
দিনাজপুর: আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো দিনাজপুর জেলার যুদ্ধাপরাধী ও গণকবর-বধ্যভূমির তালিকা অসম্পূর্ণ বলে অভিযোগ উঠেছে।
দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তৈরি করা এ তালিকায় জেলার ৫৫৬ জন যুদ্ধাপরাধী ও ৫৬টি গণকবর-বধ্যভূমির নাম রয়েছে। তবে একাত্তরের জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি ও বর্তমান জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমের নাম এ তালিকায় নেই।
বাংলানিউজের এ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু সংশোধিত তালিকায় আবুল কাশেমের নাম যোগ করা হয়েছে দাবি করলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা পড়া তালিকায় ওই নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি জেলা প্রশাসক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে কোনো দায় নিতেও অস্বীকার করেছেন।
এদিকে নবাবগঞ্জ, কাহারোল, বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলা থেকে কোনো যুদ্ধাপরাধীর তালিকা পাওয়া যায়নি। কাহারোলে পাওয়া যায়নি কোনো গণকবর-বধ্যভূমি।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১২ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দিনাজপুর জেলার যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার-আলবদর-আলসামসদের তালিকা প্রস্তুত ও শনাক্ত করার চিঠি পাঠানো হয়।
ওই সময় দিনাজপুর পুলিশ সুপারের বিশেষ শাখা, জেল সুপারের সংরক্ষিত তালিকা, জেলা প্রশাসকের গোপনীয় শাখা, জুডিশিয়াল শাখা ও রেকর্ড রুম থেকে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য ও তালিকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দিনাজপুর জেলা থেকে ৪৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
এরপর ২০১১ সালের ১০ মার্চ আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কার্যালয় থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জেলার যুদ্ধাপরাধী ও গণকবর-বধ্যভূমির তালিকা চিহ্নিত করে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই নির্দেশ অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার যুদ্ধাপরাধী ও গণকবর-বধ্যভূমির তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ নির্দেশের পর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তারা নিজ উপজেলার প্রকৌশলী, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সমন্বয়ে কমিটি করে যুদ্ধাপরাধী আর গণকবর-বধ্যভূমির তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠান।
প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী জেলার ১৩ উপজেলার ৯টি থেকে ৫৫৬ জন যুদ্ধাপরাধী ও ১২টি থেকে ৫৬টি গণকবরের তালিকা পাওয়া যায়।
তালিকা অনুযায়ী ৫৫৬ জন যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে দিনাজপুর সদরে ৬০, চিরিরবন্দরে ১৪২, বিরামপুরে ২, বীরগঞ্জে ৭৩, পার্বতীপুরে ১৬০, খানসামায় ৬৩, ফুলবাড়ীতে ৩২, হাকিমপুরে ২ ও ঘোড়াঘাটে ২২ জনের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে।
তবে তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২ শতাধিক এরই মধ্যে মারা গেছে।
নবাবগঞ্জ, কাহারোল, বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলা থেকে কোন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা পাওয়া যায়নি।
৫৬টি গণকবর-বধ্যভূমিগুলো হলো- সদরে ৪, হাকিমপুরে ৩, বিরামপুরে ৪, ফুলবাড়ীতে ৩, বিরলে ৫, ঘোড়াঘাটে ৬, বোচাগঞ্জে ২, চিরিরবন্দরে ৬, খানসামায় ৩, পার্বতীপুরে ১২, বীরগঞ্জে ৪ ও নবাবগঞ্জে ৪টি।
কাহারোল উপজেলা থেকে কোন গণকবর-বধ্যভূমির তালিকা পাওয়া যায়নি।
প্রাপ্ত তালিকা ২০১২ সালের জানুয়ারিতে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন বইয়ে প্রকাশিত ১৯৭১ সালের জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি ও বর্তমান জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমের নাম যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় নেই।
এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রথম তালিতায় আবুল কাশেমের নাম না দেওয়া হলেও পরে তা যোগ করে সংশোধিত তালিকা পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে কোন ভুলত্রুটি রাখা হয়নি।
তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো তালিকায় আবুল কাশেমের নাম পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথমে সদর উপজেলার ৬১ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা পাঠানা হয়েছিল। পরে সংশোধন করে ৪৭ নং ক্রমিকের নাম (শহরের মুন্সীপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে রুস্তম আলী) বাদ দিয়ে ৬০ জনের চূড়ান্ত তালিকা দেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের নিয়ে কমিটি গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে প্রশাসনের কিছু করার নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তালিকায় আবুল কাশেমের নাম রয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।’
এদিকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি উলফাতুর রহমান কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিগত চার দলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন দপ্তরে রক্ষিত বিভিন্ন নথি নষ্ট করা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দালাল আইনে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতারকৃত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার-আলবদর-আলসামসদের তালিকা কৌশলে বিনষ্ট করেছে তৎকালীন জেলা প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১২