ঈদ বিনোদনের সব স্রোত মিলেছে পদ্মায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:১৬, মে ৪, ২০২২

রাজশাহী: প্রমত্তা পদ্মা। তবে তার সেই ভয়াল রূপ এখন আর নেই। কিন্তু এরপরও শুষ্ক মৌসুমে মরা পদ্মা সমান প্রিয় রাজশাহীর মানুষের কাছে। মহানগরের বড়কুঠি থেকে বুলনপুর ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া। দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে পদ্মার পাড়। রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃক পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য বাড়ানোর পর এ পদ্মাপাড় আরও মনরোম হয়ে উঠেছে।

তাই অন্য সময় তো বটেই ঈদেও রাজশাহীবাসীর জন্য বরাবরই বিনোদনের শ্রেষ্ঠ ঠিকানা এ পদ্মাপাড়। নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে তাই ঈদের দ্বিতীয় দিন বিনোদন পিপাসুদের ঢল নেমেছে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে।

সকাল নেই, দুপুর নেই, আজ সব সময়ই ভিড়। তাই আরও বেশি প্রাণচাঞ্চল হয়ে উঠেছে রাজশাহীর পদ্মার পাড়। মানুষের বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে। উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারছেন। কাটাতে পারছেন ঈদের অখণ্ড অবসর। কারণ রাজশাহীর সবকিছুই পদ্মাকে ঘিরেই। গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কিংবা শরৎ, সব ঋতুতেই পদ্মা নদীকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা।

গ্রীষ্মে শুকিয়ে কাঠ পদ্মা আর বর্ষায় জলে টইটম্বুর, বছরের সব সময়ই তাই রাজশাহীর মানুষকে কাছে টানে বিশাল এ পদ্মার পাড়। আর ঈদের মতো উৎসব হলে তো কথাই নেই। বিনোদন পিয়াসীদের কাছে সেরা ঘোরাঘুরির স্পট হিসেবে প্রথম পছন্দ পদ্মাপাড়। ঈদের দিন বৃষ্টিস্নাত থাকায় অনেকে আসেননি। তবে আজ এ পদ্মার পাড় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিনোদন প্রেমীদের পদচারণায়। রোদ ওঠায় শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী মানুষেরই উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে দুপুরের পর থেকে।

পদ্মা নদীর প্রবাহমান সেই জোয়ার, কলকলিয়ে পানির শব্দ, মাঝিদের গান সবই আজ অতীত। এরপরও নদীর কূলে এখনও শুধু তারুণ্যের জয়গান। রাজশাহীর বিনোদনের সব স্রোত মিশে একাকার হয়ে যায় পদ্মা নদীর তীর ঘিরেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত অবধি পদ্মা নদীর কূলে মানুষের আনাগোনা থাকছে। আর তারুণ্যের ঢেউ রাজশাহীর পদ্মা নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটারজুড়ে।

বর্ষার সময় ভরা পদ্মার নৈসর্গিক রূপে মানুষের টান থাকে সর্বক্ষণ। সারাদিন হৈ চৈ, আনন্দে মাতামাতি, ছোট ছোট নৌকায় পাড়ি দেওয়া এ নিয়ে এখন মুখরিত পদ্মা নদীর পাড়। পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন জমজমাট। মানুষের আনাগোনায় মুখরিত নদী পাড়ে তাই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বাণিজ্যকেন্দ্র। বুলনপুর এলাকায় ‘আড্ডা’ সেখান থেকে পেরিয়ে সামান্য এগোলেই চোখে পড়ে ‘টি-বাঁধ’। তার পাশেই ছোট পরিসরে পার্ক তৈরি করেছে বিজিবি। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বহিনোঙ্গর’ আর ‘নোঙ্গর’। হাল্কা সব ধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে এখানে। সেইসঙ্গে ছোট ছোট আমবাগানের ফাঁকে ফাঁকে বসার স্থান রয়েছে। এখানে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এখানে নদী ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে ‘গাঙচিল’ নামে ছোট আকারের নৌকা। রাতের আঁধারে রঙিন নিয়ন আলোয় আরও ফুটে ওঠে এ স্পটের চেহারা।

আর ‘বহিনোঙ্গর’ ও ‘নোঙ্গর’ পেরিয়ে অল্প সামান্য হাঁটা পথ পেরুলেই চোখে পড়ে সুদৃশ্য গ্যালারি সমৃদ্ধ মুক্তমঞ্চ। এটি লালন শাহ পার্ক। আঁকাবাঁকা সিঁড়ির মতো সাজানো-গোছানো গ্যালারিতে বসে অনায়াসে দেখা যায় পদ্মার অপরূপ রূপ। পাল তোলা নৌকার কলকলিয়ে ছুটে চলার অনুপম দৃশ্য না থাকলেও স্রোতস্বিনী পদ্মার বয়ে চলার দৃশ্য মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এ পার্কের দেখভাল করে। এখানে যেকোনো বড় অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে বিস্তৃত মুক্তমঞ্চ। এ লালন শাহ পার্ক পেরিয়ে এগিয়ে গেলে অদূরেই রয়েছে হযরত শাহ মখদুম (রহ.)-এর মাজার। নদীর পাড় ঘেঁষে এ মাজারের অবস্থান। মাজার জিয়ারত কিংবা পরিদর্শনে এসে এক পলকের দেখা মেলে পদ্মা নদীর। মাজার সড়কের এপারেই নদীর ঘাট পর্যন্ত সুরম্য সিঁড়ি করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। বর্ষাকালে এখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া মেলে পদ্মার স্বচ্ছ পানি।

এরপর মাজার শরীফ থেকে সোজা পূর্বদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় মানুষের জটলা। তরুণ-তরুণীদের হৈ চৈ, আড্ডা। সঙ্গে পাখির কিচির মিচির শব্দও কানে ভেসে আসে। এটি পদ্মা গার্ডেন। মিনি পার্কও বলা যায় এটিকে। সকাল থেকে বিকেল এ পার্ক তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে।

এখানেও রয়েছে বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান। ছায়া ঢাকা নদীর পাড় ঘিরে সব বয়সী মানুষের মিলনমেলা এটি। পদ্মা পাড়ের বড়কুঠি ঘিরে গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের কয়েকটি হোটেল। চা-কফি কিংবা স্ন্যাকস সবই মেলে হাতের কাছে। আর সুউচ্চ কাঁচের ঘরে বসে নদী দেখতে চাইলে সেখানেই রয়েছে পাঁচতলা কফি বার। কফির কাপে চুমুক আর উঁচু থেকে নদী দেখার সুযোগ মেলে এখানেই।

বাবা জামিল আহমদের সাখে বেড়াতে আসা ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে বর্ষা আহমদ জানায়, পদ্মাপাড়ে বেড়াতে তার কাছে ভিষণ ভালো লাগছে। সে ফুচকা খেয়েছে, পেয়ারা খেয়েছে। কিনেছে বেলুনও। এখনে আসার পর ঈদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ মনে হচ্ছে তার কাছে। মহানগরের সুলতানাবাদ এলাকা থেকে আসা আরাফ, সিফাত ও সাগর জানান তারা সবাই বন্ধু। ঈদ উৎসব চলছে। কিন্তু সব কিছুর চেয়ে পদ্মা নদীর পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নির্মল বাতাস তাদের বেশি ভালো লাগছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২২
এসএস/আরবি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান