ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ‘সহজেই’ কোটিপতি মালয়েশিয়ায়

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৭
ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ‘সহজেই’ কোটিপতি মালয়েশিয়ায় নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছেন রহিম

মালয়েশিয়া: ‘সহজে কোটিপতি’ লেখা যতোটা সহজ, কাজটি কিন্তু ততোটা সহজ নয়। ছোট থেকে বড় হতে প্রয়োজন হয় নিরলস পরিশ্রম, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, পরিচিতি। আর সেটা যদি হয় বিদেশের মাটিতে তবে তো কথাই নেই। সবাই না পারলেও কেউ কেউ কাজটি পারে। যেমনটি পেরেছেন মালাক্কার মো. আব্দুর রহিম।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশ নিয়ে অস্থিরতা থাকলেও তার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। সাহস করে গড়ে তুলছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

রেস্টুরেন্ট, কারওয়াশ, কৃষি, কনস্ট্রাকশন, মিনি বাজার প্রভৃতি ব্যবসায় বাংলাদেশিরা বেশ সফল। যারা দীর্ঘদিন এদেশে আছেন, ব্যবসা করার সুযোগ আছে কিংবা সুযোগ পেয়েছেন, তাদের অধিকাংশ গেঁড়েছেন শক্ত আসন।  
 
হরেক ব্যবসার মধ্যে টায়ার ব্যবসার মতো বাংলাদেশির জন্য আরেকটি আনকমন ব্যবসা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। এই ব্যবসায় বিনিয়োগের তুলনায় মুনাফার সুযোগ অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশিরা এ সেক্টরে পিছিয়ে। পিছিয়ে থাকার পিছনে অন্যতম কারণ ব্যবসাটি অতোটা সহজ নয়। শ্রমিক বা কর্মী হিসেবে অনেক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় এ সেক্টরে কাজ করলেও মালিকানা খুব কম।
 
এ ব্যবসার জন্য কমিউনিটিতে পরিচিতি অনেক বড় বিষয়। পরিচিতি ছাড়া কাজ পাওয়া কঠিন। আর একবার পরিচিতি পেলে কোটিপতি হতে সময় লাগবে না তার। কুমিল্লার আব্দুর রহিম ১৭ বছর ধরে আছেন মালাক্কায়। দেশে থাকতেই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের কাজ সামান্য জানতেন। সেটা পুঁজি করে প্রবাসে এসেও কাজ করেছেন কিছুদিন। সততা, নিষ্ঠা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে সময় বেশি লাগেনি তার। বন্ধুর সহযোগিতায় নিজেই খোলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ব্যবসা।
ওয়ার্কশপে তৈরি হচ্ছে এসএস এর গ্রিল
 সেটা ২০০৮ সালের দিকের কথা। মাত্র ১৬ হাজার রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত=২০ টাকা) দিয়ে মেশিন কিনে শুরু করেন ব্যবসা। কর্মচারীও বেশি লাগে না। তিন চারজনেই হয়ে যায়। তাই খরচ খুব বেশি না। প্রথমে প্রায় ৬ মাস চলে লসে। কিন্তু ভেঙে পড়েননি রহিম। তারপর শুরু হয় লাভ। কাজ বুঝে যান, মাপজোখ, কাজের দক্ষতা বাড়ে। ভালো কাজ করেন বলে পরিচিতিও হয়ে যায় শিগগিরই।
 
রহিম বলেন, আমি সহজে কোনো কিছু শুরু করলে বাদ দেই না। সবকিছুতে ধৈর্য ধরতে হবে। নিজে সৎ থাকলে পরিশ্রম বিফলে যায় না। এ কাজে যখন লাভ হতে শুরু করলো তখন দেখি লাভ কোনো কোনো সময় ডাবলেরও বেশি। এখানে প্রচুর কনস্ট্রাকশনের কাজ হয়। আমি লোহার পাশাপাশি এসএস এর কাজও করি। বড় বড় বিল্ডিংয়ের গেট, জানালা, লোহার ফ্রেম, দোকানের রেলিং প্রভৃতি কাজ করতে থাকি। কাজ ভালো করলে একজন কাস্টমারই আরও ১০ জন কাস্টমার নিয়ে আসে।
 
কাপড়ের দোকান ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসাও রয়েছে পরিশ্রমী এ ব্যক্তির। সব ব্যবসাতেই সফল তিনি। জানান, শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকেই মাসে তার আয় হয় দুই থেকে তিন লাখ রিঙ্গিত। বছরে বাংলা টাকায় গড় হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ৫-৬ কোটি টাকা।
নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছেন রহিম
 একটি বড় গেট করতে পারলেই অনেক সময় লাখ টাকার কাছাকাছি লাভ থাকে বলেও জানান তিনি।
 
রহিম বলেন, এ ব্যবসায় যারা ইনভেস্ট করতে চায় তাদের অল্প হলেও কাজ জানা লাগবে। দ্বিতীয়ত তার পরিচিতি থাকতে হবে। মানুষ আপনাকে না চিনতে কাজ করিয়ে নেবে না। কারণ মানুষ ঘরবাড়ির কাজ করে শখ করে। তারা চায় না তাদের কাজ খারাপ হোক। এই সেক্টরে বাংলাদেশিরা একটু পিছিয়ে। অথচ অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা এটি। যারা দীর্ঘদিন এ দেশে আছেন তারা এ ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা ভাবতে পারেন।  
 
মালয়ী মেয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধার আগেই রহিম ব্যবসা শুরু করেন। সে ব্যবসায় এখন জোয়ার। মহল্লা ও কমিউনিটিতে ক্লিন ইমেজ থাকায় সবাই তাকে পছন্দ করেন। তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও তিনি যথেষ্ট মূল্যায়ন করেন। বেতনও দেন ১৮শ থেকে ২২শ রিঙ্গিত করে। সুযোগ পেলেই কাজ করেন নিজে। মালাক্কার নিরিবিলি ছিমছাম এলাকা বেংকেল বিসিতে তার দোকান।
 
আব্দুর রহিমের মতো বুদ্ধিদীপ্ত কর্মঠ ব্যক্তি প্রবাসে এসে সফল হলে সেটা বাংলাদেশিদের গৌরব। রহিমও চান দেশের মানুষ এদেশে এসে দেশের গৌরব বাড়াক।

আসিফ আজিজ।   আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

** মালয়েশিয়ার মাটিতে বাংলাদেশির হাত ধরে পুঁই-লালশাক-শিম
** মালয়েশিয়ার যতো বাহারি ফল
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।