বাবুরহাটে এবারের ঈদে ২ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট 

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৩:০১, এপ্রিল ১৯, ২০২২
ক্রেতাদের পদচারণায় জমজমাট বাবুরহাট, ছবি: বাংলানিউজ

ক্রেতাদের পদচারণায় জমজমাট বাবুরহাট, ছবি: বাংলানিউজ

নরসিংদী: করোনার কারণে বিগত দুই বছর সেভাবে ব্যবসা হয়নি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দুই বছর পর উৎসবের আমেজ ফিরেছে দেশীয় কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটে। 

বাবুরহাটের ব্যস্ততা নতুন নয়, সারা বছরেরই চিরচেনা চিত্র। তবে ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে বাবুরহাটের বাবুদের বাবুগিরি। দরজায় কড়া নাড়া ঈদের কাপড় কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভিড় জমিয়েছেন বাবুরহাটে। হাটের প্রতিটি অলি-গলি ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারনায় মুখর। তবে চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে কাপড়ের মূল্য বেড়েছে অনেক। ফলে ভাটা পড়ছে বিকিকিনিতে। করোনার কারণে গত দুই বছর ব্যবসা ভালো না হলেও এবারের ঈদে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আশা ব্যবসায়ীদের। এবার ঈদকে ঘিরে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৩৪ সালে জমিদার হলধর সাহা প্রায় ১১ একর জমির ওপর হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে এ হাটে পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান আছে। এক সময় কেবল  রোববারেই হাট বসত। এখন সপ্তাহে তিনদিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদকে সামনে রেখে পুরো সপ্তাহ এখন চলছে কেনাবেচা।

দেশীয় কাপড়ের অন্যতম পাইকারি বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি কাপড়, শাটিন কাপড়, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড় থেকে শুরু করে গামছা-সব কিছু তৈরি হয় স্থানীয় তাঁত ও সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। একই সঙ্গে দেশের প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানি, কাতানসহ বিভিন্ন  ধরনের কাপড় বাবুরহাটের সংগ্রহকে করেছে সমৃদ্ধ।

দেশীয় তৈরি প্রায় সব ধরনের কাপড় মেলে এ বাজারে। ঈদ উপলক্ষে বাজারের ছোট বড় প্রায় পাঁচ হাজার দোকানে নিত্য নতুন ডিজাইন করা পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে থেকেই জমে উঠেছে পাইকারি বেচাকেনা, চলবে আগামী ২০ রোজা পর্যন্ত।

এ হাট ঘিরে নরসিংদী জেলাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল। একই সঙ্গে কয়েকশ’ সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান।

এ হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদের কাপড় কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভিড় জমিয়েছেন বাবুরহাটে। থরে থরে সাজানো কাপড় থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর কাপড়ের মূল্য কিছুটা বেশি।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে বাবুরহাটে কাপড় কিনতে এসেছেন সুশান্ত সাহা। তিনি বলেন, দেশীয় কাপড়ের জন্য বাবুরহাট সারাদেশে বিখ্যাত। কাপড়ের গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে ক্রেতাদের কাছে এখানকার কাপড়ের চাহিদা অনেক। বাবুরহাটে একই জায়গায় হরেক রকমের কাপড় পাওয়া যায়। যার ফলে একাধিক হাটে না গিয়ে আমরা বাবুরহাট থেকেই সব কিছু কিনতে পারছি। প্রতি ঈদেই বাবুরহাট থেকে কাপড় নিয়ে ব্যবসা করি।

তবে এবার আগের বারের তুলনায় হাটে কাপড়ের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন পাইকারি ক্রেতারা। 

