চলে গেলেন বিশিষ্ট চিত্রকর বিজন চৌধুরী

রক্তিম দাশ, ব্যুরো চিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৬:৫৬, মার্চ ১৭, ২০১২

কলকাতা : প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট চিত্রকর বিজন চৌধুরী। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত ব্রঙ্কো নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় প্রথমে তাঁকে হুগলী জেলার উত্তরপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮২ বছর বয়সে শুক্রবার সেখানেই থেমে গেল তার জীবনের রথ। এদিন দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে মারা গেছেন বিজন চৌধুরী।

বিজন চৌধুরীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শিল্পী ও সংস্কৃতিমহল। যদিও শিল্পীর শেষ বিদায়লগ্নে দেখা গেল রাজনীতির আমরা-ওরার বিভাজন। দীর্ঘ কয়েক দশক চারুকলা পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন বিজন চৌধুরী। পরিবারের সদস্যরা তাই দেহ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন চারুকলা পর্ষদে। কিন্তু আদ্যন্ত বামপন্থি চিত্রশিল্পীর দেহ চারুকলা পর্ষদে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার। ছবি আঁকায় বাঙালির শিল্প ভাবনা জগত্সভায় যাঁরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার মধ্যে উজ্জ্বল নাম বিজন চৌধুরী। সেই নক্ষত্র এবার নিভে গেল।  

অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলায় ১৯৩১ সালে জন্মেছিলেন বিজন চৌধুরী। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রং-তুলি, ক্যানভাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলেছিলেন নিজের মনকে। কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। ঢাকার গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন।

দেশ-বিদেশ, সর্বত্র সমাদর পেয়েছে তার ছবি। প্যারিসে মিনিয়েচার পেন্টিংয়ের প্রদর্শনী করেছেন। আবার কখনও ভারতীয় মিউজিক হয়ে উঠেছে তাঁর ছবি আঁকার বিষয়। সম্মানও পেয়েছেন অনেক। অবনীন্দ্র পুরস্কার, উইলিয়াম কেরি অ্যাওয়ার্ড। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পান বিজন চৌধুরী।

কলকাতা বিমানবন্দর, যুবকেন্দ্র, পোর্ট কমিশনারের কার্যালয়, কলকাতা শহরের নানা জায়গায় তার তৈরি ম্যুরাল এখনও শিল্পের গরিমার অভিজ্ঞান হয়ে আছে। আদ্যন্ত বামপন্থি বিজন চৌধুরী ছিলেন সোস্যাইটি অফ কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস্ অ্যান্ড ক্যালকাটা পেন্টার্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

১৯শ’ বাহাত্তর-তিয়াত্তরের অশান্ত সময়ে তার বালির বাড়ির স্টুডিওতে হামলাও হয়। বিজন চৌধুরীর অভিযোগ ছিল, তৎকালীন শাসকদলের সমর্থকরাই ওই হামলা চালিয়েছিলেন। ঘটনার পরে কলকাতা চলে আসেন তিনি। স্টুডিও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বীরের প্রত্যাবর্তন নামে ছবির একটা সিরিজ এঁকেছিলেন। এমন প্রতিবাদী শিল্পীর মৃত্যুতেও থাবা বসাল রাজনীতির আমরা-ওরার বিভাজন।

দীর্ঘ কয়েক দশক চারুকলা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন বিজন চৌধুরী। কয়েক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বও সামলেছেন সেখানে। তাই বাড়ির লোক চেয়েছিলেন, শেষবার সেখানে দেহ নিয়ে যেতে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে অনুমতি মেলেনি। এমনকি চারুকলা পর্ষদে দেহ রাখার জন্য শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথাও জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকারের তরফে কোনো উত্তর মেলেনি।

তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মৃত্যুর পর চারুকলা পর্ষদের তরফে কোনো শোকবার্তা বা ফুল পাঠানো হয়নি। ফলে শোকের আবহেও দুঃখজনকভাবে উঁকি দিল রাজনীতির মেরুকরণ।

বাংলাদেশ সময় : ১৪৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭,২০১২

সম্পাদনা :  নজরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান