ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

মালয়েশীয় অভিবাসন নীতির জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিরাই

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
মালয়েশীয় অভিবাসন নীতির জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিরাই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক। ছবি : বাংলানিউজ

কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: অবৈধ অভিবাসীদের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমেই বদলাচ্ছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন নীতি। দেশটির ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াটাও জটিল। মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইনের এ জটিলতার কারণে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি।

যদিও মাঝে মধ্যে দেশটির সরকার অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে, কিন্তু বাংলাদেশি দালাল চক্রের কারণে সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি শ্রমিকরা।
 
প্রবাসী শ্রমিকদের অভিযোগ, পুরো মালয়েশিয়ায় লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি বৈধ না হওয়ার পেছনে অসাধু প্রবাসী দালাল যেমন দায়ী।

তেমনই বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না।  

কুয়ালালাপমপুরসহ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় তর্মরত প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ২০১৭ সালে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের  সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বৈধ হওয়ার জন্য ‘মাই ইজি ও বিএম’ নামে প্রকল্প চালু করে দেশটির তৎকালীন সরকার।  

কিন্তু মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক সরাসরি ইমিগ্রেশনে ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অভিবাসন নীতিতে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমেই (মালয়েশিয়ান নাগরিক) ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।  

ফলে মালয়েশীয় এজেন্টরা আবার অবৈধ বিদেশি সংগ্রহ করতে সাব-এজেন্ট নিয়োগ করে করে (কারণ তাদের পক্ষে লাখ লাখ অবৈধ বিদেশিদের চেনা অসম্ভব); যাদের মাধ্যমে অবৈধ বিদেশি নাগরিক সংগ্রহ করা হয়।  

বাংলাদেশি প্রবাসীরা বলছেন, পুরো মালয়েশিয়াজুড়ে শক্তিশালী বাঙালি দালাল চক্র গড়ে ওঠেছে। পুরো দেশজুড়ে কয়েক লাখ অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ করার জন্য মালয়েশীয় মুদ্রায় কয়েক অর্ধ কোটিরও বেশি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়। পরে তারা সাইনবোর্ড সরিয়ে উধাও হয়ে যায়।  

বৈধ করার জন্য প্রতি বাংলাদেশি এজেন্টরা তাদের কাছ থেকে ৫-৬ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়। যদিও কৃষি, নির্মাণ ও ফ্যাক্টরিসহ খাত ভেদে সরকারি ফি অনুযায়ী, দেড় থেকে ২ হাজার রিঙ্গিত লাগার কথা। কিন্তু টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধই থেকে যাচ্ছেন লাখ লাখ প্রবাসী।  

জানা যায়, ২০১৭ সালে ওই দুই প্রকল্প চলাকালে ইমিগ্রেশন কার্ডের (আই) মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি কপি করে জাল আই কার্ড তৈরির মতো গুরুতর অপরাধ করে বাংলাদেশিদের একটি দালাল চক্র। একপর্যায়ে নজরে এলে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে মালয় পুলিশ।  

প্রবাসীরা বলছেন, দেশটির পুলিশ এখনও এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে বিভিন্ন সময় কয়েকটি চক্র ধরাও পড়েছে।  

রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের চুইঙ্গা বুলু এলাকায় থাকেন মো. ফারুক উদ্দিন। বাড়ি বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলায়।  

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানালেন, বাংলাদেশ থেকে চার লাখ টাকা দিয়ে অবৈধভাবে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। দালালরা তাকে বৈধ করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু উল্টো তার কাছ থেকে আই কার্ড করিয়ে দেওয়ার নাম করে সাড়ে ৪ হাজার রিঙ্গিত নিয়ে উধাও হয়ে গেছে আজিজ নামের এক দালাল।  

চুইঙ্গা বুলুর ব্যবসায়ী মো. সম্রাট জানান, গত ডিসেম্বরে তিনি আবেদন করেছেন, প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ভিসা পাননি।  

তবে মালয়েশীয় এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করার কারণে তিনি প্রতারণার শিকার হননি বলে জানান এই প্রবাসী।

প্রবাসী বাংলাদেশি চুইঙ্গা বুলুর আরেক ব্যবসায়ী মো. সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশিরা নিজেরাই নিজের কপালে কুড়াল মারছে। এখানে যত অনিয়ম, সবই বাঙালিদের দিয়ে হচ্ছে।  

‘বাঙালিরা কোনো আইন মানে না। সব ধরনের অপকর্মই তাদের দ্বারা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত, যারা বিদেশে আসবে তাদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো। ’

এছাড়া কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার পাশাপাশি যারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এই প্রবাসী বাংলাদেশি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
টিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।