ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্পেন

জীবন্ত প্রাণিরাজ্যে ঘোরাঘুরি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫
জীবন্ত প্রাণিরাজ্যে ঘোরাঘুরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

থাইল্যান্ড থেকে ফিরে: ব্যাংককের সাফারি ওয়ার্ল্ড সফর বেশ নাটকীয় অনুভূতির। নানা রসদ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, আর বারবার কল্পনা ছাপিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো বেশ উত্তেজনার।



ব্যাংককের সাফারি ওয়ার্ল্ডকে যদি মনে করে থাকেন শুধু বন্য জীব-জন্তুদের নিরাপদ দূরত্বে থেকে দেখার সুযোগ, তবে আপনি কিছুটা ভুল ভাবছেন। বিভিন্ন সময়ে এই বন্য জন্তুরা এসে যাবে আপনার এতো কাছে যা না দেখলে কল্পনাই করতে পারবেন না। সে বর্ণনায় পরে আসছি।

আগে বলছি, কীভাবে যাবেন সেই সাফারি ওয়ার্ল্ডে? ব্যাংককের যেকোনো জায়গা থেকেই গাড়িতে চেপে যেতে পারেন সেখানে। রিজার্ভ গাড়িও মিলবে শহরের বিভিন্ন এলাকায়, সেই গাড়িই আপনাকে নিয়ে যাবে সাফারি ওয়ার্ল্ডে। তবে থাই সময় সকাল ১০টায় ওয়ার্ল্ডে পৌঁছাতে হবে।

প্রথমে গেটের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে ১২শ বাথ দিয়ে টিকিট কেটে নিন। সঙ্গে চেয়ে নিন সাফারি পার্কের প্রোগ্রাম সিডিউলও। প্রতিদিন প্রতিটা শো একবার করেই হয়। স্থানীয় সময় ১০টা ২০মিনিট থেকে শো শুরু হয়। আর প্রতিটা শো চলে ২০ মিনিট ধরে।

ওয়ার্ল্ডে বিভিন্ন শো শুরু হয়- ওরাং ওটাং দিয়ে। বর্তমানে বিশ্বে শুধু মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে এই ওরাং ওটাং দেখা যায়। ব্যাংককের ওরাং ওটাং শো জগৎ বিখ্যাত।

নানা কারসাজির মধ্যে কখনও পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধাদের মতো এরা বক্সিং করে আবার কখনও বা নানা রকম শারীরিক কসরতও দেখায়।

ভারতে সার্কাসে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ জন্তু-জানোয়ারের খেলা। ঢাকায়ও আর বিশেষ সার্কাসের তাঁবু পড়তে দেখা যায় না। কিন্তু ব্যাংককে ওরাং ওটাং শো যেন হারিয়ে যাওয়া সার্কাসের কথা মনে করিয়ে দিলো। তবে আকারে এই ‘শো’ সার্কাসের শো থেকে একশ’ গুণ বড়।

সাফারি ওয়ার্ল্ডের ‘ডলফিন শো’ এক কথায় অসাধারণ। যন্ত্র সংগীতের সঙ্গে মিলিয়ে ডলফিনদের খেলা পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করে।

এছাড়া শিল মাছের শো, বাঘ ও হাতির সঙ্গে নানা খেলা। আছে ম্যাকাওদের মন মাতানো কসরত। হাজার পাঁচেক দর্শকের সামনে খোলা মঞ্চে এই শো-গুলো প্রতি মুহূর্তে কল্পনার সীমা অতিক্রম করে যায়।

নিশ্চিতভাবে আপনার কল্পনাকে হার মানাবে আরও দুটি শো। একটি ‘কাউ বয় শো’ আর দ্বিতীয়টি ‘স্পেস ওয়ার’।

সিনেমার পর্দায় ‘জেমস বন্ড’ বা হলিউডের অ্যাকশন শো’র মতো  লোমহর্ষক খেলা দেখতে দেখতে হয়তো ভুলেই বসবেন আদৌ বাস্তবে কী এটা সম্ভব!

