‘চমেকের ডাক্তার নার্সদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৩০, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
উদ্বোধনের পর হাসপাতালের সিসিইউ-২ ঘুরে দেখেন মেয়র  আ জ ম নাছির উদ্দীন

উদ্বোধনের পর হাসপাতালের সিসিইউ-২ ঘুরে দেখেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন

চট্টগ্রাম: ১৩শ’ শয্যার চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন ওয়ার্ড ও আউটডোর মিলে ৬-৭ হাজার রোগীকে সেবা দিতে হয়। এটা কি স্বাভাবিক বিষয়। যেসব ডাক্তার-নার্স এ সেবা দিচ্ছেন তাদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত বলে মনে করি। এখানে জনবল কাঠামোর তুলনায় চিকিৎসক, নার্স, কর্মীর সংকট আছে।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) হৃদরোগ বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিট ‘সিসিইউ-২’ উদ্বোধনকালে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসব কথা বলেন।

মেয়র বলেন, ধারণার ওপর নির্ভর করে সংবাদ পরিবেশন করা আমি মনে করি অস্বাভাবিক। এর দ্বারা মানুষের কাছে ভুল ম্যাসেজ যাচ্ছে। ডাক্তারদের ওপর চাপ তৈরি হয়। যদি শতভাগ নিশ্চিত হন তবে একজন নির্দিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা যায়। ঢালাওভাবে সব ডাক্তারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা উচিত নয়। বিত্তশালী ধনবান, বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার সামর্থ্য আছে কতজনের। বেশিরভাগ মানুষের এদেশের চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করতে হয়। বড় খেলোয়াড়রা সব ম্যাচে ভালো খেলতে পারে না। কারণ স্নায়ুচাপ। একজন ডাক্তার যদি রোগীর সেবা দিতে গিয়ে চাপ অনুভব করেন তবে ভুল চিকিৎসা হতে পারে।

তিনি বলেন, তাহের ব্রাদার্স সিসিইউ-২ ইউনিটে ১৫ শয্যা দিয়েছেন। চমেক হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি অত্যন্ত নিবেদিত। সমিতির কার্যক্রম গতিশীল ও বেগবান করতে তৎপর। হতদরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত রোগীদের কল্যাণে কাজ করছে। উনারা তৎপর না থাকলে গরিবদের সেবা দেওয়া সম্ভব হতো না। আমি এ শহরের আদিবাসী। এখন ৬৩ বছরে পদার্পণ করেছি। আগে রোগী কল্যাণ সমিতি ছিল নামে, এখন কাজে পাওয়া যায়।

চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগ ও রোগী কল্যাণ সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চমেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাসির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রবীর কুমার দাশ, ডা. বাসনা মুহুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, রোগী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ডা. তৈয়ব সিকদার, তাহের ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বশর, পরিচালক মুনতাসির মামুন, চমেক হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা।

আবুর বশর বলেন, সরকারি অনুদানের সঙ্গে এ জনপদের বিত্তশালীদের অনুদান যোগ হলে চমেক হাসপাতালের পরিবেশ, চিকিৎসাসেবা উন্নত হবে। রোগীরা বেশি সেবা পাবে।

ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, মানুষ মানুষের জন্য-এ বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাহের ব্রাদার্স সিসিইউ-২ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের একার পক্ষে কোনোদিন সবকিছু করা সম্ভব নয়। বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে অনেক গরিব রোগীকে সেবা দিতে পারবো। বিএমএ’র পক্ষ থেকে অতীতে যারা অনুদান দিয়েছেন, আইসিইউতে শয্যা ডোনেশন করেছেন, সহযোগিতা করেছেন- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাহের ব্রাদার্সকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।

আইসিইউ’র জনবল কাঠামোর অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইসিইউ’র পোস্ট ক্রিয়েট করতে হবে। ৬টি শয্যা দিয়ে সিসিইউ শুরু হয়েছিল। এখন ৩৩ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল এটি। সিসিইউতে রোগী রেফার করলে সবাই চমেক হাসপাতালে পাঠান। কারণ এখানে সার্ভিস ভালো। ক্লিনিকে রোগী ভর্তি হলে কল দিলে কনসালটেন্ট আসবে। চমেকে কিন্তু ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয়। ৪ হাজার টাকায় এখানে এনজিওগ্রাম হয়। ওপেন হার্ট সার্জারি হয় এখানে। পেসমেকার লাগানো হয়।

বিএমএ’র দুই বারের নির্বাচিত এই সভাপতি বলেন, আমরা কাজ করছি জনগণের কল্যাণের জন্য। চমেক হাসপাতালে ডাক্তারদের কক্ষের সামনেও রোগীকে থাকতে দেওয়া হয়।

চৌধুরী ফরিদ বলেন, চমেক হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামে ১০০ ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ড দরকার। আইসিইউ শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী অকালে মারা যান। সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে। পুরো হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। বারান্দায়ও রোগীদের রাখা হয়েছে। ডাক্তারদের সেকেন্ড গড বলা হয়। আপনারা মানুষের সেবা করবেন। মানুষও আপনাদের পাশে থাকবে।

ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিসিইউ-২, এটা বিশাল কাজ। অনেক বড় বিষয়। চমেকে হার্টের ব্যথা নিয়ে অসংখ্য রোগী আসেন। ঢাকায় আলাদা ইনস্টিটিউট আছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের টেকনাফ পর্যন্ত চার কোটি মানুষের হৃদরোগের জন্য ভরসা এ হার্টের ওয়ার্ড। বাইরের সিসিইউ, আইসিইউগুলো মাত্রাতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে। সিটি মেয়র ও ক্লিনিক মালিক সমিতি উদ্যোগ নিলে এটা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব।

ডা. তৈয়ব সিকদার বলেন, রোগীর সেবার জন্য যার কাছেই হাত পেতেছি খালি হাতে ফিরতে হয়নি। রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে অনেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

বক্তারা বলেন, রোগীবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে চমেক হাসপাতালকে গড়ে তুলতে হবে। সিসিইউতে আগে ১৬টি শয্যা ছিল। প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আরও ১০০ শয্যা হলেও চাহিদা অপূরণীয় থেকে যাবে।

অনুষ্ঠানে মেয়র সিসিইউতে আরেকটি শয্যা অনুদানের ঘোষণা দেন। শেষে রোগী কল্যাণ সমিতির ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন মেয়র।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান