নেই পানি-পোনা, সংকটে ‘সাদা সোনা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:০৯, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
চিংড়ি

চিংড়ি

খুলনা: ‘আমাগে দুর্গতির শেষ নেই। এরই নাম অদৃষ্ট। গত বছর ভাইরাসে সব বাগদা মরে শেষ হয়েছে। ভাবছিলাম এবার তা পোষাতে পারবো। কিন্তু এবার নদীতে পোনা নেই, ঘেরে পানি নেই। যে কারণে এলাকার সগ্গলে (সবার) বাগদা চাষ নিয়ে চিন্তায় আছে।’

মলিন মুখে হতাশার সুরে কথাগুলো বলছিলেন বাগেরহাট জেলার মোংলার চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা গ্রামের মৎস্য ঘের মালিক বিজন বৈদ্য।

তিনি জানান, হ্যাচারিগুলোতে যে পোনা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম বেশ চড়া। আবার অনেক হ্যাচারির পোনা দুর্বল ও ভাইরাসে আক্রান্ত। সময়মতো পোনা না পেলে বাগদার উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

একই গ্রামের বাগদা ঘের মালিক শুকুর আলী জানান, নদীতে যে বাগদার রেণু পাওয়া যেতো, তা এবার পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর পানি কম হওয়ায় ঘেরেও পানি ওঠানো যাচ্ছে না। ফলে যারা রেণু পোনা ধরে জীবনযাপন করতেন তারা এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনীতে চলে গেছেন কাজের খোঁজে। কেউ কেউ ইটভাটায়ও কাজ নিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, দুইজন মিলে ৪শ বিঘা ঘের প্রস্তুত করেছিলেন। এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। হ্যাচারির পোনায় আস্থা রাখতে পারছেন না। এখন তারা কী করবেন ভেবেও পাচ্ছেন না।

একই অবস্থা খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরার বাগদা চাষিদের।

পাইকগাছার শোলাদানার বাগদা চাষি আব্দুল্লাহ জানান, নদীতে পোনা ধরা নিষেধ। হ্যাচারির পোনার দামও বেশি। এখন কী করবেন তার কূল কিনারা পাচ্ছেন না।চিংড়ির ঘেরদাকোপ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বাগদা চিংড়ি চাষি আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাগদা চিংড়ির মা পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণে রেণু পোনা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে ঘেরে চিংড়ি দিতে পারছেন না চাষিরা। পানির ট্যাক্স আগে ছিলো প্রতি লিটার তিন পয়সা। এটা হ্যাচারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রতি লিটার পানির ট্যাক্স করা হয়েছে ১০ পয়সা। ফলে একজন হ্যাচারি মালিকের আগের তুলনায় এক জাহাজ পানি আনতে অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা লাগে। অথচ কক্সবাজারে ট্যাক্স লাগে না। আমরা সুন্দরবনের পাশ দিয়ে যাই বলে বনবিভাগকে ট্যাক্স দিতে হয়। এটা আমাদের ওপর এক ধরনের অবিচার।

খুলনা বিভাগীয় চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রিপন বাংলানিউজকে জানান, বাগদা চিংড়ির রেণুর ব্যাপক সংকট যাচ্ছে। চাহিদার পাঁচ শতাংশের এক শতাংশও পাওয়া যাচ্ছে না। এবার মা-চিংড়ি কম পাওয়ায় রেণুর সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, চিংড়ি চাষের ভরা মৌসুমে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের চিংড়িশিল্প। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, খুলনাঞ্চলে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি চাষে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে আধুনিক প্রযুক্তির আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরুতে বাগদার রেণু পোনার সংকটের কারণে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে চলেছে এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে যে চিংড়িচাষ হয় তা, দেশের মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ। খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বেশ কিছু প্রকল্পও গড়ে উঠেছে। যেখানে আধুনিক উপায়ে চিংড়িচাষ হচ্ছে। এমন কি এ অঞ্চলে চিংড়ির পোনা উৎপাদন হ্যাচারি নির্মিত হয়েছে। বাগদা চিংড়ি রপ্তানি করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে সরকার।চিংড়ির পোনা। ছবি: বাংলানিউজমৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানাচ্ছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৪টিতে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। এর মধ্যে খুলনায় ৩২ হাজার ৮শ’ ৯৬ দশমিক ২ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৪৩০টি ছোট বড় বাগদা চিংড়ি ঘের, সাতক্ষীরায় ৬৬ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৯৩২টি ঘের, বাগেরহাটে ৫১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার ৬৮২টি ও যশোরের ৭৫৮ হেক্টর জমিতে ৮৯৩টি ঘের রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলের দাবি, বাগদা চিংড়ির রেণুর কোনো সংকট নেই। দামও স্বাভাবিক আছে। তবে পানি সংকটের ব্যাপারে কিছু করার নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
এমআরএম/এএটি/এজে


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান