ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

ব্রিটেনের রোজনামচাঃ পর্ব-২

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১২
ব্রিটেনের রোজনামচাঃ পর্ব-২

ব্রিটেনে বসবাস করতে আসা স্বামী-স্ত্রীকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষা জানতে হবে। ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাজ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক--এমন আইনি চ্যালেঞ্জ খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্টের বার্মিংহাম বেঞ্চ।

ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান জোট সরকার গত নভেম্বরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রণয়ন করে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীদের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা জানা বাধ্যতামূলক করে দেয়। ইমিগ্রেশনের এই নিয়ম মানবাধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক এমন দাবি করে তিন দম্পতি হাইকোর্টে আইনি চ্যালেঞ্জ করেন জুডিশিয়াল রিভিউয়ের মাধ্যমে। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক বিটসন রিভিউ খারিজ করে বলেন, হোম অফিসের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক এবং ব্রিটেনের পাবলিক সার্ভিস রক্ষা এবং এর সমাজে ইন্টিগ্রেশন সহজ ও স্বাভাবিক করার জন্য ইংরেজি ভাষাজ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিটসন তার রায়ে উল্লেখ করেন।

হাইকোর্টের এই রায়কে হোম সেক্রেটারি টেরেসা মে ইমিগ্রেশন আইনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও অগ্রগতি বলে অভিহিত করেন, যদিও জেসিডব্লিউআই আদালতের এই রায়ে বেশ হতাশা ব্যক্ত করে বলেছে এতে মানবাধিকারের ওপর বেশ আঘাত আসবে।

হেলাল আব্বাস সাসপেন্ডঃ আপিলbratain
আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক লিডার কাউন্সিলর হেলাল উদ্দীন আব্বাস স্ট্যান্ডার্ড সাব কমিটি এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড ঘোষণা করে। হেলাল আব্বাস তার সাসপেনসনের বিরুদ্দ্বে আপিল করলে বিচারক এই সাসপেনসন স্থগিত ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা সম্পর্কে গোপনীয় তথ্যাবলী তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রকাশ করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। স্ট্যান্ডার্ড কমিটি সেই অভিযোগ বিবেচনার জন্য প্রযোজ্য আচরণবিধির ৩.৩ (বি) এবং ৩.৪ লঙ্ঘন করেছেন বলে সিদ্দ্বান্ত নেয়। হেলাল আব্বাসের আপিলের প্রেক্ষিতে শুনানির আগ পর্যন্ত তার সাসপেনসন স্থগিত থাকবে বলে কাউন্সিলের কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে।

এলএমসিতে সেমিনারঃ ব্রিটেনের কারাগারে ১০ হাজার মুসলিম কয়েদি

ব্রিটেনের কারাগারে নানান অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার, আর এই কয়েদিদের মধ্যে শুধু মুসলমান বন্দির সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানা গেছে। এর অধিকাংশই মাদক, ডাকাতি সহিংসতার মতো অপরাধের সাজা ভোগকারী।

লন্ডনের মুসলিম সেণ্টারে যুব সমাজের অপরাধ প্রবণতার উপর আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ৭ থেকে ৭০ বছর বয়স্ক মুসলিম পুরুষ-মহিলারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তবে ১৫ থেকে ৩০ বছরের যুবকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা সবচাইতে বেশি। এর মূল কারণ ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, পারিবারিক জটিলতা, বাসস্থান সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এলএমসি এবং স্ট্রিট প্রজেক্টের যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনারে কারাভোগকারী মুসলিম কয়েদিরা আর যাতে অপরাধে না জড়ায় এবং যুব সমাজের মধ্যে এর সচেতনতা সৃষ্ঠির লক্ষ্যে যৌথ কর্মকৌশল নেওয়ার কথা বলা হয়।

ম্যানচেস্টার হাইকমিশনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ
তিন সন্তানের জননী লাভলী বেগম পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে গাফিলতি আর অসহযোগিতার অভিযোগ করে তার ও পরিবারের ভোগান্তির কাহিনি তুলে ধরেন। তিনি জানান, তার স্বামী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের আইডি চুরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে দূতাবাসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে এক প্রতারক হোম অফিস থেকে ভিসা লাগিয়ে চরম দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে গোটা পরিবারকে।

লাভলী বেগম আরও জানান, ২০০৬ সালে তিনি স্বামী-সন্তানসহ কিছুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করেন। ঐ সময় স্বামী দেলোয়ার হোসেনের পাসপোর্ট দুর্ঘটনাবশত নষ্ট হয়ে গেলে নয়া পাসপোর্ট বানিয়ে রিটার্নিং ভিসার জন্য যখন আবেদন করেন, তখনই জানতে পারেন এই জালিয়াতির কথা। বিলেতে ফিরে এসে তিনি ইউকে বর্ডার এজেন্সির সাথে এবং তাদের কথা মতো ম্যানচেস্টার বাংলাদেশ দূতাবাসে অনেক দৌড়াদৌড়ির পরেও কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি, উপরন্তু অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে তার স্বামীরও দেশ থেকে ব্রিটেনে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

bratainপ্রজেক্ট মায়া এবং ইকবাল আহমদ ওবিইর প্রশংসায় ক্যামেরন
বাংলাদেশে পরিচালিত কনজারভেটিভ পার্টির সোশাল অ্যাকশন প্রজেক্ট ‘মায়া’র ভূয়সী প্রশংসা করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ‘মায়া’ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি উন্নয়ন ইত্যাদি খাতে কাজ করছে, গত বছর টোরি পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদা ওয়ার্সী বাংলাদেশ সফরে গিয়ে এই মায়া প্রজেক্টের উদ্বোধন করেন। গত ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ম্যানচেস্টারে প্রজেক্ট মায়ার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। সাথে সাথে ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ ওবিইর প্রশংসা করেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপন

গত ১০ জানুয়ারি, ২০১২ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সান্ডারল্যান্ড শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশি কমিউনিটি সেন্টারে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সালেহ আহমদ মিয়ার সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওমর মেহেদী রুনু, সৈয়দ মঞ্জুরুল হক তালহা, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম, সৈয়দ বদরুল ইসলাম, ওলি আহমদ, জাবিদ জিম্মাস মিয়া, সৈয়দ হাবিবুর রহমান, সৈয়দ দুলাল,সৈয়দ তাজুলসহ প্রমুখ।

বিজয় দিবস উদযাপন
বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর সান্ডারল্যান্ড বাংলাদেশি কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ম্যানেজম্যান্ট কমিটির প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আমীর আলী। সেন্টারের স্পোর্টস সেক্রেটারি সৈয়দ মাহফুজ আহমদের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি নেতা সৈয়দ খালেদ মিয়া, সেক্রেটারি আব্দুল খালিক, সৈয়দ সাজনু, সৈয়দ শাহীন, ওমর মেহেদী, সৈয়দ হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সান্ডারল্যান্ড, সাউথশিল্ডস, নিউক্যাসল, ডার্লিংটন, হার্টলিপুলসহ আশে পাশের শহরের বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙ্গালির উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তুলে।

বাকিংহাম প্রাসাদ-রাজমালি আবশ্যক
ব্রিটেনের বাকিংহাম প্রাসাদ ও সেন্ট জেমস প্রাসাদের রাজকীয় বাগানের জন্য মালি পাওয়া যাচ্ছে না। রাজকীয় ওয়েবসাইটে মালি চেয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশের পরও আবেদনপত্র জমা না পড়ায় রানি ১৫ হাজার ৭৫০ পাউন্ড বেতন থেকে বাড়িয়ে ১৭ হাজার পাউন্ড করেছেন। আশা করা যাচ্ছে এইবার নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আবেদনপত্র জমা পড়বে।

বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ) অ্যাওয়ার্ড
গত ৪ ডিসেম্বর রোববার হয়ে গেল লন্ডনের বিখ্যাত পার্ক প্লাজা হোটেলে বিসিএ এওয়ার্ড। জমজমাট এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট সেক্রেটারি এরিক পিকেলস এমপি। পুরস্কাপ্রাপ্তরা হলেন, আজিজুর রহমান(জলসা), টিপু রহমান (নর্দাম্পটন), মো. আশরার (লন্ডন), সোহেল আহমেদ (ডারহাম), আহাদ শেখ(এডিনবারা)প্রমুখ।

বিজয় ফুলের লঞ্চিং
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রাহমান বলেছেন, বিজয় ফুলের যতোই প্রচার এবং প্রসার হবে ততোই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম বিজয় ফুলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাপারেও আগ্রহী হবে। মেয়র তার অফিসে গত ডিসেম্বরে বিজয় ফুলের লঞ্চিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধ্বিক শামীম আজাদের উদ্যোগে বেশ ক’বছর ধরে ইংল্যান্ডে বিজয়ের মাসে এই বিজয় ফুল কর্মসূচি করে আসছেন, বর্তমানে এটা সারা ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে ইউরোপেও বাংলা ভাষাভাষী জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

লেখক ব্রিটেস প্রবাসী, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad