ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

থাইল্যান্ড

আনলাকি, তাই থার্টিন সংখ্যাটিই রাখেনি থাইরা!

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৩ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৬
আনলাকি, তাই থার্টিন সংখ্যাটিই রাখেনি থাইরা!

ব্যাংকক থেকে: আনলাকি থার্টিন। বিশ্বজুড়ে বহুল প্রচারিত প্রবাদ বাক্য।

তাই বলে থার্টিন কে তো আর জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায় না।

কারণ, এক দেশের ভাষা অন্য দেশের মানুষ না জানলেও হয়ত চলে, তবে গণনার জন্য সংখ্যার হিসেবটা এক থাকতেই হয়। আর সেখানে থার্টিন বা ১৩’র গুরুত্ব মোটেই কম নয়।
তবে এই থার্টিন ‘আনলাকি’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায়  কিছু কিছু থাই প্রাত্যহিক জীবন থেকে থার্টিনকে সত্যি বাদ দিয়ে দিয়েছে। জীবনের কোথাও থার্টিন সংখ্যাটির ব্যবহার চায় না তারা।

এর প্রমাণও মিলেছে কয়েকটি ঘটনায়।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্য অনেক দেশের মানুষের মত থাইরাও কিছু  কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। সে বিশ্বাস থেকেই ১৩-কে বাদ দিয়েছে কেউ কেউ।

গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের সুকুম্ভিত এলাকার একটি ২৬ তলা ভবনে দেখা যায়, লিফটের বোতামসারিতে ১-২৭ পর‌্যন্ত সব সংখ্যার নির্দেশনা থাকলেও অদ্ভূতভাবে ১৩ সংখ্যাটি অনুপস্থিত। কারণ অনুসন্ধানে নামতেই গৃহকত্রীর ব্যাখ্যা,  থাইরা বিশ্বাস করে ১৩ বা থার্টিন সংখ্যাটি আনলাকি। তাই এ সংখ্যার প্রভাব থেকে বাঁচতে এই বিরাট ভবনে ১৩ সংখ্যার কোন ফ্ল্যাট নেই। ১২-র পরে ১৪ থেকে আবার নম্বর দেওয়া আছে।

দীর্ঘদিন আগে তৈরি এ অ্যাপার্টমেন্টের বেশ পুরোনো বাসিন্দারাও এ কথা জানেন। তাই হঠাৎ করে কেউ গিয়ে সেখানে ১৩ নম্বর ফ্ল্যাট খুঁজতে শুরু করলে নির্ঘাত সিকিউরিটি গার্ডের অর্ধচন্দ্র খেতে হবে।

এ তো গেলো পুরোনো দিনের তৈরি বাড়ির হিসেব। এবার আসি বর্তমান সময়ে।

সুকুম্ভিত এলাকা থেকে ট্যাক্সিযোগে গিয়েছিলাম ডংমং এয়ারপোর্ট, উদ্দেশ্য ফুকেটের ফ্লাইট ধরা। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ট্যক্সির মিটারে তাকিয়ে দেখলাম ভাড়া ২১৩ বাথ (থাই ‍মুদ্রা)। পকেট থেকে টাকা বের করে ট্যাক্সি ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে দিতেই সে তা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে আবারও ট্যাক্সি চালানো শুরু করল। এক নম্বর টার্মিনাল থেকে কিছুদূর এগিয়ে দুই নম্বর টার্মিনালে থামল। ততক্ষণে মিটারের কাঁটা ২১৫ বাথ ছাড়িয়েছে। এবার ড্রাইভার বানছা নিজে ট্যাক্সি থেকে নেমে আমার জন্য দরজা খুলে দাঁড়ালো।

হঠাৎ এর আগের রাতে শোনা আনলাকি থার্টিনের গল্প মনে আসায়, আমি তাকে ২১৩ বাথই ভাড়া দিলাম। কিন্তু সে এবার আরো বেশ হতাশ চেহারায় আরো দুই বাথ চাইলো।   ওকে বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা স্বত্বেও বলে চললাম, ভাড়া ২১৩ বাথই হয়েছে। কেন দুই বাথ বেশি দেবো। তখন সে আমাকে এক বাথ ফেরত দিলো। কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা। এক বাথ নেবো না।

আমাদের কথা কাটাকাটির কারণে বানছার ট্যাক্সির পিছনে জ্যাম বাড়ছে। খানিকটা বাধ্য হয়ে বানছা চালকের আসনে বসলো। আমিও খুব বেশি ঝামেলা না করে, তাকে আরো আট বাথ বেশি দিয়ে এয়ারপোর্টে ঢুকে গেলাম। তবে মাথায় আমার তখনও ভর করছে কেন বানছা ২১৩ বাথ নিতে চাইলো না।

সকল ফর্মালিটি শেষ করে আমার নির্দিষ্ট এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটের জন্য যখন অপেক্ষা করছিলাম, তখন পাশে বসা এক থাইয়ের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সুযোগ বুঝে জানতে চাইলাম আনলাকি থার্টিনের রহস্য।

ফুকেটগামী সেই যাত্রী থান হাসিমুখে বলেন, এটা আর কিছু নয়। নিতান্তই কুসংস্কার। পারতপক্ষে থাইরা ১৩ সংখ্যাটিকে এড়িয়ে চলে। তবে সবাই নয়।    
আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে যে এ মত বদলাচ্ছে, তার প্রমাণও মিললো। এ কুসংস্কার ছেড়ে আধুনিক থাইরা থার্টিনকেও জায়গা দিচ্ছে হিসেবের তালিকায়।

বাণিজ্যিক এলাকায় তৈরি ভবনগুলোতে ১৩ নম্বর এপার্টমেন্ট পাওয়া গেল। তবে কোন জিনিসের মূল্য তালিকায় ‘১৩’ সংখ্যাটি চোখে পড়েনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৬
জেপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad