ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লন্ডন

ব্রিটেনে বাংলাদেশি দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৬

লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৯ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
ব্রিটেনে বাংলাদেশি দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৬ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লন্ডন: ব্রিটেনের লিডস শহরে বাংলাদেশিদের বিবাদমান দু’ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয় জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় বাংলাদেশি একটি কমিউনিটি সেন্টারের নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে জড়িত থাকার দায়ে ১৩ জনকে আটক করে পরে জামিনে ছেড়ে দেয় স্থানীয় পুলিশ।

শনিবার (৩০ মে) স্থানীয় সময় দুপুরে লিডসের হেয়ারহিল রোডে ওই কমিউনিটি সেন্টারে নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মেলন (এজিএম) চলাকালে এ সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩০০ সদস্যের অংশগ্রহণে সম্মেলন চলাকালে আবুল আবেদিন নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সম্মেলন বন্ধ করার দাবিতে হট্টগোল শুরু করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় সম্মেলন বন্ধে হুমকি-ধামকি দিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে আবুল উদ্ধত আচরণ করলে উপস্থিত অন্য অংশ বাধা দেয়, এতে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এসময় পুলিশ দু’পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষে অন্তত ছয় জন আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য, কোনো চার্জ ছাড়াই এদের অধিকাংশকে জামিনে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

সংঘর্ষের সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশি কমিউনিটি সেন্টারের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আফজাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এজিএম চলাকালে বর্তমান বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স’র সদস্য আবুল আবেদিনের হট্টগোলে এই সংঘর্ষ হয়।

তিনি বলেন, আগামী ৩ জুন নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার এজিএম চলছিল। কিন্তু আবুলের নেতৃত্বে হঠাৎ করে একটি গ্রুপ এসে এজিএম বন্ধ করার জন্যে অশালীন ভাষায় হুমকি-ধামকি দিতে শুরু করলে উপস্থিত সেন্টার সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে শুরু হয় সংঘর্ষ।

আফজাল জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্যাচমেন্ট এরিয়া লিডস-৭, ৮ ও ৯ এলাকায় বসবাসরতরাই বাংলাদেশি কমিউনিটি সেন্টারের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স’র সদস্য আবুল আবেদিন দীর্ঘদিন আগে লিডস-১৬ এলাকায় চলে যাওয়ায় এবার তার সদস্য পদ নবায়ন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এই জটিলতার অবসান করা যায় কিনা, তা দেখা যাবে, এমন আশ্বাস দেওয়ার পরও আবুল অগঠনতান্ত্রিকভাবে তার সদস্য পদ নবায়নের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে অনড় থাকেন। তার এই অনড় অবস্থানের ধারাবাহিকতাই শনিবারের এই সংঘর্ষ।

এদিকে, বাংলাদেশি কমিউনিটির বিবাদমান দু’গ্রুপের এই সংঘর্ষকে ‘রায়ট’ আখ্যা দিয়ে ফলাও করে খবর প্রচার করেছে মূলধারার ব্রিটিশ মিডিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে এই ফুটেজ সংগ্রহ করেও মূলধারার অনেক মিডিয়া সংবাদ প্রচার করে। সংঘর্ষে জড়িত একজনকে পুলিশ ঘুষি মারছে- এমন ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ায় মিডিয়ায় এ নিয়েও চলছে সমালোচনা।

লিডসে বাংলাদেশি কমিউনিটি সেন্টার স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচালনাধীন বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কাউন্সিল থেকে এটি মাত্র ১ পাউন্ড ভাড়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ৫০ বছরের লিজ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবত এই সেন্টার স্থানীয় কমিউনিটিতে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা এবং কমিউনিটি উন্নয়নে বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিচালনা করে আসছে। কাউন্সিল ও অন্যান্য চ্যারিটি সংস্থা থেকে নিয়মিত অনুদানও পেয়ে থাকে সেন্টারটি। সেন্টার ভবনের উপরতলা ভাড়া দিয়ে বার্ষিক ৫০ হাজার পাউন্ড আয়ও করে প্রতিষ্ঠানটি। সেন্টার পরিচালনায় পেইড স্টাফ হিসেবে কাজও করছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজন। এই মুহূর্তে সেন্টার তহবিলে আছে প্রায় ৯৫ হাজার পাউন্ড। স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এমন একটি সম্ভাবনাময় সেন্টার নেতৃত্বের কোন্দলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে কিনা-এনিয়েই এখন শংকিত কমিউনিটির সাধারণ বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।