ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

স্পেন

বাণিজ্য ঘাটতির ঊর্ধ্বগতিতে থাই-বাংলাদেশ সম্পর্ক

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
বাণিজ্য ঘাটতির ঊর্ধ্বগতিতে থাই-বাংলাদেশ সম্পর্ক

ব্যাঙ্কক (থাইল্যান্ড) থেকে: দিন যাচ্ছে আর বাংলাদেশের সঙ্গে বেড়েই চলেছে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বাণিজ্য ও ঘাটতি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের জোট আসিয়ান যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে অগ্রসর হয়নি থাইল্যান্ডসহ বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাতটি দেশের আঞ্চলিক জোট ‘বিমসটেক’।



এদিকে, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়নি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে। বাণিজ্য কূটনীতির অভাবে কাজে লাগানো যায়নি সম্ভাবনাগুলোকেও। ভূ-রাজনৈতিকভাবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে সম্প্রসারিত হয়নি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বাণিজ্য বৈষম্যও।

অর্থনৈতিক তুলনায় বাংলাদেশ থাইল্যান্ড থেকে দুই গুণ পিছিয়ে। আইএমএফ-এর পরিসংখ্যান বলছে, থাইল্যান্ড বিশ্বের ৩২তম অর্থনীতি, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম।

কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ওষুধ, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং পর্যটন শিল্পে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ সম্ভবনাকেও কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। এটি সম্ভবপর হলে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার হতে পারতো থাইল্যান্ডও।

রাজধানী ব্যাঙ্ককে বাংলাদেশ দূতাবাসের অভ্যর্থনায় গিয়ে চোখে পড়ে, একটি শো-কেসে সাজানো রয়েছে সিরামিক ও বেশকিছু ওষুধপণ্য।

কিন্তু সেটা কেবল সাজানো পর্যন্তই। থাইল্যান্ডের কাছে তুলে ধরা যায়নি, বাংলাদেশি পণ্যের গুণগত মান। বিনিয়োগে আকর্ষণ করা সম্ভব হয়নি থাই বিনিয়োগকারীদের।

তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে বাণিজ্য দূতিয়ালি কেমন চলছে থাইল্যান্ডে! উত্তরটা জানিয়ে দেয়, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার অব থাইল্যান্ডের পরিসংখ্যানই।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৪৩ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, সেখানে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়েছে সাতশ ৪১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। দু’দেশের মধ্যে এই বিশাল বাণিজ্য ঘাটতিতে অস্বস্তি কেবল বাংলাদেশেরই!

থাইল্যান্ডে মূলত পাট ও পাটজাতীয় পণ্য, তৈরিপোশাক ও কৃষিজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। এর বেশির ভাগই অপ্রচলিত। বিপরীতে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে চাল, প্লাস্টিক, সুতা, কাপড়, সালফার, স্টোন, প্লাস্টারিং সামগ্রী, চুন, কাগজ, রাবার প্রভৃতি পণ্য।

পরিসংখ্যান আরো বলছে, থাইল্যান্ড বাংলাদেশের ১০ম শীর্ষ আমদানিকারক দেশ। দু’দেশের মোট বাণিজ্য এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হলেও এর মধ্যে বাংলাদেশের ভাগ্য কেবল আমদানিরই। তাই, বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ আকাশ ছোঁয়া।

থাইল্যান্ডের বিজনেস কমিউনিটির নেতা আজিজুল হক বাংলানিউজকে জানান, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক গভীর করতে পারলে বাংলাদেশেরই লাভ, যার মধ্য দিয়ে  আসিয়ান বাজারে প্রবেশ করতে পারবে বাংলাদেশ। তবে চ্যালেঞ্জও অনেক। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির বড় কারণ পণ্যের মান ও সীমাবদ্ধতা।  

তিনি জানান, তৈরিপোশাক খাতে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের  প্রতিদ্বন্দ্বী। সে কারণে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানিই এখন প্রধান ভরসা। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে থাই প্রধানমন্ত্রী ইনলাক সিনাওয়াত্রার বাংলাদেশ সফরকালে ৩১ দফা যৌথ ঘোষণায় ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ তথা ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

উভয় দেশ ফসল, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়। দুই দেশের মধ্যে সড়ক ও জাহাজ যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষেও আকর্ষণীয় প্রণোদনা ও উদার বিনিয়োগনীতির সুযোগ গ্রহণ করে অবকাঠামো খাত, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উত্পাদনসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে উভয়পক্ষ একমত হয়।

বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার সময়টি ঘনিয়ে এসেছে। তবে গত আড়াই বছরে সেই লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে, তা স্পষ্ট হয়ে যায়, বাণিজ্য ঘাটতির পরিসংখ্যানে।

কিন্তু কেন?
রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের মধ্য নভেম্বরে যোগ দিয়েই আমি গুরুত্ব দিয়েছি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মিশনে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী জেনারেল টানাসক পাটিমারেগন, বাণিজ্যমন্ত্রী চক্রমন পাচুকাভিনিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে থাইল্যান্ডে রফতানি বাড়াতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, ‘উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ’ হওয়ায় বাংলাদেশকে বাজার সুবিধা দেওয়া উচিত থাইল্যান্ডের। তৈরিপোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ ও রাসায়নিক পণ্যসহ অনেক পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছি।

আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বাইরে থেকে থাইল্যান্ড যেসব পণ্য আমদানি করে, তার মধ্যে কী কী পণ্য উত্পাদন ও সরবরাহের সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের, তা খুঁজে বের করতে হবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বিনিময় এবং জনগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বাড়ানোর ওপরও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

আমরা একে অপরের সামর্থ্য ও চাহিদার বিষয়গুলো বিনিময় করছি। দেশের মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ পিএম গ্রুপের বিনিয়োগ সমঝোতা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাইএক্সিয়ালি ওরিয়েন্টেড পোলিপ্রোপিলেন ফ্যাক্টরি স্থাপনে বাংলাদেশে থাইল্যান্ড ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটা কিন্তু একটা বিশাল অর্জন। তার বাইরে থাইল্যান্ডের কাছে ২৫টি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত কোটা চেয়েছিলাম আমরা। ইতোমধ্যে, ১০টি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়েছে, থাইল্যান্ড। এটাও কম অর্জন নয়, যোগ করেন রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম।

তবে বাণিজ্য ঘাটতির ঊর্ধ্বগতিতে এই দুটি অর্জন ব্যবধানকে কতটা কমিয়ে আনবে, সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়!

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।