
রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা। ছবি: বাংলানিউজ
চুয়াডাঙ্গা: যেখানে সেখানে ময়লা বর্জ্য ফেলায় আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা। শহরের বাসাবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানার বর্জ্য সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন জনবহুল এলাকাসহ নদীর পাড়ে ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে করে যেমন হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য তেমনি দুর্ভোগে পড়ছে শহরবাসী।
এছাড়া পৌর এলাকায় নেই যথেষ্ট সংখ্যক ডাস্টবিনের ব্যবস্থা। যেগুলো রয়েছে তাও অযত্ন-অবহেলায় ভেঙে পড়ে সেখান থেকে ছাড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
এদিকে গতবছরে শহরতলীর ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকায় বর্জ্য শোধনের ডাম্পিং স্টেশনের জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে নানা জটিলতায় এখনো শুরু হয়নি ডাম্পিং স্টেশনের কাজ। প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ওই খোলা জমিতেও বর্জ্য ফেলছে পৌরসভা। সেখানেও দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ভোগান্তিতে পড়ছে যাতায়াতকারীরা। তবে চুয়াডাঙ্গা পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ডাম্পিং স্টেশনের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় আট কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করে বর্জ্য শোধানগারের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
৩৭.৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। ৯টি ওয়ার্ডের প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় নেই বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। যার ফলে লাখ লাখ মানুষের অধিক পরিমাণ বর্জ্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফেলা হচ্ছে এসব ময়লা বর্জ্য। সেখানে তৈরি হচ্ছে আবর্জনার স্তুপ। এতে করে দূষিত হচ্ছে পৌর এলাকা ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ প্রকৃতি। এছাড়া শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙা নদীর পাড়ে বর্জ্য ফেলে নদীকে বানানো হচ্ছে ময়লার ভাগাড়।
পৌর শহরের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন বসতবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয় অধিক পরিমাণ বর্জ্য মাথাভাঙা নদীর পাড় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে। এতে করে নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে দূষিত হচ্ছে শহরের প্রতিটি প্রান্ত। দিনশেষে ক্ষতির শিকার হচ্ছে শহরের মানুষেরাই।
মাঝেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা রকিবুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, শহরে বর্জ্য নিষ্কাশনের একটা বিশাল সমস্যার পাশাপাশি যথেষ্ট সংখ্যক ডাস্টবিনের অভাব রয়েছে। ডাস্টবিনের অভাবে বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা খোলা স্থানে ফেলা হয়। যদিও কিছু কিছু স্থানে ডাস্টবিন রয়েছে সেখানেও নেই নিয়মিত তদারকি।
এদিকে শহরে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য গত বছরে ডাম্পিং স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেয় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। তখন শহরতলীর চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকায় তিন একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনো শুরু করা হয়নি ডাম্পিং স্টেশনের কাজ। অথচ সেই খোলা জায়গাতে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই সড়ক দিয়ে হাজারো যাতায়াতকারী।
ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকার চা দোকানি শুকুর আলী বাংলানিউজকে জানান, শহরের অধিকাংশ ময়লা আবর্জনা নিয়ে এসে এই খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এখান থেকেই সৃষ্টি হয় বিকট দুর্গন্ধ। ভোগান্তিতে পড়ে যাতায়াতকারীরা।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সচিব কাজী শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্জ্য শোধনের জন্য একটি শোধনাগার নির্মাণে উদ্যোগ অনেকদিনের। ডাম্পিং স্টেশন গড়ার জন্য গত ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ঘোড়ামার ব্রিজ এলাকায় দুই কোটি ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৩ টাকা দিয়ে তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বেশ কিছুদিন পরে চলতি বছরের আগস্ট মাসে ডাম্পিং স্টেশন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পে সাত কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৪ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। শিগগিরই সব কাগুজে নিয়ম শেষ করে দরপত্র আহ্বান করে ডাম্পিং স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু করার প্রত্যয় রয়েছে।
এসব ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু বাংলানিউজকে বলেন, এখন শহরের জনবহুল এলাকা ও নদীতে আবর্জনা তুলনামূলক কম ফেলা হয়। নির্ধারিত স্থানেই ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। তবে ডাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে শহরের ময়লা আবর্জনার ছিটেফোটাও আর চোখে পড়বে না। তাই আমরা চেষ্টা করছি দ্রুতই কাজ শুরু করার। এছাড়া উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে ডাস্টবিন নির্মাণ প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করি। পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় ডাস্টবিন নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
আরএ