ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লন্ডন

স্টুটগার্টের চিঠি

প্রবাসে একুশের চেতনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
প্রবাসে একুশের চেতনা শিল্পীর তুলিতে আ মরি বাংলা ভাষা। ছবি-সংগৃহীত

৫২’র ভাষা আন্দোলন আর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির পরম সৌভাগ্যের দুটি অধ্যায়। একটার সঙ্গে আরেকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে সম্পর্কযুক্ত।

ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগে বাঙালি জাতির মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এই বাংলাভাষায় কথা বলা জাতিকে পৃথিবীর বুকে স্থায়ী ভূখণ্ড দিয়েছে। আমরা সকলেই তা জানি।

প্রবাসে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও মায়ের ভাষা এবং ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রবাসে যাদের জন্ম ও বসবাস, তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। আমাদের সন্তানদের মায়ের ভাষা শিক্ষা দেওয়া যেমন জরুরি তেমনি তাদেরকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেওয়াটাও খুবই দরকার।

জন্মসূত্রে মানুষ যেকোনো দেশের নাগরিক হতে পারে কিন্ত একজন বাঙালির সন্তান পৃথিবীর যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে সে বাঙালিই। কারো যদি তার শেকড় সম্পর্কে বা মাতৃভুমি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে বা মাতৃভাষায় যদি সে ভালভাবে কথা বলতে না পারে, সে কখনও কোনো দেশের মানুষের কাছেই ততটা সন্মানিত হতে পারে না।

যারা আমাদের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে আর পৃথিবীর বুকে স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে বাঙালি জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, সন্মানিত করে গেছেন, আমরা চিরঋণী সেই সকল ভাষাশহীদের কাছে আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ভূখণ্ড শত্রুমুক্ত হয়েছিল বলেই আমরা বাংলাভাষায় কথা বলতে পারি এবং বাঙালি জাতি হিসাবে পৃথিবীতে স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। বাংলাদেশ অর্জিত হয়ে ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগ সফল করেছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার স্রোতে জেগে রয়েছে বাংলাভাষা, বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বপ্ন।

প্রতিটি জাতিরই কৃষ্টি-কালচার, ভাষা,পোশাক,খাবার, আচরণে নিজস্বতা,আলাদা স্বকীয়তা থাকে। আমাদের মায়ের ভাষা যেমন মিষ্টি মধুর তেমনি আচরনেও আমরা নরম কোমল স্বভাবের। আমরা আমাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতিতে একটি অনন্য আলাদা জাতি। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগে আমরা ভাষার অধিকার না পেলে আর মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। এবং যদি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ভূখণ্ড শত্রুমুক্ত না হতো তাহলে আজ আমার মত পৃথিবীর কোণায় কোণায় বসবাসরত প্রতিটি বাঙালিকে পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে হত আজীবন।

এই ভয়াবহ কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে চিরদিনের জন্য আমাদের মুক্তি দিয়ে গেছেন যারা, আমরা তাদের ত্যাগ কোনোদিন ভুলব না। প্রতিটি দিনে, উৎসবে আমরা তা স্মরণ করি।

আমরা বাঙালিরা অত্যন্ত উৎসবমুখর। প্রবাসে থাকার সুবাদে বিভিন্ন দেশের এবং ভাষার মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছি। আমরা বাঙালিরা, বাংলাদেশিরা যেমন বছরের বিভিন্ন পর্বে পর্বে বিভিন্ন রকম উৎসব উদযাপন করি, তেমনটি ইউরোপ, আমেরিকার মানুষদের অথবা আমাদের এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন-শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্তান, চীন, জাপানের (এমন কি ইন্ডিয়ান যারা নন-বেঙ্গলি) মানুষদেরকে এতোটা উৎসবমুখর হতে দেখি না।

আমরা গানের জাতি। আমাদের রক্তে, হাটে, মাঠে, ঘাটে, আউল, বাউল, জারি, সারি গান বহমান। আমার মতো প্রতিটি বাঙালি নারীই রান্না করতে, শাড়ি পরতে, খোঁপায় ফুল লাগাতে ভালবাসে। সব নারীই মমতাময়ী, তবুও বাঙালি নারীর মমতা ভুবনখ্যাত।

খাবারের মধ্যে গুড়, পিঠাপুলি, পায়েস, নাড়ু, মুড়কি, দই-মিষ্টি ইত্যাদি আমাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাই তো পৃথিবীর বুকে এমন একটি অনন্য জাতিকে যারা ভাষার অধিকার দিয়েছে আর পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করে স্বাধীন ঠিকানা দিয়ে বাঙালি জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তাদের কাছে আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম, চিরঋণী এবং কৃতজ্ঞ।

তাঁদের আত্মত্যাগের কারণে আজ আমরা বড় ভাগ্যবান। তাই তো আত্মতৃপ্তির সাথে আমরা সবাই প্রাণের গান গাই: “আমি বাংলায় গান গাই/...আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই/...আমি বাংলায় কথা কই/... আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি,বাংলায় জেগে রই”।  

সকল প্রবাসীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা সকল ভাষাসৈনিকের প্রতি, শ্রদ্ধা জানাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি।

#লেখক, জার্মানিপ্রবাসী শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।