ঘুমের ঘোরে শীতে জড়োসড়ো তারা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০১:০৭, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
ছবি: আরিফ জাহান

ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: নভেম্বরের শেষ নাগাদ জেঁকে বসবে শীত–আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমনটা বলেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। গত তিন দিনের আবহাওয়ার হাবভাবটা অন্তত সে রকমটাই জানান দিচ্ছে। সকাল থেকে দিনের একটা অংশ জুড়ে মেঘের ভেলায় মোড়ানো থাকছে সূর্য। বিকেল হওয়ার আগেই সেই সূর্য হারিয়ে যাচ্ছে মেঘমালায়।

কাকডাকা ভোরের পরিবেশটা থাকছে কুয়াশায় মোড়ানো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে শীতের হিমেল হাওয়া। রাতের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের মাত্রাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। গত দু’দিন ধরে শীতের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। যেন হাঁড় কাপাতে আসছে শীত।

বিকেল থেকেই শিশু, মধ্য ও বৃদ্ধ শ্রেণির মানুষগুলো প্রস্তুতি হিসেবে শীতের কাপড় শরীরে জড়িয়ে নেওয়া শুরু করে। সন্ধ্যার পর সেই পবর্টা সেরে নেন অন্য বয়সী মানুষগুলো। বাসাবাড়িতে রাতে ঘুমানোর জন্য ইতোমধ্যেই কাঁথার পাশাপাশি শীতের লেপ ও কম্বল বের করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শীতের মাত্রা বুঝে যে যার মতো সেগুলো ব্যবহার করছেন।
 
তবে এক্ষেত্রে সমস্যায় রয়েছেন ছিন্নমূল মানুষগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর অবস্থাও একইরকম। মধ্য ও উচ্চ বিত্ত পরিবারের মানুষগুলো শীত মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে বাসাবাড়ি থেকে বেরোতে পারলেও সেই সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো তা করতে পারছেন না। শীতে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমের ঘোরে যেতে হচ্ছে তাদের। আবার একই অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের ঘুম ভাঙছে।
ছবি: আরিফ জাহানবগুড়ার রেলওয়ে ষ্টেশন ও আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখলে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর রাতের বেলায় ঘুমে যাওয়ার এমন চিত্রই ওঠে আসে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢালাই মেঝে, মেঝের উপরিভাগ থেকে যেন উঠে গেছে ছালবাকর। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরপরই সেখানেই রাত যাপনের প্রস্তুতি চলে ছিন্নমূল অসহায় মানুষগুলোর। কেউ প্লাস্টিকের আবার কেউবা চটের বস্তা বিছিয়ে নেন সেই মেঝেতে। ছেড়া বা জোঁড়াতালির কাঁথা বিছাতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। আবার অনেকেই শীতের ধকল কাটিয়ে উঠতে শরীরে কাপড় বা চাদর জড়িয়ে গাঁদাগাঁদি করে বসে থাকেন।

তবে চারপাশটা ফাঁকা। মাঝে মধ্যে সেই ফাঁকাফোকর দিয়ে ছুটে আসে হিমেল হাওয়া। পুরো শরীরটা তখন ঠাণ্ডায় যেন কুঁকড়ে ওঠে। প্রচণ্ড কাপুনি দিয়ে থরথর করে ওঠে দেহটা। সেই কাপুনি থামতে না থামতেই আবার শরীরে এসে আঘাত হানে শীতল হাওয়া। এখনই এভাবে শীতের রাতগুলো পাড়ি দিতে হচ্ছে ছিন্নমূল অসহায় মানুষগুলোকে। অথচ আসন্ন হাঁড় কাপানো শীতের রাতগুলো তো পড়েই আছে।

ছবি: আরিফ জাহানমর্জিনা বেওয়া, হাওয়া বেগম, জোবেদ খাতুন বাংলানিউজকে জানান, রেলওয়ে ষ্টেশন ও আশেপাশের এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। অভাবের তাড়নায় পেটের দায়ে তাদের এ শহরে আসা। তাদের অনেকেই আবার স্বামী হারা। আবার অনেকের স্বামী থেকেও নেই। বিয়ে করে পৃথক সংসার করছে। তাদের ঘরেও অভাব। ছেলে-মেয়ের দিকে চেয়ে থাকলে পেটে ভাত যাবে না।

হামিদা বেওয়া, ওমেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, সকাল হলেই ছড়িয়ে পড়েন শহর এলাকায়। সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আবার রেলওয়ে ষ্টেশনে চলে আসেন। দিন শেষে যা পান তাই পেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

তবে দিন যতই যাচ্ছে শীত ততই বাড়ছে। গত দু’দিনেই শীতের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। শীতের কাপড় না পরে সকাল ও বিকেলে কোথাও বের হলে কষ্ট হয়। সন্ধ্যার পর শীতে গায়ে কাপুনি ওঠে যায়। এতে ঠাণ্ডায় ঠিকমতো ঘুমও আসতে চায় না। কিন্তু তাদের মতো গরীবদের কি-ইবা করার আছে। সব ধরনের প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকা ছাড়া সামনে কোনো পথ নেই যোগ করেন ছিন্নমূল অসহায় এই মানুষগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমবিএইচ/এমআরপি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান