
ঢাকা: আগামী ১৪ নভেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) জমার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই সময় পর্যন্ত তার আটকাদেশ বহাল থাকবে বলেও আদালত জানায়।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশলী জিয়াদ আল মালুম ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তিনি ওই সময় পর্যন্ত সাকার আটকাদেশ বহাল রাখতে ট্রাইব্যুনালে আবেদনও জানান।
আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশলী জিয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১ আগস্ট ট্রাইব্যুানালের আদেশ ছিলো, ৪ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অগ্রগতি অথবা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার। সে অনুযায়ী সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নূরুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর কাছে সাকার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। মঙ্গলবার সেই প্রতিদেন ট্রাইব্যুনালে দাখির করা হয়।’
এ সময় সাকার অপরাধের বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে সদর এবং নিজের এলাকা রাউজানে তিনি নানা অপরাধ করেন। তার বিরুদ্ধে ৩২টি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগের সঙ্গে সাকা সরাসরি যুক্ত ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সাকার বাসভবন গুডহিল তখন টর্চার সেন্টার নামে পরিচিত ছিলো। সেখানে ক্রমাগতভাবে শহরের মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু লোকজন, শিল্প-সাহিত্যক, সাংবাদিক ও নারীদের এখানে ধরে এনে টর্চারের পর হত্যা করা হতো। শুধু তাই নয় তার নিজের এলাকা রাউজানের ডা. নতুন চন্দ্র সিংহসহ মধ্য গহিরার ডা. মাখন লাল শর্মাসহ, গহিরা বিশ্বাস পাড়া, জগৎমল্ল পাড়া, উনসত্তোর পাড়াসহ পুরা হিন্দু অধ্যাসিত এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে এসবের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।’
এর আগে সোমবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর কাছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
১১৯ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নূরুল ইসলাম।
এর আগে রোববার মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে তদন্ত সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে জানিয়েছিলেন মো নূরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের যুক্ত থাকার বিষয়ে গত বছরের ২৬ জুলাই তদন্ত শুরু করি। আমি নিজে এবং তদন্ত সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তারও সাকাচৌর অপরাধের স্থান চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়েছি। তার অপরাধের স্থানগুলো পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ভিকটিম এবং ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী জবানবন্দি নিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সরকারি দলিলপত্র ও পত্র-পত্রিকা পর্যালোচনা করেছি। ৭১ সাল এবং তার পরে সাকা চৌধুরী সম্পর্কে যেসব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেসব পত্রিকা সংগ্রহ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সাকার অপরাধগুলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ৭৩ এর ৩ এর ২ এর ‘এ’ ‘সি’ ‘জি’ এই তিন ধারায়। ৩ এর ২ এর ‘এ’ তে আছে মানবতাবিরোধী অপরাধ, ‘সি’ তে আছে গণহত্যা এবং ‘জি’ তে আছে এইসব অপরাধের সহায়ক হিসেবে তার সম্পৃক্ততা।’
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নূরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি নিজেও অপরাধ করেছেন, অপরাধে সহযোগিতাও করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতিবেদনই আমাদের শেষ নয়, বিচার কাজ চলাকালে বিচারের স্বার্থে তদন্তের প্রয়োজনে যদি নতুন কোনও তথ্য আসে, তাহলে সেটাও আমরা ট্রাইব্যুনালে সাবমিট করব। আইন আমাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে।’
নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এই তদন্ত প্রতিবেদন আমরা ১৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওই তিনটি ধারায় ৩২টি সুনির্দিষ্ট অপরাধের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১১