
করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হচ্ছে রায়েরবাজার কবরস্থানে | ছবি: জিএম মুজিবুর রহমান
ঢাকা: একদিকে কবর খুঁড়ছেন, অন্যদিকে লাশ দাফন হচ্ছে। কবরের পর কবর খুঁড়ে একটু বিশ্রামের ফুরসত পাচ্ছেন না গোরখোদকরা।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র। দুই শিফটে ২৮ জন গোরখোদক কাজ করেও কাজ ফুরাচ্ছে না তাদের। এপ্রিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় অনেক ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে রায়েরবাজার কবরস্থানের গোরখোদকদের।
কবরস্থানের সরদার লিয়াকত আলী সরকার বলেন, গত বছর করোনায় মৃত অনেকের লাশ দাফন করেছি। মাঝে কিছু কমেছিল, এখন আবার করোনায় মৃতদের লাশ দাফন করা হচ্ছে বেশি।
তিনি বলেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে এখানে কর্মরত আছি। কিন্তু করোনার সময় যত মানুষের লাশ দাফন করেছি, এর আগে এমন কখনো হয়নি। এত মানুষের মৃত্যু আগে কখনো দেখিনি।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১০টি সরকারি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন হচ্ছে রায়েরবাজার কবরস্থানে।
মিজানুর রহমান নামে এক গোরখোদক দীর্ঘদিন ধরে কবর খুঁড়ছেন রায়েরবাজার কবরস্থানে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে এই কবরস্থানে কবর খুঁড়ছি। আগে কখনো একসঙ্গে এত লাশ দাফন করতে দেখিনি। একদিকে খুঁড়ে শেষ করছি, আরেক দিকে দেখছি লাশ দাফন হচ্ছে। এসব মৃত ব্যক্তির সবাই করোনা রোগী। চারপাশে যত কবর আছে সব করোনা রোগীর। এখানে শুধু করোনা রোগীদের দাফন করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে পুরোটা ভরে গেছে। নতুন নতুন লাইনে কবর খুঁড়ছি আর করোনা রোগীর লাশ দাফন করা হচ্ছে।
রায়েরবাজার কবরস্থানের আট নম্বর ব্লকের পুরোটা বরাদ্দ করা হয়েছে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করার জন্য। এই ব্লকে একের পর এক লাশ দেখে অবাক হচ্ছেন গোরখোদকরাও। আগে কখনো এত লাশ একসঙ্গে দেখেননি তারা। আর এত কবরও খুঁড়তেও হয়নি তাদের।
এ বিষয়ে লিয়াকত আলী সরকার বলেন, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত লাশ আসে অ্যাম্বুলেন্সে করে আট নম্বর ব্লকে। প্রতিদিনই কমবেশি ১০টি লাশ এই ব্লকে দাফন করা হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত চারটি মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। আরও তিনটি আসার কথা আছে। বেলা যত গড়ায় লাশের সংখ্যাও তত বাড়ে। গতকালও এই ব্লকে দাফন করা হয়েছে নয়টি লাশ।
রায়েরবাজার কবরস্থানে দেখা যায়, করোনা রোগীর মৃতদেহ নিয়ে নির্ধারিত ব্লকে অ্যাম্বুলেন্স আসে, মৃতদেহের সঙ্গে আসেন হাতেগোনা কয়েকজন। একদিকে যখন একটি লাশ দাফন চলছে, সেই কবরটির পাশেই চোখে পড়ে সারি সারি কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে লাইন ধরে। গোরখোদকরা ক্লান্তি কমাতে প্রথমে কবর খোঁড়া হয় মেশিনে। তারপর সেগুলো শাবল আর কোদাল দিয়ে ঠিক করে রাখেন গোরখোদকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয় মরদেহ দাফনের কাজ। মোনাজাত শেষে চলে যায় অ্যাম্বুলেন্স ও মৃতদেহের সঙ্গে আসা অন্যান্যরা। তবে গোরখোদকদের শাবল-কোদাল চলতেই থাকে!
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও রায়েরবাজার কবরস্থান সূত্রে জানা গেছে, এ কবরস্থানের ৮ নম্বর ব্লকটিতে কেবল করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিলে করোনায় মৃত প্রায় ১৫০ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত এক হাজার একশো জনের বেশি দাফন হয়েছে ৮ নম্বর ব্লকে।
গোরখোদকরা জানান, ৮ নম্বর ব্লকে অন্তত ১০টির বেশি কবর আগে থেকেই খুঁড়ে রাখা হচ্ছে। মেশিন দিয়ে এই কবরগুলো খোঁড়া হয়। এপ্রিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন আগের চেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের। এই কবরস্থানে যে ২৮ জন গোরখোদক রয়েছেন। প্রতিদিন দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। সচরাচর রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করেন তারা। তবে লাশ এলে মধ্যরাতেও দাফনের কাজ চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২১
এইচএমএস/এমজেএফ