পাহাড়ে পানির সংকট তীব্র

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১০:০০, এপ্রিল ৭, ২০২১

খাগড়াছড়ি: পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট পুরনো। তবে গেলো কয়েক বছর ধরে পানির সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়।  এবারও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে এলাকায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ করছে।
 
মূলত দুর্গম এলাকায় নলকূপ না থাকায় স্থানীয়রা ঝরনা, ঝিরি, ছড়া, কুয়াসহ প্রাকৃতিক পানির উৎসব খাওয়া থেকে ঘরের দৈনদিন কাজে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যায়। এতে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। যদিও তাও পর্যাপ্ত নয়।
 
খাগড়াছড়ির কমবেশি সবখানে পানির সংকট থাকলেও লক্ষ্মীছড়ি, মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরেজমিনে জেলা সদরের ঠাকুরছড়ার দুল্লাতলী, কলাপাড়া, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ৮ মাইল যৌথখামার, কারবারি পাড়া, আমতলী এবং ৯ মাইল এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কয়েকমাস ধরে তীব্র পানি সংকটে রয়েছে। খাওয়া, গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পাচ্ছে না তারা।প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো মূলত ঝিরি, ছড়ার পানির উপর নির্ভরশীল। ছড়ায় কূপ খনন করে কিংবা পাহাড় থেকে চুইয়ে পড়া পানির মুখে বাঁশ বসিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করতো। যা দিয়ে খাওয়া, রান্নাবান্নাসহ সংসারের দৈনদিন কাজ চলতো। তবে এখন প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে পানি নেই। উৎসগুলো অনেকটা মৃত। বর্তমানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোঁটা ফোঁটা পড়া পানিগুলো সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা।
 
জেলা সদরের ঠাকুরছড়ার দুল্লাতলী এলাকার বাসিন্দা জ্ঞান ত্রিপুরা জানান, আগে গ্রামের পাশে ঝিরি এবং কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করতাম। কিন্তু সেখানে এখন পানি নেই। তাই গ্রামের লোকজন প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনে। একই এলাকার খনিময় ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এলাকায় নলকূপ নেই। খাওয়াসহ সংসারের দৈনন্দিন কাজের জন্য ছড়া, কুয়ার পানি ভরসা।
 
সারাদিন জুমচাষে ব্যস্ত থাকা জুমিয়ারা এখন দিনের অর্ধেক সময় ব্যয় করছেন পানি সংগ্রহে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে তারা। বৈশ্বিক পরিবর্তন, অতি খরা, অব্যাহতভাবে গাছপালা কেটে ফেলার কারণে প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কয়েকটি টিউবওয়েল, রিংওয়েল থাকলেও শুরু থেকে সেগুলোও
অচল।দীঘিনালার জোড়াব্রিজ এলাকার বাসিন্দা ফাল্গুনি চাকমা বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানির গতি কিছুটা বাড়লেও শুষ্ক মৌসুমে পানির গতি একদম কমে যায়। তখন দুর্ভোগের আর শেষ থাকে না। এই সময় অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
 
মূলত বৈশ্বিক পরিবর্তন, অতি খরা, গাছপালা ধ্বংস করার কারণে ছড়া-ঝিরি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির জন্য পাহাড়কে সবুজায়ন করে রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এখনকার নদী-খাল মৃত প্রায়। উজাড় হচ্ছে বন। কারণে অকারণে গাছপালা কাটা হচ্ছে। পুরো জেলায় বয়স্ক বন নেই বললেই চলে। আগে শুষ্ক মৌসুমে পানির সমস্যা থাকলেও এখন বছরজুড়ে খাবার পানির সংকট লেগেই থাকে। সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। 

তিনি প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
 
তবে এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে সময় চান।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২১
এডি/এএ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান