
নীলফামারী: সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নীলফামারীর ‘দারেয়ানী টেক্সটাইল মিলস’ গত নয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মিলটি পুনরায় চালু হলে প্রায় এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তাই মিলটি চালু এখন স্থানীয় মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মিলের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক যন্ত্রপাতি। মিলের ছাদ ও দেওয়ালে জন্মেছে অসংখ্য আগাছা। সব মিলিয়ে সুতা উৎপাদনের এই দারোয়ানী টেক্সটাইল মিলে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
কৃষি নির্ভর জেলা নীলফামারীর বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি জন্য ১৯৮০ সালের ২৫ এপ্রিল ১০৮ দশমিক ৫২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় এই দারোয়ানী টেক্সটাইল মিলস। ১১ কোটি ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে মিলে স্থাপন করা হয় ২৫ হাজার ৫৬টি টাকু (সুতা উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্র)। ৭০৪ জন শ্রমিক, ৯৭ জন কর্মচারী ও ২৫ জন কর্মকর্তা নিয়ে উৎপাদন শুরু করে মিলটি। সে সময় এখানে ৮০, ৬০, ৪০, ৩২ ও ৩০ কাউন্টের সুতা উৎপন্ন হতো।
শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মিলটি এক সময় বিটিএমসি পরিচালিত মিলগুলোর মধ্যে সেরা মিলে রুপান্তরিত হয়। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছর থেকে ১৯৯১-১৯৯২ পর্যন্ত মিলটি লাভজনক ছিল। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে মিলটি প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মুনাফা করে।
এর পরও বিটিএমসি কর্তৃপক্ষ ১৯৯৬ সালে মিলটিকে বন্ধ ঘোষণা করে। ১৯৯৮ সালে মিলকে সার্ভিস চার্জে দেওয়া হয়। ২০০২ সাল পর্যন্ত সার্ভিস চার্জে চলার পর মিলটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে মিলটি দেখভালের জন্য তিনজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী ও ২৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী দায়িত্ব পালন করছেন।
নীলফামারী নগর দারোয়ানী এলাকার হোসেন মামুদের ছেলে জমির আলী বাংলানিউজকে জানান, দারোয়ানী টেক্সটাইল মিলটি এলাকার উন্নয়নের ধারক ও বাহক। এ মিলকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মিলটি বন্ধ থাকায় এলাকার উন্নয়ন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মিলের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হাবিবুর রহমান জানান, এক সময় শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পদচারণায় মিলটি মুখরিত ছিল। তখন এখানে প্রায় সাত শতাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। চাকরি হারিয়ে সেসব শ্রমিক এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মিলের ব্যবস্থাপক আবু হানিফ বাংলানিউজকে জানান, ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে ইতোমধ্যে অনেক মেশিনে মরিচা ধরেছে। ১৯৭৯ সালে স্থাপিত মিলের মেশিনগুলোর গতি কমে এসেছে। শুরুতে যেসব টাকুর গতি ছিল ১৮ হাজার আরপিএম। এখন সচল সেসব মেশিনগুলোর গতি হয়েছে মাত্র আট হাজার আরপিএম।
তিনি আরও জানান, মিলটি চালু হলে এলাকার প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এলাকার মানুষ জানতে চায়, মিলটি আবার কবে চালু হবে? মিলটি চালু করা এখন এখানকার মানুষের প্রাণের দাবি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১১