সরকার উৎখাতে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার চেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে: সেনাসদর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৫:৪৪, জানুয়ারি ১৯, ২০১২

ঢাকা: গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে জানিয়েছে সেনাসদর। এরই অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বরে একটি অভ্যুত্থান চালানোর চেষ্টা চলে। তবে তা আগেভাগেই নস্যাৎ করে দিয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

এই ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা ১৪ থেকে ১৬ জনের বেশি নয়। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তারা রয়েছেন বলে জানায় সেনাসদর। এছাড়াও রয়েছে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি। এ ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত দুই সামরিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনাসদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর বাহিনীর পার্সোনেল সার্ভিসেস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক এসব কথা জানান। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আইএসপিআর এর ডাকা ওই জরুরি সংবাদ সম্মেলনটি শুরু হয় বেলা তিনটার দিকে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর আরও বেশ কিছু পদস্থ কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক জানান, গত ডিসেম্বরে একজন অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কিছু বিভ্রান্ত কর্মকর্তা ওই অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালান। গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের এ ঘটনায় লে. কর্নেল এহসান ইউসুফ (অব.) ও মেজর জাকিরকে (অব.) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। একই ঘটনায় ষড়যন্ত্রকারী অপর এক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক পলাতক রয়েছেন বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ।

জেনারেল মাসুদ বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সরকারের অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যখন বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের মধ্য দিয়ে একটি গুণগত মানের সমৃদ্ধ বাহিনী হিসেবে সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টারত, ঠিক তখনই অতীতে গণতন্ত্র ধ্বংসের বিভিন্ন ‘অপশক্তি’ দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রীয় শক্তি ‘সেনাবাহিনী’র ওপর সওয়ার হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
তারা নিকট ও দূর অতীতের ন্যায় এবারও ধর্মান্ধের অনুভূতির অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করেছে। এই ঘৃণ্য চক্রান্তকারীদের দোসর হয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অতিমাত্রায় কট্টর এবং পারিবারিক বন্ধন, চাকরি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিবর্গ।

মেজর জেনারেল কামরুজ্জামান প্রসঙ্গে
এই ক্যু বা অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে মূলত মিড লেভেলের (মধ্যম সারির) অফিসাররা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে আলোচিত ওই অভ্যত্থান চেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবহিনীতে কর্মরত একজন মেজর জেনারেলও জড়িত আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে মিডিয়া নিশ্চিত হয়। এ প্র্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ব্রি. জেনারেল রাজ্জাক বলেন, ‘তিনি এখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের লগ এরিয়ায় অবস্থান করছেন।’

জানা গেছে, তাকে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে।

এর আগে ‘অভ্যুত্থানের ঘটনায়’ সেনাবাহিনীর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রধান (জিওসি) মেজর জেনারেল কামরুজ্জামান উধাও হয়ে গেছেন বলে যে গুজব ছড়িয়েছিল, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সপরিবারে অবস্থান করছেন।

তিনি গৃহবন্দি কি না--এই  প্রশ্ন করলে ব্রি. জেনারেল মাসুদ বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে গৃহবন্দিত্ব বলে কিছু নেই।’

চক্রান্তে বিদেশি কোনো রাষ্ট্র জড়িত কি না- প্রশ্নের জবাবে বলা হয়- ‘আমরা কোনো কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছি না।’

ব্রি. জেনারেল মাসুদের লিখিত বক্তব্যের বিবরণ

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ব্রি. জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আগত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও কর্মীবৃন্দ এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ আসসলামুআলাইকুম। দীর্ঘ বহু বছর পর অনুষ্ঠিত সেনাবাহিনী পর্যায়ের শীতকালীন প্রশিক্ষণের শেষ দিনে মাঘের পড়ন্ত বিকেলে আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রাজ্জাক, পরিচালক, পিএস পরিদপ্তর এবং  সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল লে. কর্নেল মুহাম্মদ সাজ্জাদ সিদ্দিক,আপনাদের আজকের সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত জানাচ্ছি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আপামর জনসাধারণের পাশে থেকে দেশে ও বিদেশে প্রশংসা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার অধীনে থেকে, বাংলাদেশ সেনাবহিনী যখন সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত হয়ে সুনির্দিষ্ট ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ এর আওতায় সমর সরঞ্জাম অর্জন ও সুবিন্যস্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে গুণগত মাপের উচ্চ ধাপে উঠতে সদাব্যস্ত, তখনই ঝেড়ে ফেলা অতীত ইতিহাসের ক্রমধারায় আবারও একটি চ্যালেঞ্জিং অধ্যায় অতিক্রম করছে। এই সমায়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করছি।