অথবা বন্ডের গোপন অভিযানের সঙ্গী হওয়ার ইচ্ছা থাকলে কখনও যেন ‘স্পেস ওয়ার’ দেখতে ভুলবেন না।

স্পেস ওয়ারের বর্ণনার আগে যাই, কাউবয় শো’র কথায়। সাফারি ওয়ার্ল্ডের এই ‘শো’টি বিশ্ব বিখ্যাত। হলিউডের বিখ্যাত ‘কাউ বয়’র আদলে এই শো নির্মাণ করা হয়েছে।

ঠিক যেভাবে ‘কাউ বয়’ টুপি পরে গোলাগুলি নিয়ে চমকে দেওয়া লড়াই করতে দেখা যায় সিনেমায়, ঠিক সেভাবে এই ‘শো’র শিল্পীরাও লড়াই চালিয়ে যান। তবে সেখানে নেই কোনো ক্যামেরার কারসাজি।

কোনোভাবে বোঝার উপায় নেই যে, এটা আসল লড়াই নাকি নকল। উপস্থিত দর্শকের মধ্যে থেকেও যেকোনো একজনকে ‘শো’ তে যোগ করা হয়। আমার দেখা ‘শো’ টিতে এক বাংলাদেশি নারীকে হঠাৎ করেই ডেকে নেওয়া হলো। এরপর শুরু হলো একের পর এক মজার কাণ্ড। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই অসম্ভব!

এবার যাই ‘স্পেস ওয়ার শো’র বর্ণনায়। এ যেন সত্যিকারের যুদ্ধক্ষেত্র! চোখে সামনে চলছে গোলাগুলি, ফুটছে বোমা, দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর সেই আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছেন অভিনেতারা।

হলফ করে বলতে পারি-শো’টি একবার দেখলে গোটা জীবনে ভুলতে পারবেন না হেলিকপ্টার আকাশ, জল, স্থলে  এ ‘প্রবল যুদ্ধ’র অভিজ্ঞতার কথা।

মনোমুগ্ধকর শো-গুলো শেষ করে দুপুরের খাবার শেষে ঘুরে দেখতে পারেন আধুনিক মানের চিড়িয়াখানা। আধুনিক বলছি কেন? তাই কী ভাবছেন? তবে বলছি- ধরুন, ঘুরতে ঘুরতে ভাবলেন কোনো পশু-পাখি ভালো লেগেছে।

ছবি তুলে স্মৃতির ফ্রেমে রেখে দেবেন। তবে ঢুকে যান কাচের ঘরে। সেখানে পশু-পাখির কয়েক ইঞ্চি দূর থেকে কিংবা তাদের স্পর্শ নিয়েও তুলতে পারবেন ছবি। এজন্য পর্যটকদের ৪০০ বাথ খরচ করতে হবে।

আপাতত সাফারি ওয়ার্ল্ড ঘোরাফেরা শেষ। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। গাড়ি দিয়ে সাফারি ওয়ার্ল্ড থেকে বের হওয়ার সময় দেখা মিলবে বন্যদের। যাদের এতক্ষণ আপনি দেখেছিলেন খাঁচার ভেতরে, খোলা আকাশে এবার আপনি গাড়ি ‘বন্দি’ মানুষ!
 
ধীর গতিতে গাড়ি এগোবে আর গাড়ির কাচ ভেদ করে চোখে পড়বে বন্যরা। যেন নিশ্চিন্তে হেঁটে চলেছে বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, হরিণ আর গন্ডারের দল। যা এক কথায় অনবদ্য।

সব মিলিয়ে ছয়-সাত ঘণ্টার সাফারি ওয়ার্ল্ড সফর আপনার জীবনের এক অমূল্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫
ভিএস/এমএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।