সমালোচনার মধ্যেই একনেকে উঠছে ‘ঘাস চাষের’ প্রকল্প

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৫৯, নভেম্বর ২৩, ২০২০

ঢাকা: পুষ্টিকর ঘাস চাষাবাদের কৌশল শিখতে ৩২ কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) তোলা হচ্ছে মঙ্গলবার। 

পুষ্টিকর ঘাস চাষ শিখতে ৩২ কর্মকর্তা বিদেশ যাচ্ছেন- এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ওঠে সমালোচনার ঝড়। 

এর আগেও খিচুড়ি রান্না, শুঁটকি তৈরি, উঁচু ভবন দেখা, পুকুর কাটা, খাল খনন, মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন বিষয় শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা হয়।

দেশে গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর ঘাস উৎপাদনের জন্য ‘প্রাণীপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাসের চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ঘাস চাষ শিখতে ৩২ কর্মকর্তাকে বিদেশ সফরে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে খরচ হবে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রত্যেক কর্মকর্তা খরচ বাবদ পাবেন ১০ লাখ টাকা। তারা অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতমনে ঘাস চাষের প্রশিক্ষণ নেবেন। 

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বর্তমানে দানাদার খাদ্য ব্যবহার করে দুধের উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা। ঘাস খাওয়ানোর ফলে দুধের উৎপাদন খরচ কমবে ৩০ শতাংশ। একনেক সভায় মোট ছয়টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নেপিয়ার-এর চার থেকে ৫টি জার্ম প্লাজম দেশে আনা হবে। এগুলো কীভাবে প্রস্তুত করা যায়, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন কর্মকর্তারা। কীভাবে সারা দেশের খামার পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়, ল্যাবরেটরিতে জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ করা যায় সেই বিষয়ে তিনটি দেশে কর্মকর্তারা ১৫ দিন থেকে ১ মাসের প্রশিক্ষণ নেবেন।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, “প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণ মানেই এখন দেখি সবার মধ্যে অ্যালার্জি তৈরি হয়েছে। আসলে ঘাস চাষের প্রশিক্ষণ নিতেই কর্মকর্তারা অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে যাবেন। বর্তমানে দানাদার খাবারে দুধের উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা, ঘাস খাওয়ালে ব্যয় ৩০ শতাংশ কমে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, “দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং খামারিদের লাভবান করতেই এমন উদ্যোগ। খাদ্যের মধ্যে কাঁচা ঘাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ জনসংখ্যায় খুবই ঘন বসতিপূর্ণ। জমির পরিমাণ অল্প। তাই যেখানে মানুষের খাদ্য উৎপাদনেই নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে গবাদির জন্য খাদ্য উৎপাদন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে। তবুও যদি কৃষকভায়েরা দেখেন যে ঘাস উৎপাদনের ফলে তাদের গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ছে এবং এর লভ্যাংশ দ্বারা অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব, তাহলে তারা গবাদিপশু পালনের দিকে ঝুঁকে পড়বেন। আর কাঁচা ঘাস সহজ প্রাপ্য হলে গাভী পালনও সহজতর হবে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে হবে। সেজন্য দরকার ব্যাপকভাবে উচ্চ উৎপাদশীল ঘাস চাষ।”  

অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। খামারি পর্যায়ে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করার মাধ্যমে গবাদি প্রাণীর পুষ্টির উন্নয়ন করা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় খামার পর্যায়ে প্রাণীপুষ্টি উন্নয়ন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও দুর্যোগকালীন গো-খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সাইলেজ প্রযুক্তি গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ।

সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে স্থায়ী জার্ম প্লাজম নার্সারি স্থাপন করাসহ ৮ হাজার ৯৭০টি উচ্চ উৎপাদনশীল উন্নত জাতের স্থায়ী বা অস্থায়ী ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। বিদেশ থেমে আমদানি করা নেপিয়ার-১ জার্মপ্লাজ সম্প্রসারণ করা হবে। বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁচাঘাস সংরক্ষণের জন্য ১৭ হাজার ৯৪০টি খামারে লাগসই প্রযুক্তি (সাইলেজসহ) হস্তান্তর করাসহ অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাসের বীজ বিতরণ, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স খাদ্য এবং কৃমিনাশক বিতরণ, কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট নির্বাচন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

একনেক সভায় এটাসহ মোট ৬টি প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। এছাড়ার খুরশকুল বিশেষ আশ্রয়ন, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থাপন, পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে উপস্থাপন করা হবে। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ও ওয়েস্টার্ন ইকোনোমিক করিডর অ্যান্ড রিজিয়নাল ইনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
এমআইএস/এজে


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান