ভোলার চরাঞ্চলে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৩:২০, ডিসেম্বর ২১, ২০২১

ভোলা: ভোলার চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাঁস পালন। বাহারি রংয়ের নানা প্রজাতির এ হাঁস পালনে ভাগ্য বদল হয়েছে অনেক খামারির।

দুর্গম চরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বা সুবিধা মত স্থানে খামার তৈরি করে হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়েছেন চরের মানুষ। মাঠে ঘাটে দেখা যায় হাঁসের ঝাক।

চরের মাঠ-ঘাটে, খাল-বিল, ডোবা বা ফসলের ক্ষেতে হাঁস চড়ানো হয়। সেখানেই দল বদলে ছুটে চলে শতশত হাঁস। খাবার সংগ্রহ করে আবার দিন শেষে খামারে ফিরে আসে দলবেঁধে। খামারিরা হাঁস পালন করে বেশ খুশি।

অল্প পরিশ্রমে বেশী লাভবান হওয়ায় হাঁস পালনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

চরের খামারিরা জানালেন, চরে হাঁসের খাবার এবং হাঁস চড়াতে কোন ঝমেলা নেই।  তবে রয়েছে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তাই হাঁস পালনে অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন। হাঁসও পালন করে অনেকেই হয়েছেন সামলম্বী। দারিদ্রতা দূর করে অনেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের।

ভোলা সদরের দুর্গম জনপদ চর চটকি মারাসহ বেশ কয়েকটি চরে দেখা যায় হাঁস পালনের ধুম। অধিকাংশ ঘরেই রয়েছে হাঁসের খামার। হাঁস থেকে উৎপাদিত ডিম বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন খামারিরা।

খামারিরা জানান, হাঁস পালন যেমনি সহজ তেমনি রয়েছে ঝুঁকিও। একবার মড়ক দেখা দিলে তা কাটিয়ে উঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যথাযথ পরিচর্যা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খামার এবং হাঁসের প্রতি বাড়তি নজরদারি রাখলে রোগের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হাঁস পালন করে দু’একজন লোকসান গুনলেও বেশীরভাগ খামারি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। লাভবান হচ্ছেন তারা। এতে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। এক জনকে দেখে অন্য জনও ঝুঁকে পড়ছেন হাঁস পালনে।

সারা বছরই হাঁস পাল করা যায় তবে শীতের সময় হাঁস এবং হাসের ডিমের চাহিদা বেশী থাকায় এসময়টাতে হাটবাজারে হাসের  জমজমাট কেনা-বেচা হয়ে থাকে।

ভোলা সদরের চর চটকিমারা সরেজমিন ঘুরে খামারিদের খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরে এখন বেশীরভাগ জমির ধান কাটা শেষ তাই ধানের ক্ষেতে হাঁস পালনে ঝামেলা নেই। এছাড়া খাল- বিল ও ডোবায় সামুক, ঝিনুকসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁস , তাই হাঁসের খাবারের জন্য ধান ছাড়া অন্য কোন বাড়তি জামেলা বা খরচ নেই। চরে হাঁস পালনে নানা সুবিধা থাকায় হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন অনেকেই।

চর চটকিমারা এলাকার হাঁসের খামারি আ. হাই বলেন, আগে আমি ওকরাইত (অন্যের জমিতে বসবাস) থাকতাম। অন্যদের হাঁস পালন দেখে আমিও হাঁস পালন শুরু করি। এরপর আর আমাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। হাঁস পালন করেই এখন আমি সাবলম্বী। এখন আমার ১৩ শতাংশ জমিতে নিজের ঘর হয়েছে। বাজারে জমি কিনে একটি দোকান দিয়েছি, কিছু টাকা ব্যাংকেও আছে। ৩ ছেলে-মেয়ে এবং পরিবার নিয়ে খুবই ভালো আছি। ১৩ বছর ধরে হাঁস পালন করে আসছি। হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল হয়েছে আমার। খামারে বর্তমানে ৩০০ হাঁস আছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়াবো। আমাকে দেখে অনেকে ঝুঁকে পড়েছেন হাঁস পালনে।

একই এলাকার হাঁসের খামারি মোসলে উদ্দিন জানান, আগে আমার খামারে  ২'শ ছিলো, এখন ৪০০ হয়েছে। এরমধ্যে ১০০ হাঁস ডিম দেয়। ওই ডিম বাজারে বিক্রি করি। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা খরচের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য খরচে ব্যায় হচ্ছে।

খামারি ইউসুফ ফরাজি বলেন, খামারে ৪০০ হাঁস আছে। হাঁস পালন করে লাভবান হয়েছেন অনেকেই।

আবুল কালাম ও কামাল হোসোন বলেন, আমাদের চরে ৮ টি হাঁসের খামার রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো আছেন, ভাগ্য বদল হয়েছে তাদের। অনেকে ঝুঁকে পড়ছেন হাঁস পালনে।

ভোলা জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল জানান, ভোলা জেলায় ৩৬২ টি হাঁসের খামার রয়েছে। এর বেশীরভাগ খামার চরে। এ বছর হাঁসের কোন মড়ক নেই। তাই খামারিরা বেশ ভালো আছেন। চরের খামারিরা দেশী জাতের হাঁসের পাশাপাশি খাকী ক্যাম্পবেল এবং জিনডিং প্রজাতির হাঁস পালন করে থাকেন। এসব হাঁসের ডিম উৎপাদন বেশী। দিন দিন হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
এনএইচআর


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান