ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কুয়েত

কুয়েত থেকে জাহিদুর রহমান

অলিদের বঞ্চনা দেখার কেউ নেই

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৫
অলিদের বঞ্চনা দেখার কেউ নেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাহারা (কুয়েত) থেকে: ধূসর মরুভূমির রুক্ষতা আর কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে কুয়েতে কাজ করছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। মূলত অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে সামান্য বেতনে কাজ করতে হয় তাদের।

তপ্ত মরুভূমিতে কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হয় এসব প্রবাসী শ্রমিকদের।

কঠোর পরিশ্রমের পর একটু বাড়তি রোজগারের অাশায় অন্য কাজের সন্ধানে ছুটতে হচ্ছে এখানকার প্রবাসীদের, যা স্থানীয় আইনেও নিষিদ্ধ।

কুয়েতের জাহারায় কাজ করেন বাংলাদেশের কৃষিশ্রমিক অলি (২৮)। দুই লাখ টাকা খরচ করে ২০০৬ সালে আসেন এখানে। মাদারীপুরের রাজৈরের অলি মাস শেষে বেতন পান মাত্র ৬০ কুয়েতি দিনার, বাংলাদেশি মুদ্রায় কমবেশি ১৫ হাজার টাকা। প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কর্মস্থলে আসতে হয় তাকে।

অবশ্য কোম্পানির খরচে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও খাওয়ার খরচ নিজের। সব মিলিয়ে মাসে টেনে টুনে ৮/১০ হাজার টাকা পাঠান দেশে।

‌‌অদক্ষ শ্রমিকদের জন্যে এখানে বেতন ৬০ কেডি (কুয়েতি দিনার) বলে জানান তিনি।

‘এ বেতনে চলে না। জিনিস পত্রের যা দাম! আমাদের বেতন বাড়ালে ভালো করে চলতে পারতাম’- বলছিলেন অলি।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ নিয়ে আত্মতুষ্টির আড়ালে চাপা পড়ে যায় অলির মতো প্রবাসী শ্রমিকদের বঞ্চনা। চেহারা জুড়েই অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। তার ওপর প্রচণ্ড খাটুনি আর বৈরি আবহাওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমিকদের চাহিদা সামান্যই। একটু বেতন বাড়ানো।

হিসেবটা খুব সোজা। এ বেতনে প্রবাসে আসার ‘মূলধন’ তুলতেই পার হয়ে যায় দুই থেকে আড়াই বছর। এর ওপর অসুস্থতাজনিত কারণে কাজে অনুপস্থিত থাকলেও বেতনে ছুরি চলে। তাহলে তো দুই বছরের পরিশ্রমই বোঝা। অথচ প্রথম মাস থেকে অন্তত ছয় মাসের মধ্যে উঠে আসার কথা প্রবাসে আসার মূলধন।

আর হচ্ছে না বলেই অবৈধভাবে বাড়তি শ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে অলিদের মতো হাজারো শ্রমিককে। ধরা পড়লে জেল-জরিমানা। অথচ শ্রমিক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিজ খরচেই অভিবাসন ব্যয় মেটানোর কথা। অলিদের কষ্টে সংগ্রহ করা অভিবাসন ব্যয়ের টাকা দিয়েই ফুলে ফেঁপে যায় আদম ব্যাপারিদের সম্পদের পাহাড়। আর নিঃস্ব হতে থাকে অলিদের সঞ্চয়।

‘মরুভূমিতে গরমের সময় তীব্র গরম আর শীতের সময় খুব শীত। এ পরিবেশে সামান্য বেতনে কাজ করাই কষ্টকর। কি করবো, আমাদের যে আর কোনো উপায় নেই’- যোগ করেন অলি।

কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আগে অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন ছিলো মাত্র ২০ কেডি(কুয়েতি দিনার)। সেটা বেড়ে এখন ৬০ কেডি হলেও আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি কুয়েত সরকারের সঙ্গে। অনুরোধ জানিয়েছি, বেতন অন্তত ১শ’ কেডিতে বর্ধিত করতে।

বলেছি, বেতন একটু বাড়ালেই শ্রমিকদের বাড়তি আয়ের জন্যে অবৈধভাবে অন্য জায়গায় কাজ করতে হবে না। এতে করে অনেক সংকট কমে আসবে। শ্রমিকরাও থাকবেন নিরাপদ।

** শিল্প-সাহিত্যেও পিছিয়ে নেই প্রবাসীরা
** বাংলাদেশিদের কাজের ঠিকানা সুলাইবিয়ার ফল-সবজির বাজারও
** পরিবর্তনের দূত মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দিন
** কুয়েতে মানবতার ফেরিওয়ালারা!
** সততা আর নিষ্ঠা থাকলে ঠেকায় কে?
** মরুর বুকে বুকভরা নিঃশ্বাস
** শ্রমিকদের মাথার মুকুট আব্দুর রাজ্জাক
** আরব সাগর থেকে হিমেল বাতাসে ভর করে এলো ছন্দ
** মরুর কুয়েত সবুজ চাদরে ঢাকছেন নাফিস জাহান
** ফেব্রুয়ারিতেই খুলনার মারুফের জীবনে আসছে পূর্ণতা!
** কুয়েতে গুলশান!
** কুয়েতের অ্যাম্বাসেডর!
** জন্ম কুয়েতে, হৃদয় বাংলাদেশের
** সূর্য ওঠার আগেই ঘুম ভাঙে চট্টগ্রামের শাহজাহানের
** ধূসর মরুভূমিতে সবুজ স্বপ্ন!
** ফেসবুক বন্ধ, খুললো জুতা!
** লেট বিমান!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
জেডআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।