সম্প্রতি কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ইন্ধনে অবসরপ্রাপ্ত এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত কতিপয় ধর্মান্ধ কর্মকর্তা কর্তৃক অন্যদের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে দূরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার একটি বিফল প্রয়াস চালানো হয়। এই অপপ্রয়াসটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিহত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ভেতরে বিশৃংখলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লে. কর্নেল পদমর্যাদার একজন অফিসার গত ১৩ ডিসেম্বর একজন কর্মরত মেজর পদবীর কর্মকর্তাকে তার ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্ররোচনা দেন। উল্লেখিত কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে তা তার চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এটি অবহিত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর ওই সাবেক কর্মকর্তাকে সেনা আইনে গ্রেফতার করা হয়। সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপর পরিকল্পনাকারী মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক গত ২২ ডিসেম্বর অপর এক কর্মরত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ করে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড তথা সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করার কর্মকাণ্ডে সমৃক্ত হতে প্ররোচনা দেন।

ওই কর্মকর্তাও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ সমাপনান্তে ছুটিতে থাকা মেজর জিয়াউলের ছুটি বাতিল করা হয়। তাকে তার নয়া বদলি আদেশ বাতিল করে ঢাকার সদর দপ্তরের লগ এরিয়ায় যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর বিষয়টি তাকে টেলিফোনে জানানো হলেও তিনি আদেশ পালন না করে আত্মগোপনে চলে যান। মেজর জিয়াউল পলাতক অবস্থায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘সাবভারসিভ’ (নাশকতামূলক) ক‍র্মকাণ্ড চালানোর পাঁয়তারা করেন এবং এখনও করছেন।

এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্ত সুনিশ্চিত তথ্যের ভিত্তিতে অপর একজন মেজর পদবির চাকরিরত কর্মকর্তাকে সরকারের প্রতি অনুগত থাকা থেকে বিরত থাকার জন্য প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে সেনা আইনের ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অপরদিকে, সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের আংশিক তথ্যাদি ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং কিছু ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ ১০টা ৫২ ঘটিকায় পলাতক মেজর জিয়া তাকে তথাকথিত গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সংক্রান্ত কল্পনাপ্রসূত ও অবিশ্বাস্য গল্প বর্ণনা করে একটি উস্কানিমূলক ই-মেইল তার পরিচিতদের প্রেরণ করেন,  যা পরে সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুকে ‘সোলজার্স ফোরাম’ নামক ব্লগ-এ জনৈক আবু সাঈদ আপলোড করেন। পরবর্তী সময়ে ওই অফিসার কর্তৃক ‘মিড-লেভেল অফিসার্স অব বাংলাদেশ আর্মি আর ব্রিংগিং ডাউন চেঞ্জেস সুন’ (Mid-level officers of Bangladesh Army are Bringing Down Changes Soon) এবং ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নতুন বছরের উপহার- মধ্যম সারির অফিসাররা অচিরেই বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন’ শিরোনামে কাল্পনিক ও অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়সমূহ উল্লেখ করে দু’টি ই-মেইল ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন।

এই বিষয়টি গত ০৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে দৈনিক `আমারদেশ` পত্রিকাটি ‘হলুদ সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে দেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াসে পলাতক মেজর জিয়ার ইন্টারনেট-বার্তাটি প্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৮ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে নিষিদ্ধঘোষিত ধর্মান্ধ ‘হিজবুত তাহরীর’ সংগঠন পলাতক মেজর জিয়ার ইন্টারনেটে প্রেরিত বার্তাটিকে ভিত্তি করে দেশব্যাপী উস্কানিমূলক লিফলেট ছড়ায়। তার একদিন পর গত ০৯ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে দেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলও উপরোক্ত মনগড়া, বিভ্রান্তিক ও প্রচারণামূলক সংবাদের সাথে তাল মিলিয়ে সেনাবাহিনীতে ‘গুমের ঘটনা ঘটছে’ বলে অভিযোগ করে। যা সেনাবাহিনী তথা সকল সচেতন নাগরিকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত উস্কানিমূলক বিতর্কের সৃষ্টি করে।

এই সুযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ধন্যবাদ জানাচ্ছে সকল দায়িত্বশীল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে যারা বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক তথ্য পেয়েও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক খবর পরিবেশন না করে পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃত অবসরপ্রাপ্ত দুইজন অফিসার ও অপর চাকরিত অফিসারগণ কর্তৃক প্রদত্ত বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ঘাড়ে ভর করে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাতের অপচেষ্টার সাথে সেনাবাহিনীতে কর্মরত কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট তথ্য এরই মধ্যে উদঘাটিত হয়েছে। কতিপয় বিশৃংখল ও পথভ্রষ্ট সামরিক কর্মকর্তা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে পলাতক মেজর জিয়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে উক্ত ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চক্রান্তে সক্রিয়ভাবে লিপ্ত থাকেন। এই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনের জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং তার কার্যক্রম চলছে।

সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ০৯ জানুয়ারি ২০১২ এবং গত ১০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে পলাতক মেজর জিয়া তার কল্পিত দুটি অপারেশন আদেশ/নির্দেশের কপি ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরিরত বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেন। তাছাড়াও বিগত ১০/১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে পলাতক মেজর জিয়া কর্তৃক বিভিন্ন ফরমেশন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত/অধ্যয়নরত সমমনা বা তাদের দলভুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে প্রণয়নকৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী তথাকথিত সেনা অভ্যুত্থান সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বারবার উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।


একই রাতে পলাতক মেজর জিয়া বর্তমানে বিদেশে (সম্ভবত হংকং) অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক ইশরাক আহমেদ (পিতা- এম রাকিব, দ্বীন মঞ্জিল, গ্রাম-বালুভাড়া, ইউনিয়ন- বারশাইল, থানা ও জেলা- নওগাঁ) এর সাথে কয়েকবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। কথোপকথনে তারা অভ্যুত্থান প্রস্তুতির অগ্রগতি ও এর সম্পাদন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।

এসময় পলাতক মেজর জিয়া তাকে বিদেশে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি প্রচার করার জন্য বলে। এসময় ইশরাক আহমেদ পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনা অভ্যুত্থান বাস্তবায়ন শেষ হলে পুনরায় তাকে অবগত (১০/১১ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখ রাত আনুমানিক ২টায় ফোন করতে বলেন) করার জন্য পলাতক মেজর জিয়াকে নির্দেশ দেন যাতে তিনি কম সময়ের মধ্য বিমানযোগে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারেন। ধারণা করা যায় যে, পরিকল্পিত বিশৃংখলা-পরবর্তী সুবিধা প্রাপ্তির জন্যই ইশরাক আহমেদের বাংলাদেশে আসার এই পরিকল্পনা ছিল।

অপপ্রচার চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে স্বার্থান্বেষী সংবাদপত্র, নিষিদ্ধঘোষিত ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়ে জয়লাভ করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঁধে ভর করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে অতীতে বিভিন্ন অপশক্তি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করেছে কিংবা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার বদনামের দায়ভার বহন করছে।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগতভাবে দক্ষ এবং সুশৃংখল সেনা সদস্যদের বক্তব্য এই যে, ‘আমরা আর এ ধরনের দায়ভার আমাদের সংগঠনের কাঁধে নিতে চাই না।’

সামগ্রিক বিষয়টি দেশে/বিদেশে অবস্থানরত এক শ্রেণীর বাংলাদেশি নাগরিকের মদদে এবং ধর্মান্ধদের অনুভূতিকে পুঁজি করে    চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কতিপয় সামরিক কর্মকর্তার একটি ঘৃণ্য চেষ্টা বলে প্রতীয়মান। এই ব্যক্তিবর্গ সেনাবাহিনী ও দেশের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে স্বার্থান্বেষী মহলের সাথে যুক্ত হয়ে দেশে ও বিদেশে সেনাবাহিনীর ঈর্ষণীয় সাফল্য, উন্নয়ন ও ঐক্যকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বলেও প্রতীয়মান হয়।

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে আলোচ্য চক্রান্তের সাথে জড়িত  চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত ‍কিছু কর্মকর্তা তাদের সম্পৃক্ততার কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন। তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেনাবাহিনীর কষ্টার্জিত ভাবমূর্তিকে অক্ষুন্ন রাখতে এবং সমৃদ্ধির পথকে সুগম করতে এ ধরণের ঘৃণ্য চেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে হবে। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার্থে প্রতিটি সেনাসদস্য আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত। তবে সেনাসদস্যদের আত্মত্যাগের ওপর ভর করে কোনো দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করুক তা কারোরই কাম্য নয়। পলাতক মেজর জিয়ার আইনি নিরাপত্তা ও সঠিক বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার স্বার্থে অনতিবিলম্বে সেনাবাহিনীতে তার আত্মসমর্পণ করা একান্ত অপরিহার্য্। মেজর জিয়ার বর্তমান অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে সকলকে অনুরোধ জানানো হলো।

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসেও এ ধরনের যড়যন্ত্রের বিষয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করেছিল। সেখানেও সেনা কর্মকর্তা এহসান ইউসুফের কথা উল্লেখ ছিল।

বাংলাদেশ সময় ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১২


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান