
ঢাকা: জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৭ ধাপ পিছিয়ে ১৪৬ অবস্থানে এসেছে। যদিও মানব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রকাশিত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) চলতি বছরের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের এ অবস্থান দেখা যায়।
গত বছর বাংলাদেশ বিশ্বে ১২৯তম স্থানে ছিল।
মানব উন্নয়ন রিপোর্টে ইউএনডিপি প্রধানত তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নেয়। এগুলো হলো- স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা।
মানব উন্নয়ন সূচকে শ্রীলঙ্কা ৯৭, মালদ্বীপ ১০৯, ভারত ১৩৪, ভুটান ১৪১, পাকিস্তান ১৪৫ চেয়েও পেছনে। তবে নেপাল ১৫৭ ও আফগানিস্তান ১৭২ শুধু বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে।
ইউএনডিপি ও ডিক্যাব যৌথ আয়োজিত এ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির বাংলাদেশি কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টেফান প্রিসনার।
ইউএনডিপি’র ওই রিপোর্টে প্রথম অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
১৮৭টি দেশকে যে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ লো হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বা কম মানব উন্নয়ন অংশে রয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান নিচে। তবে নেপালের চেয়ে ভালো।
দক্ষিণ এশিয়ায় মানব উন্নয়ন সূচকের গড় অবস্থান ৫ দশমিক ৪ হলেও বাংলাদেশের গড় ৫ দশমিক শূন্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর বাংলাদেশ ভালো অবস্থান নেবে। বিশেষ করে, চলতি বছর লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে বাংলাদেশ ভালো করছে। এছাড়া নবজাতক মৃত্যুর হার কমেছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ ভালো করেছে।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ২ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী মূল প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ইউএনডিপির প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এবারে সূচকে বিশ্বের ১৮৭টি দেশের মধ্যে ৫ `স্কোর` নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।
বাংলাদেশে ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টেফান প্রিসনার প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
এবছর বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে পিছনে থাকলেও আগামী বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে ইউএনডিপির প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দেখানো হয়েছে ৬৮ দশমিক ৯ বছর। আর মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় (জিএনআই) দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৫২৯ ডলার।
মানব উন্নয়ন সূচকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ নরওয়ের এবারের স্কোর শূন্য দশমিক ৯৪৩। শূন্য দশমিক ৯২৯ স্কোর নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় এবং শূন্য দশমিক ৯১০ স্কোরে নেদারল্যান্ডস তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
এবারের সূচকে সবার নিচে, অর্থাৎ ১৮৭তম অবস্থানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ২৮৬।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতি নারীর গড় উর্বরতা হার ছিল ৬.৬। কিন্তু তা কমে ২০০৯ সালে দাঁড়িয়েছে ২.৪। এ ক্ষেত্রে সরকার জন্মনিরোধক সামগ্রী অতি সহজে হাতের কাছে পেতে ভর্তুকি দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে জন্মনিরোধক ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
ঢাকায় ইউএনডিপি’র সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর একেএম মোর্শেদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, এবারে বাংলাদেশের অর্জন হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা।
তিনি বলেন, যেখানে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট দি ইনভেস্ট ক্যালকুলেশন, সেখানে জেন্ডার ইকুইটিকসটাকেও গণনায় ধরা হয়। সেখানে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ অগ্রগতি করেছে। সেটি হচ্ছে এবারের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া।
মোর্শেদ বলেন, এবার এ শতকরা ২৫ ভাগের বড় কারণ গত বছর আমাদের নবজাতক মৃত্যুহারে নতুন স্ট্যাটিস্টিকস বের হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে- বাংলাদেশ এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ম্যাটারনাল মর্টালিটি কমাবার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে।
ইউএনডিপি’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ এখনও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।
একেএম মোর্শেদ বলেন, এ প্রতিবেদনে সর্বশেষ পরিসংখ্যান যুক্ত হয়নি। সেটা হলে বাংলাদেশের অবস্থা আরও ভাল হতো।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি রাহিদ এজাজ ও মহাসচিব আবদুল মজিদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১১