জন্মনিয়ন্ত্রণে চাই স্থায়ী পদ্ধতি

ডা. মালিহা শিফা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:৫১, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২

ঢাকা : বিশ্ববাসী এখন এক সন্তানের প্রতি ঝুঁকেছে। এমনকি কোন কোন দেশে জন্ম হার শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে।

কিন্তু আমাদের দেশে এখনও অধিকহারে এবং অধিক সংখ্যক শিশু জন্ম দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে সুখ ও শান্তিতে থাকতে প্রয়োজন সচেতনতা এবং যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত।

এজন্য যারা আর সন্তান নিতে চান না এবং যারা মনে করেন তাদের পরিবার এখন পূর্ণ। কেবল তাদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকরী ও সুবিধাজনক।

মনে রাখা প্রয়োজন পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের ক্ষেত্রে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়।

নারীদের বন্ধ্যাত্বকরণ:
এটাকে লাইগেশন বলা হয়। নারীদের ক্ষেত্রে লাইগেশন একটা অত্যন্ত কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। ডিম্বনালী গর্ভাশয় থেকে জরায়ুতে ডিম্বানু পরিবহন করে। তাই ডিম্বানালীকে কেটে বেঁধে দিলে ডিম্বাণু জরায়ুতে আসতে পারে না।

এক্ষেত্রে খুবই ছোট একটা অপারেশনের মাধ্যমে ইউটেরাসের টিউব বন্ধ করে দেয়া হয়। জরায়ু নালি বন্ধ করায় শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে না। ফলে গর্ভধারণের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

সুবিধা:
এ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- হরমোনাল পদ্ধতির মতো এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের ভয় না থাকায় সহবাসে আনন্দ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আর কোন পদ্ধতি গ্রহণের ঝামেলা থাকে না। গর্ভবতী হলে মৃত্যু ঝুঁকি আছে এমন নারীর জন্য এই পদ্ধতি খুবই প্রযোজ্য। আর সন্তান না চাইলে এই অপারেশন খুবই ভালো।
 
ইমপ্ল্যান্ট(নারী)/বন্ধ্যত্বকরণের নতুন পদ্ধতি:
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীদের বন্ধ্যাত্বকরণে নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ছোট একটা মেটালিক ইমপ্ল্যান্ট জরায়ু নালিতে স্থাপন করা হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ক্যাথেটারের সাহায্যে এ ইমপ্ল্যান্ট যোনিপথ দিয়ে উভয় জরায়ু নালিতে বসিয়ে দেন। ইমপ্ল্যান্ট জরায়ু নালিকে ব্লক করে। ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। তবে এ ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের তিন মাস পর্যন্ত অন্য কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হয়। তিন মাস পর বিশেষ পদ্ধতিতে এক্সরে করে দেখা হয়, ইমপ্ল্যান্ট সঠিক স্থানে এবং কার্যকর অবস্থানে আছে কি না।

পুরুষ বন্ধ্যাত্বকরণ:
পুরুষদেরকে স্থায়ীভাবে বন্ধ্যা করতে যে পদ্ধতিটির সাহায্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হয় তাকে ভ্যাসেকটমি বলা হয়। পুরুষ বন্ধ্যাত্বকরণ বা ভ্যাসেকটমি খুবই সহজ ও কার্যকর একটি স্থায়ী পদ্ধতি। এক্ষেত্রে শুক্রনালির পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।

শুক্রাশয়ের এক পাশে ছোট একটি জায়গা অবশ করে শুক্রনালি পথ কেটে দুই প্রান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। ছোট্ট এই অপারেশনের পরপরই বাড়ি চলে যাওয়া যায়।

মনে রাখতে হবে ভ্যাসেকটমি করার সাথে সাথেই এটি কার্যকরী হয় না। অপারেশনের পর ঝুঁকিমুক্ত হতে কমপক্ষে ২০ বার বীর্যপাত হওয়া প্রয়োজন। কারণ শুক্রনালীর যেখানে বাঁধা হয়েছে তার উপরে স্পার্ম বা শুক্রাণু থাকতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না ডাক্তার একেবারে নিশ্চিত হতে না পারবে, ততোদিন পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য পদ্ধতি যেমন কনডম ও ফোম অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।

তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন ভ্যাসেকটমি অপারেশনে এই যৌন ইচ্ছা বা যৌন আবেদনময়তার তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না। ভবিষ্যতে আর কোনো সন্তান নেবেন না এটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে ভ্যাসেকটমির সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কারণ ভ্যাসেকটমি অপারেশন করানোর পরে কেউ যদি আবার পূর্বের শুক্রানালীর অবস্থা ফিরে পেতে চায় বা সন্তান চায়, তবে তাঁর অবস্থাকে আগের ঠিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ সময়ই সম্ভবপর হয় না।

তাই ছেলে হোক আর মেয়ে হোক দু’টি সন্তানই যথেষ্ট, এই শ্লোগানকে মনে রেখে আপনার ভবিষ্যতকে সুখী ও সমৃদ্ধশীল করতে এখনিই পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। দু’জনের সম্মতিতেই সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরিকল্পনানুযায়ী এগিয়ে যাবেন।  

ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস

বাংলাদেশ সময় : ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান