ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডে আত্মার সম্পর্ক গড়ছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার রনি

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
থাইল্যান্ডে আত্মার সম্পর্ক গড়ছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার রনি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: পড়েছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার নিয়ে কিছুদিন কারবারও করেছেন মাহমুদুর রহমান রনি (৩৩)।

 

এখন তার নেশা আর পেশা অভিন্ন। ভিনদেশি মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া। আত্মার সম্পর্ক। অসুস্থ মানুষকে সেবা দেওয়া।

রনি বরিশালের গৌরনদী থানার কাচিচর গ্রামের ছেলে। বাবা ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।

দেশে ভূঁইয়া কম্পিউটার্স, সিম্ফনি সফটটেক, জিএমজি এয়ারলাইন্সে কাজ করেছেন সফটওয়্যার কনসাল্ট্যান্ট পদে।

উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য এখানে আসেন রনি। তার প্রোফাইল দেখে স্থানীয় লুমপিনি প্রপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

২০১১ সালের মধ্যভাগে দেশটিতে চলে আসেন তিনি। এখানে কিছুদিন কাজ করে যোগ দেন রামানাইন এলাকার বেসরকারি পিয়াভেদ হসপিটালে।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার রনি হয়ে যান হাসপাতালটির ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর।

প্রতিদিন গড়ে আটজন ভিনদেশি রোগীকে সেবা দেন তিনি। তাদের এয়ারপোর্টে স্বাগত জানানো, হোটেলে থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ সামগ্রিক চিকিৎসা ও নির্বিঘ্নে দেশে ফেরা-সবকিছুরই দেখভাল করতে হয় তাকে।

পর্যটনের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত থাইল্যান্ড এখন ভিনদেশিদের কাছে "মেডিকেল ট্যুরিজমের" জন্য জনপ্রিয়।

তুলনামূলক কম খরচ আর আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু লোকের আস্থার ঠিকানা এখন থাইল্যান্ড। এজন্য অধিকাংশ খ্যাতনামা হাসপাতালে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক।

রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় অনেক হাসপাতালেই কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকরা; দোভাষী হিসেবে।

মাহমুদুর রহমান রনি বাংলানিউজকে জানান, ব্যাংককে উন্নত আর আধুনিক চিকিৎসার শীর্ষে রয়েছে বামরুনগ্রাড ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল, ব্যাংকক হসপিটাল, ছামিতাভেজ হসপিটাল, পিয়াথাই হসপিটাল এবং পাওলো মেমোরিয়াল হসপিটাল।

এছাড়া সরকারি পর্যায়ে শ্রীরাজ হসপিটাল, চুরালংকন হসপিটাল, মাহিদুল ইউনিভার্সিটি হসপিটালও চিকিৎসা সেবায় এখানকার বাসিন্দাদের কাছে আস্থার প্রতীক।

তবে এসব হাসপাতালের অনেকটিতে দোভাষী না থাকায় এশিয়া, আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা রোগীদের একটু বিপাকেই পড়তে হয়।

এখানে হসপিটাল ভেদে সেবার মূল্যও ভিন্ন ভিন্ন। রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা; বিশেষ করে সিটিস্ক্যান কোথাও ২৫ থেকে ৩০ হাজার বাথ। আবার কোথাও সাত থেকে ১০ হাজার বাথ। এখানে এক বাথ সমান বাংলাদেশি প্রায় আড়াইটাকা।

রনির মতে, একটু সচেতন হলেই এই দেশে সাশ্রয়ীমূল্যে বিশ্বমানের উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব। বোনমেরু ট্রান্সফার, কিডনী, ক্যান্সারের চিকিৎসা কোনো কোনো হাসপাতালে প্রতিবেশী দেশে ভারতের সমান। তবে সেবার মান তাদের চেয়ে উন্নত।

এখন অনলাইনেই দেশ থেকে হাসপাতাল ও চিকিৎসকের খোঁজ খবর নিয়ে রোগীরা সরাসরি এখানে চলে আসতে পারেন। জেনে নিতে পারেন
ভর্তি ফি, সার্জারি ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচের ধারণা।

তবে রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের থাকা-খাওয়ার পেছনেও বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয় এখানে। সেক্ষেত্রে রামকাম হ্যাং, তাল প্রাও, মৌচিত, সাপান কোয়াই, রাচাতাভিসেকসহ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকলে খরচ অনেক কমে আসে।

আর শহরতলিতে থেকে বিটিএস স্কাই ট্রেনে করে দ্রুত ও নিরাপদে হাসপাতালে যাতায়াত সম্ভব।

অনেকেই হাসপাতাল সংলগ্ন হোটেলে ওঠেন। এসব হোটেলের ভাড়া তুলনামূলক বেশি।

যেমন গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট বা অ্যাম্বাসেডার হোটেলেও দিন প্রতি গুনতে হবে ১৭ থেকে ২৫শ’ বাথ।

রনি বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের নিজের স্বজন মনে করি। এছাড়া পেশার সুযোগে আমার সেবা দেওয়ার সুযোগ হয় ইথিওপিয়া বা আরব থেকে আসা রোগীদেরও। থাই ভাষা জানার সুবাদে দ্রুত তাদের সঙ্গে যে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করা যায় সহজে।

রোগীরা সুস্থ হয়ে নিজ দেশে ফিরে যান। তাদের অনেকেই পরে আমাকে ফোন করেন। আমার খোঁজ-খবর নেন। আমার মাধ্যমেও নতুন বাংলাদেশকে চেনেন। তখন গর্বে বুক ভরে যায়।

আসলে এভাবেই প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে তৈরি হয় আত্মা আর ভালোবাসার সস্পর্ক, যোগ করেন রনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
এসআই

** আসকার কষ্ট বোঝে না কেউ
** পাতায়ায় মহারানীর ‘রাজা’ সোলায়মান
** সেবার মাধ্যমেই প্রবাসে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন বাবুল
** কোন স্যাটার ডে, সান ডে নেই!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।