মুন্সিগঞ্জ থেকে কাপড় কিনতে এসেছেন আবদুল আলী খাঁ। তিনি বলেন, প্রতিটি কাপড়েই ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। যার কারণে আমরা যেই পরিমাণ কাপড় কেনার লক্ষ্য নিয়ে হাটে এসেছিলাম, ততটা কিনতে পারিনি। তারপরও ঈদে এখানকার কাপড়ের চাহিদা থাকার কারণে তিন লাখ টাকার কাপড় কিনেছি।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থেকে হাটে এসেছেন আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে সহজেই আমরা হাট থেকে সহজেই কাপড় নিয়ে যেতে পারি। আর কাপড় সুলভ মূল্যেই পাওয়া যায়। তবে এবার দাম একটু বেশি। তারপরও আশা করছি এবারের ঈদের বিক্রির মাধ্যমে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

মামুন মিয়া নামে আরেকজন পাইকারি ক্রেতা বলেন, কাপড়ের যে দাম বেড়েছে, তা বিক্রির সময় ক্রেতাকে বোঝাতে পারছি না। তারা কম দামেই কিনতে চান। কিন্তু আমরা বেশি দামে নিয়ে তো কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।

এ বছর ঈদকে সামনে রেখে নতুন নতুন ডিজাইন ও বাহারি নামের কাপড় এনেছে বিক্রেতারা। তবে জনপ্রিয়তায় ও বিক্রিতে সব কাপড়কে ছাড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগে ভুবন বাদ্যকরের ভাইরাল হওয়া গান ‘কাঁচা বাদাম’ এর নামানুসারে রাখা কাঁচা বাদাম থ্রি-পিছ। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছে আলোচিত হিন্দি সিনেমা ‘পুষ্পা’ এর নামানুসারে দেওয়া পুষ্পা থ্রি-পিছ। পাইকারি হাটে এসব থ্রি-পিছ ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
 
হাটের মেসার্স সিদ্ধেশ্বরী বস্ত্রালয়ের মালিক কমল সাহা বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে পাইকাররা হাটে না আসায় আমরা দোকানই খুলতে পারিনি। এবার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় হাটে পাইকাররা ভিড় করছেন। যার কারণে আমাদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। দোকানের মালামালও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, এবারের ব্যবসা দিয়ে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

স্বপন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এবার কাঁচা বাদাম থ্রি-পিছ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। সবার কাছে পরিচিত নাম ও ডিজাইন ভালো হওয়ার কারণে পাইকাররা তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। তবে সুতার দামের কারণে কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বিক্রি করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও বিক্রি ভালোই হচ্ছে।

আনাছ আলী নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কাপড়ের মজুদ রয়েছে। কিন্তু অস্থিতীশীল সুতার বাজারের কারণে কাপড় তৈরিতে খরচ বেড়ে গেছে। যার কারণে আগের বারের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম একটু বেশি। যার ফলে দামের কারণে পাইকাররা তাদের চাহিদার তুলনায় কম কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

একই সঙ্গে এবারের ঈদে বৈচিত্র্য এসেছে পুরুষের অন্যতম পোশাক লুঙ্গিতে। নানা নাম ও বাহারি ডিজাইনের লুঙ্গির দাম ১০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। দীর্ঘদিন পর এবারের ঈদের বিকিকিনিতে সন্তুষ্ট সবাই। 

আমানত শাহ লুঙ্গির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেলাল মিয়া বলেন, এবার লুঙ্গির ডিজাইনে আমরা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। প্রায় ১০০ ডিজাইনের লুঙ্গি ঈদের জন্য বাজারে এসেছে। আমরা পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এসব ডিজাইনের লুঙ্গির চাহিদাও আশানুরূপ। পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের লুঙ্গি যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। 
 
বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মাস্টার বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর এবার ব্যবসার অবস্থা ভালো। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের উপস্থিতিতে বাজার এখন সরগরম। প্রতি সপ্তাহেই বাজারে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। যা ঈদের মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার কোটি থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ঘর পাড় করবে। এবার হাটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে ধারাবাহিকভাবে সুতার দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে কাপড়ের দামে। সুতার দাম যদি স্থিতিশীল থাকত, তাহলে কাপড়ের দাম কম হতো। ফলে বিক্রি আরও বাড়ত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
এসআই


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান