১৭৩ বছরে ভারতবর্ষের ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার লুটেছিল ব্রিটিশরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ২২:৪০, ডিসেম্বর ৫, ২০১৮
ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনের চিত্র

ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনের চিত্র

ঢাকা: বণিকের বেশ ধরে এলেও প্রায় ২০০ বছর ভারতীয় উপমহাদেশে শাসনের ছড়ি ঘুরিয়েছিল ব্রিটিশ। সেসময় তাদের বর্বরতা-লুটপাটের শিকার হতে হয়েছিল গোটা উপমহাদেশবাসীকে। শস্য-শ্যামলা হলেও ব্রিটিশ শাসনের কারণে মহাদুর্ভিক্ষও দেখা দিয়েছিল ভারতবর্ষে। ব্রিটিশদের ‘লুটপাটের’ কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু এই প্রশ্ন প্রায় উত্তরহীনই থেকে গেছে যে, দুই শতকে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপমহাদেশ থেকে লোপাট করেছিল ব্রিটিশরা!

এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পাওয়া মুশকিলই বটে। তবু গ্রহণযোগ্য উত্তরের খোঁজে গবেষণা করেছেন ভারতের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ উৎস পটনায়েক। তিনি ঔপনিবেশিক ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এরপর উত্তর দিয়েছেন পটনায়েক।...সম্প্রতি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে পটনায়েক সরাসরি বলেছেন, ব্রিটিশরা এই দুই শতাব্দীতে ভারতীয়দের শোষণ করে ৪৫ ট্রিলিয়ন (৪৫ লাখ কোটি) মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ লোপাট করেছিলেন। যা ছিল ভারতবর্ষের দারিদ্র্য কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড়সড় ধাক্কা।

পটনায়েক বলেন, ব্রিটিশরা ভারতের এতো বেশি বিত্তহরণ করেছিল যে, তারা ৭০ বছর হয়ে গেছে এ দেশ ছেড়েছিলেন, তারপরও এখানে ঔপনিবেশিকতার ক্ষত রয়ে গেছে। ব্রিটেন ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে অর্থাৎ ১৭৩ বছরে উপমহাদেশ থেকে ৯ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন পাউন্ড (৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার) লোপাট করেছে নানাভাবে।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ভারতীয়দের স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ কেড়ে নিয়েছিল ব্রিটেন। এর যথার্থ মূল্য দেওয়ার প্রশ্নই ছিল না ব্রিটিশদের মনে।

পটনায়েকের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯০০ থেকে ১৯৪৫ বা ৪৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ব্রিটেনশাসিত ভারতে মাথাপিছু আয় প্রায় স্থিরই ছিল। ১৯০০ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৯৬ দশমিক ১ রুপি। এরপর ১৯৪৫- ৪৬ সাল বা উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের এক বছর আগ পর্যন্ত মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছিল ২০১ দশমিক ৯ রুপিতে। এই দীর্ঘ সময়ে ভারতবর্ষের মাথাপিছু আয় বেড়েছিল মাত্র ৫ দশমিক ৮ রুপি। কিন্তু এক বছর পরেই যখন ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করলো, তখন অল্প সময়ের ব্যবধানেই দেশের মাথাপিছু আয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়। কিন্তু ব্রিটিশদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশের নিরীহ মানুষকে অতিরিক্ত রাজস্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে যেমন খুশি তেমনভাবে শাসন করেছিল বলে এখনো অর্থনীতি পঙ্গুত্বের বোঝা বইছে।

এই কোম্পানি শাসনামলে দেশে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল; অর্থনীতিতে যে ভাটা পড়েছিল, তার ক্ষত আজও সেরে উঠতে পারেনি ভারত- উল্লেখ করেন উৎস পটনায়েক।

তবে তিনি এও বলেন, ১৯৩০ থেকে ৩২ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ব্রিটিশ ভারতে মাথাপিছু আয় কিছুটা বেড়েছিল। সেসময় ২২৩ দশমিক ৮ রুপিতে গিয়েছিল একজন মানুষের গড় আয়। যদিও পরে ঠিকই ২০০ রুপির কাছে গিয়েই ঠেকেছিল।...প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্রিটিশ কোম্পানির শেষ পর্যায়ের শোষণ যখন ভারতীয়দের কাঁধে এসে পড়ে, তখন দেশের রফতানি বাণিজ্য থমকে গিয়েছিল। অথচ ১৯২৯ সাল থেকে তিন দশক আগেও ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতিতে।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব ব্রিটিশ কোম্পানির হাতে পরাজিত হলে মূলত এই শাসনের সূচনা ঘটে। যদিও ১৭৬৫ সালে বাংলা ও বিহারের দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব সংগ্রহের অধিকার লাভ করে ইস্ট ইন্ডিয়া। এরপর ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ১৮২ বছর ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিল ব্রিটেন।

দীর্ঘ এই সময়ে ব্রিটিশরা ভারতে নানা উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন প্রথার বিলোপ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ মানুষের জীবনমান নিয়ে ভাবলেও মূলত রাজস্ব আদায় করে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলেছিল তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
টিএ/এইচএ/


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান