
ঢাকা: তৎকালীন ভারতবর্ষের বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় নিজেকে গবেষণার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। একমাত্র তিনিই প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে। তার আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানুষের ধারণা ছিল উদ্ভিদ জড় পদার্থ মাত্র। তিনিই লক্ষ্য করেন, উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষের মতো উদ্ভিদেরও রয়েছে আবেগ ও সুখ-দুঃখের অনুভূতি।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র ১৯০২ সালে রচনা করলেন ‘Responses in the living and non living’| ১৯০৬ সালে প্রকাশিত তার দুটি গ্রন্থের মধ্যে তিনি প্রমাণ করলেন উদ্ভিদ বা প্রাণীকে কোনভাবে উত্তেজিত করলে তা থেকে একইরকম সাড়া মেলে।
পরে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহকলার মধ্যে তুলনামূলক গবেষণার এ পর্যায়ে তিনি উদ্ভাবন করলেন তার বিখ্যাত যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ। এ যন্ত্রের মাধ্যমে কোনও বস্তুর অতি সূক্ষ্মতম সঞ্চালনকেও বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেখানো সম্ভবপর।
১৯১৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডে তার গবেষণার প্রমাণের জন্য লজ্জাবতী ও বনচাঁড়াল গাছ নিয়ে যান। এ গাছগুলো সহজে সাড়া দিতে পারে। তিনি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, এছাড়া রয়েল সোসাইটিতেও তার উদ্ভাসিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করলেন, জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, তারাও আঘাতে উত্তেজনায় অণুরণিত হয়।
বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই ইলেকট্রিক রেডিয়েশন বিষয়ে গবেষণা করতেন। তিনি আবিষ্কার করলেন কিভাবে বিনা তারে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাধ্যমে শব্দকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো যায়। একই বিষয়ে তখন গবেষণা করছিলেন আমেরিকার বিজ্ঞানী লজ, ইতালিতে মাকোর্নি। কিন্তু বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র এ বিষয়ে ছিলেন অগ্রণী।
১৮৯৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন। বেতার যন্ত্র তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। কলকাতার টাউন হলে জগদীশ যন্ত্রপাতি নিয়ে তৈরি হয়ে আমন্ত্রিত শ্রোতাদের সামনে পরীক্ষা করে দেখান। এর পরেই তিনি বিনাতারে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে নিজের বাসা থেকে এক মাইল দূরে কলেজে সঙ্কেত আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করলেন।
wireless telegraphy সন্বন্ধে তার আবিষ্কার ইংল্যান্ডে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। একটি বিখ্যাত ইলেকট্রিক কোম্পানি তার পরামর্শ মতো কাজ করে wireless telegraphy বিষয়ে প্রভূত উন্নতি করতে সক্ষম হয়। তবে অর্থনৈতিক কারণে জগদীশ চন্দ্রের গবেষণা ব্যাহত হয়েছিল। তাই ১৮৯৬ সালে মার্কনী wireless telegraphy-i প্রথম পেটেন্ট নেন।
চাকরি জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ভারতবর্ষে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি নিজের সমস্ত জীবনের উপার্জিত অর্থ এ প্রতিষ্ঠানে দান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১৭ সালে ৩০ b‡f¤^i জগদীশ চন্দ্রের ৫৯তম জন্মদিনে প্রতিষ্ঠা হয় বিজ্ঞানমন্দির।
এই কিংবদন্তী বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র ছিলেন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
জগদীশ চন্দ্র বসুর মৃত্যু হয় ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১