ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্পেন

থাইল্যান্ড থেকে জেসমিন পাপড়ি

ঘরে চুলা জ্বলে না থাইদের!

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
ঘরে চুলা জ্বলে না থাইদের! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Jasmin_papri_1ব্যাংকক, থাইল্যান্ড থেকে: তিনবেলা খাবার খেতে রসনা বিলাস করেন না থাইল্যান্ডবাসীরা। বলতে গেলে ঘরে চুলাই জ্বলে না তাদের।

শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এমনটাই জানালেন ব্যাংকক শহরের একাধিক কর্মজীবী নারী ও পুরুষ।

ভোর থেকেই ব্যাংককে রাস্তার পাশের খাবারে দোকানগুলো খুলে যায়। কর্মজীবী মানুষ সেসব দোকানের খাবার খেয়ে কাজে যোগ দেয়। কাজ পাগল থাইরা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্যও ঘরে যায় না। তখনও ভরসা ওই রাস্তার খাবার। নারী পুরুষ সবাই যখন কর্মব্যস্ত সময় পার করে, তখন ঘরে রান্না করা খাবার নিয়ে কেউ বসে থাকে না। তাই কর্মযজ্ঞ শেষে ঘরে ফেরার সময়ও দোকানের থেকে খেয়ে ফেরে তারা। শুধু তাই নয় বাবা মায়ের পাশাপাশি সন্তানরাও বাইরের খাবারেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

যেন ঘরকন্যার কাজ করার নিয়ম পাল্টে দিয়েছে থাই নারীরা। ব্যাংককের প্লাটিনাম শপিং সেন্টারে কর্মরত নারী পলিচম্পো বলেন, সকাল থেকেই বাবা মায়ের পাশাপাশি আমিও কাজে বের হই। সঠিক সময়ে কাজে যোগ দিতে গেলে রান্না করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ঘরের বাইরে যে খাবার পাওয়া যায় তা অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্নও। তাই আমার পরিবারে স্কুল পড়ুয়া দুই ভাই থেকে শুরু করে বৃদ্ধ দাদা পর্যন্ত প্রতিদিন তিনবেলা ফুটপাতের খাবারই কিনে খাই। এভাবে সবার সঙ্গে প্রতিদিন খাবার টেবিলে দেখা না হলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে বাইরে খেতে যাই। ’

পলিচম্পোর কথার প্রমাণ মেলে ব্যাংককের রাস্তায় রাস্তায়। পরিচ্ছন্ন সব দোকানগুলোতে নানা খাবারের পসরা সাজানো। আছে ফলের দোকানও। দুপুরে অফিস থেকে নেমে এসে সেসব দোকানে খেতে বসছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার হাতে কয়েক প্রকার খাবার নিয়ে খেতে খেতেই কাজে ফিরছেন।

জানা যায়, প্রত্যেকটি দোকানে খাবারের মানের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হয়। ফলে অফিসের মালিক থেকে কর্মচারী সবাই এসব ফুটপাতের খাবারের উপর নির্ভর করে চলে।

তবে থাইদের খাবারের সময়টাও কিছুটা ভিন্ন। ‘আর্লি টু বেড আর আর্লি টু রাইজ’ প্রবাদটি মেনেই যেন জীবন চলে তাদের। সকাল ৬-৭টার মধ্যে সকালের নাস্তা, বেলা ১১-১২টার মধ্যে দুপুরের খাবার আর সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রাতের খাবার নেওয়া শেষ করে ফেলে তারা। তবে খাবারের দোকানগুলো রাতে খোলা থাকে ন’টা-দশ’টা পর্যন্তই।

কৃষিতে এগিয়ে যাওয়া থাইল্যান্ডের পথে পথে সাজানো হাজারো ফলের দোকান। চলার ফাঁকে সেসব সুস্বাদু ফল কিনে চিবুতে থাকে বেশিরভাগ নাগরিক। দোকানগুলোতে ফলের পাশাপাশি হরেকরকম মাছ, কিংবা মাংস সাজানো অাছে। রয়েছে শামুক, কাঁকড়ার মত থাই খাবারও। ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পাশে থাকা উনুনে হালকা ঝলসে দিচ্ছে বিক্রেতারা। সঙ্গে অারো কিছু ফলমূল নিয়ে তৃপ্তিসহকারে খেয়ে নিচ্ছে ব্যস্ত মানুষ। তবে বেশিরভাগ সবজি কাঁচা খেতেই পছন্দ করে থাইবাসী। দুই বা একবেলা  ভাতও রয়েছে তাদের প্রধান খাদ্য তালিকায়। তবে এসব খাবারের পাশাপাশি সুস্বাদু সব ফল প্রতিদিনকার থাই খাদ্য তালিকায় অন্য মাত্রা এনে দেয়।

সদ্য বাংলাদেশ ঘুরে আসা চিউ নামের এক থাই তরুণ বাংলানিউজকে বলেন, অতটা রসনা বিলাস নেই থাইদের।   রাস্তার পাশে খাবারে এতটাই অভ্যস্ত যে, শেষ কবে ঘরে রান্না করা খাবার খেয়েছি মনে পড়ে না। এটা আমাদের জীবনাভ্যাসের একটি অংশ। বেশি কাজ করার জন্য রান্নার কাজে সময় নষ্ট করা এড়িয়ে চলি। ’

পরিচ্ছন্ন রাস্তা অার সেখানকার রুচিকর  খাবার দেখে বাংলাদেশি পর্যটক আশিকুজ্জামান লিটন  মন্তব্য করেন, ‘থাইদের এই জীবন অভ্যাসই তাদেরকে প্রতিদিন উপরে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে তিনবেলা মানুষ যখন রাস্তায়, তখন মাত্র দুই ঘণ্টার আকাশ পথ দূরত্বে আমাদের শহর ঢাকার ফুটপাতে খাবারের কথা আমরা ভাবতেই পারিনা। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
আরআই

** থাই রাজার জন্য বাংলাদেশের প্রার্থনা
** রাজার জন্য যতো ভালোবাসা!
** থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের ‘শক্তি’
** রেন্টে বাইক!
** গাড়ির হর্নবিহীন শহর
** সময়ানুবর্তী রিজেন্ট এয়ার
** কলম দেখলেই এগিয়ে আসেন তারা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।