ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

লন্ডন

লন্ডনে ১০ম কারি অস্কার

ব্রিটেনেই শেফ তৈরি করতে হবে-ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সৈয়দ আনাস পাশা,লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৪
ব্রিটেনেই শেফ তৈরি করতে হবে-ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাটারসি এভোলিউসন থেকে: ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (হোম সেক্রেটারি) থেরেসা মে বলেছেন ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা সেক্টর কারি ইন্ডাস্ট্রিকে এখন আর অভিবাসীদের ওপর নির্ভর করলে চলবে না, ব্রিটেনেই এখন দক্ষ শেফ তৈরি করতে হবে।

কারি অ্যাওয়ার্ড এর দশম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন কারি ইন্ডাস্ট্রিকে বর্তমান স্বর্ণযুগে প্রবেশ করাতে এর সাথে জড়িতদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।

এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতাদের এখন আর অভিবাসী নির্ভর নয়, দক্ষ ও পেশাদার শেফ এবং কর্মচারী ব্রিটেনেই তৈরি করতে হবে, কারি ইন্ডাস্ট্রির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতেই এটি এখন সময়ের দাবি।
 
সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় সাউথ ইস্ট লন্ডনের বাটারসি এভোলিউসন এ অস্কার খ্যাত ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের দশম অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের পরিচালক জাস্টিন আলীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলীও বক্তব্য রাখেন। ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম যোগান দাতা কারি ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে কারি অ্যাওয়ার্ড প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এই ইন্ডাস্ট্রির কর্মচারী সংকট সমাধানে এশিয়ান দেশগুলো থেকে কর্মচারী আনার সুযোগের দাবি জানালে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিবাসী আইনের কঠোরতাকে অভিবাসী প্রত্যাখ্যান হিসেবে না দেখে দক্ষ লোকজন যাতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হতে পারে এ বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে।

দক্ষ অভিবাসীকে ব্রিটেন সব সময়ই স্বাগত জানায় জানিয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাইলি স্কিল অভিবাসীদের সাথে ব্রিটেনেই যাতে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে ওঠে তার লক্ষ্যে ২ মিলিয়ন শিক্ষানবীস তৈরির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে সরকার।

দিল্লীতে সরিয়ে নেয়া ভিসা প্রসেসিং সিস্টেম আবারও ঢাকা ফিরিয়ে আনার এনাম আলীর দাবির জবাবে পরিষ্কার কিছু না বলে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,ভিসা প্রসেসিং এখন খুব দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে এবং নির্ধারিত সময় ১৫ দিনের মধ্যেই আবেদনকারীরা ভিসা পেয়ে যাচ্ছেন।

ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের জন্মলগ্ন থেকেই তাঁর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে থেরেসা মে বলেন,এই ইভেন্টসটিকে এখন বলা হয় কারি অস্কার।

একটি পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল এই ইন্ডাস্ট্রি আজ ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম বড় যোগানদাতা সেক্টর। এই সেক্টরের সাথে জড়িতদের উৎসাহ দিতে আজ থেকে ১০ বছর আগে যে কারি অ্যাওয়ার্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিলো,

তা আজ কারি অস্কার হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে, এটি সারপ্রাইজিং কোন বিষয় নয়, এটি বাস্তবতা। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাব যেভাবে ব্রিটিশদের কাছে জনপ্রিয়, ঠিক তেমনি কারিও এখন ব্রিটিশ জনগণের মূল খাবার হিসেবে স্বীকৃত।

এই কারি ব্রিটিশদের পুরো খাদ্যাভ্যাসই বদলে দিয়েছে। রানী ভিক্টোরিয়াও ছিলেন কারি ও ডালের প্রতি আসক্ত একজন ব্রিটিশ।

কারি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে এই ইন্ডাস্ট্র্রির সাথে সরকার এক সাথে কাজ করবে এমন আশ্বাস প্রদান করেন থেরেসা মে। অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও বিরোধী দলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড ভিডিও ম্যাসেজ প্রদান করেন।

ভিডিও ম্যাসেজে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন কারি ইন্ডাস্ট্রিকে ব্রিটিশ জনগণের ঐক্যের মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

কারি ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস বর্ণনা করে ভিডিও ম্যাসেজে ক্যামেরন বলেন আজ থেকে প্রায় ২শ’ বছর আগে ভারতীয় নাগরিক দীন মোহাম্মদ ইন্ডিয়ান খাবারের সাথে ব্রিটিশদের যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, সেই পরিচয় এই জাতীর খাদ্যাভাসই বদলে দিয়েছে। কারিবিহীন একটি সপ্তাহ আজ কল্পনাও করে না কোন ব্রিটিশ নাগরিক।

কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলীর নাম উল্লেখ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড ব্রিটিশদের কাছে এখন কারি অস্কার হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম এই জোগানদার ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্ন সম্ভাবনা নিয়ে আজ থেকে ১০ বছর আগে যে ইভেন্টস শুরু হয়েছিলো, আজ এটি কারি ইন্ডাস্ট্রির মহীরুহে পরিণত হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে ভিডিও ম্যাসেজে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এ দেশকে অনেক দিয়েছেন, আপনাদের এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত স্বপ্ন সম্ভাবনায় সরকার আপনাদের পাশে থাকতে চায়।

বিরোধী দলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডকে ব্রিটেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইভেন্টস হিসেবে মন্তব্য করে বলেন, মাল্টি কালচারাল ব্রিটেনের মূলধারায় এটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক ইভেন্টস।

কারি অস্কার খ্যাত এই ইভেন্টেসের ১০ বর্ষপূর্তিতে কারি ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পৃক্ত সকলের প্রতিনিধি শুভেচ্ছা জানান।

প্রখ্যাত বিবিসি সাংবাদিক কেইট সিলভারটন এবং মূলধারার খ্যতিমান কমেডিয়ান, অভিনেতা ও লেখক সানজি বসিং কলির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত জমকালো এই অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের প্রতিটি অঞ্চলের রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্য থেকে সেরা রেস্টুরেন্ট নির্বাচিত করে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদনকৃত রেস্টুরেন্টগুলো থেকে মোট বাছাইকৃত ১০০ রেস্টুরেন্ট থেকে এই সেরা রেস্টুরেন্টগুলো নির্বাচিত করা হয়।

এবারের আসরে অংশ নেয় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিংহভাগ কারি রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও আছেন শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানি রেস্তোরাঁর মালিক। অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে বেশ কয়েক দফা বিচার কাজ শেষে ১১টি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আর বিশেষ অবদানের জন্য প্রবীণ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব সামসুদ্দিন খানকে দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও ব্রিটিশ মন্ত্রী, এমপি, মেয়র সহ দেশ-বিদেশের প্রায় ১৮শ‘ বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের বিশেষ ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি ছাড়াও বিখ্যাত তারকাদের অংশগ্রহণে নাচগান সহ নানারকম পরিবেশনা ছিলো অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ফাঁকে ফাঁকে।

উৎসবটি কাভার করতে উপস্থিত ছিলো বিবিসি, স্কাই, আইটিভি, আইটিএন, এনডিটিভি, জিও, এনটিভি, চ্যনেলআই, এটিএনবাংলা-সহবিশ্বের প্রায় ৭০টি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি।

উল্লেখ্য, প্র্রতি বছর ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ৩.৬ বিলিয়ন পাউন্ড যোগানদাতা কারি ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্ন-সম্ভাবনা সামনে রেখে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এনাম আলী এমবিই ২০০৫ সালে এই ইভেন্টসটি চালু করেন। এই ইভেন্টসের মাধ্যমে প্রায় তিন দশক ধরে যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পকে তুলে ধরছেন তিনি। অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘পেছনের নয়টি আসরের দিকে তাকালে গর্ব করে বলতে পারি বাংলাদেশ তথা কারি শিল্পের বিকাশে সফলতার পথেই হাঁটছি। যুক্তরাজ্য তথা বিশ্বময় কারিশিল্পের জন্য কিছু একটা করতে পারছি। আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারছি যুক্তরাজ্যের মূলধারার অর্থনীতি-রাজনীতির সঙ্গে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।