনষা ও ছায়া মণ্ডব তৈরি করা হয়।  

বদরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কনক রায় জানান, এক সময় বদরগঞ্জ উপজেলায় প্রচুর শোলা পাওয়া যেত। এ কারণে বদরগঞ্জের একটি এলাকার নামকরন হয়েছে শোলাগাড়ি। বর্তমানে শোলা এখন পশুখাদ্য, রান্নার কাজে জ্বালানি ও জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।  

তিনি আরও জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলজ উদ্ভিটির বিকল্প চলে আসায় এর চাহিদা অনেকটাই কমেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
এসআরআর/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