এমপি রানাসহ তার ৪ ভাই ফারুককে হত্যা করেছে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১০:৩৪, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
আমানুর রহমান খান রানা

আমানুর রহমান খান রানা

টাঙ্গাইল: আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে এমপি রানা ও তার ভাইয়েরা মিলে হত্যা করেছে বলে জেরার সময় আদালতে বলেছেন বাদী নাহার আহমেদ।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার আইনজীবীরা  ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদকে জেরা করেন।

জেরার সময় নাহার আহমেদ আদালতে বলেন, ২০১২ সালে টাঙ্গাইল-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে রানা বিদ্রোহী প্রার্থী হন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে রানার কয়েকজন কর্মীকে অস্ত্রসহ পুলিশ আটক করে। রানা আটক কর্মীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য ফারুককে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ফারুক তাদের ছাড়ানোর চেষ্টা না করায় রানা ও তার ভাইয়েরা ক্ষুদ্ধ ছিলেন তার উপর।

জেরার একপর্যায়ে আমানুরের আইনজীবী আব্দুল বাকী মিয়া ফারুক আহমেদের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক বিরোধ, ফারুক চরাঞ্চলে দু’টি স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিয়োগকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিরোধের বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি নাহার আহমেদের কাছে জানতে চান এসব কারণে ফারুক আহমেদ খুন হয়েছেন কিনা। জবাবে নাহার আহমেদ বলেন, সব মিথ্যা কথা।

নাহার আহমেদ আদালতে বলেন, আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যু একদিন হবেই। তাই কাউকে ভয় করি না। নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত খুনিদের বিচার চেয়ে যাবো।

টাঙ্গাইল কোর্ট পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে মাইক্রোবাসে করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে বুধবার দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়।

সোয়া ১২টায় বিচারক আবুল মনসুর মিয়া মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। মামলার বাদী নাহার আহমেদকে আমানুরের আইনজীবীরা প্রায় এক ঘণ্টা জেরা করেন।

মামলার আরও দুই সাক্ষী নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুনের হাজিরা আদালতে দাখিল করা হয়। পরে আদালত আগামী ৯ মে জেরার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

মামলার প্রধান আসামি এমপি রানা ছাড়াও টাঙ্গাইল কারাগারে থাকা আরো তিন আসামি মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান রাজা ও মো. সমিরকে আদালতে হাজির করা হয়।

এছাড়া জামিনে থাকা আসামি নাসির উদ্দিন নুরু, মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ফরিদ আহম্মেদ আদালতে হাজিরা দেন।

আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুরেই এমপি রানাকে কড়া পুলিশ প্রহরায় কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত থেকে জেরা শেষে কাশিমপুর কারাগারে রওনা হওয়ার সময় রানা উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার টাঙ্গাইলের নোংরা রাজনীতির শিকার।’

দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর রানা গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এই আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১-এ আছেন। বেশ কয়েক দফা উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এ হত্যায় এমপি রানা ও তার ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এ মামলায় এমপি রানা ছাড়াও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জন আসামি রয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
আরএ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান