কে এই রুবি?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৯:০৮, আগস্ট ৭, ২০১৭
সালমান শাহ ও রাবেয়া সুলতানা রুবি

সালমান শাহ ও রাবেয়া সুলতানা রুবি

অমর চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে ভিডিও প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছেন রাবেয়া সুলতানা রুবি নামে এক নারী। সালমান হত্যা মামলার ১১জন আসামির মধ্যে তিনি অন্যতম। 

সালমান মারা যাওয়ার পর থেকে রুবি বিদেশে আছেন। সেখান থেকে একাধিকবার বিভিন্ন ভিডিওতে বলেছিলেন যে, তিনি নির্দোষ, কিচ্ছু জানেন না। সেসব ভিডিওতে সালমান আত্মহত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছিলেন রুবি। 

এবার সালমান হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা  স্বীকার না করলেও এর সঙ্গে জড়িত অন্যদের নাম বলেছেন রুবি। সামিরার পরিবার ও রুবির স্বামী জন এই খুনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ দিতে পারবেন বলে দাবি করেছেন প্রবাসী এই নারী। 

রাবেয়া সুলতানা রুবির নতুন ভিডিওবার্তা এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সালমান ভক্ত অনেকেই রুবি সম্পর্কে জানেন। কিংবদন্তি এই নায়কের জীবনে রুবির ভূমিকা কী? প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে কে এই রুবি? 

রুবি সম্পর্কে কিছুটা জানা গেছে সাংবাদিক সুপন রায়ের লেখা  'সালমান শাহ অজানা কথা' বই থেকে। রুবি, তার পরিবার ও সালমান শাহ তথা সামিরার পরিবারের সঙ্গে রুবির সম্পর্ক নিয়ে কিছু বর্ণনা পাওয়া গেছে বইটিতে। 

সুপন তার গ্রন্থে লিখেছেন, “রাবেয়া সুলতানা ওরফে রুবি থাকেন সালমানের ফ্ল্যাটের অর্থাৎ ইস্কাটন প্লাজার উত্তর পাশের বিল্ডিংয়ে। তিনি রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে। প্রয়াত স্বামী ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন তার বর। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয় তার স্বামী ছিলেন তাদের একজন। বর্তমানে (তৎকালীন) তিনি মে-ফেয়ার নামক বিউটি পার্লারের সত্ত্বাধিকারী।

রুবিকে নিয়ে বিতর্ক বহু আগে থেকেই। সালমান জীবিত থাকাকালে রুবিকে তার ফ্ল্যাটে কখনো না আসার নির্দেশ দিয়ে বের করে দেন। ঘটনাটি পারিবারিক কোন্দল নিয়ে। সালমানের মায়ের সাথেও সেই থেকে রুবির মন কষাকষি চলতে থাকে। অভিযোগ আছে, এর কথা ওর কানে, ওর কথা এর কানে লাগিয়েছেন। উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করাতে তার খ্যাতি আছে। এ কাজে তিনি বরাবরই সিদ্ধহস্ত। তার ইচ্ছে ছিলো আমেরিকা পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের জন্যে সামিরাকে স্ত্রী করে ঘরে তুলবেন। সেই স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে হয়ে গেলো সালমান-সামিরার বিয়েতে। সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে, সালমান-সামিরার দাস্পত্য কলহের পশ্চাতে তার ভূমিকা ছিলো সবচেয়ে বেশি। সালমানকে তিনি দেখে নেবেন, এ রকম কথাও তিনি বলেছেন অনেকের কাছে। যাদুশিল্পী আজরা জ্যাবিনের কাছে এই রুবি বলেছিলেন, সালমানের সব টাকা তার মা নিয়ে যাচ্ছে, সামিরার কি হবে? এবং এ অভিযোগটি করেছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। তার ভাষ্য, ‘আমার ছেলের টাকা আমি নিলাম না তার বাবা নিলো এসব নিয়ে রুবির মাথা ব্যথা কেন? রুবি কে, যে আমার সংসার জীবনে হস্তক্ষেপ করবে?”

সুপনের ভাষ্যে, “সালমানের মৃত্যু দিন ছিলো প্রশ্ন সাপেক্ষ। তার (রুবির) ভূমিকা নিয়েও পত্রপত্রিকাসহ নীলা চৌধুরী অভিযোগ করেছেন। সালমানের মৃতদেহ একপাশ রেখে রুবি-সামিরা বসে গল্প করার অভিযোগও সুস্পষ্টভাবে কথিত আছে। এই প্রশ্নগুলো যখন লোকমুখে ঠিক তখনই এ প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি দেখা করতে আসেন রুবি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে একে একে উত্তর দেন সব প্রশ্নের, খণ্ডান যুক্তি। অথচ  আগে বারদুয়েক তার পার্লারে দেখা করতে গেলে বলা হয়, তিনি পার্লারে নেই, বাইরে আছেন।

রুবি বলেন, ‘ইমনের আত্মহত্যার খবর শুনে সাথে আমার ছেলে ভিকি, পার্লারের মেয়েরা ফ্ল্যাটে ঢোকার মুহুতেই দেখলাম, ধরাধরি করে ইমনকে বের করে আনা হচ্ছে। আমি ভাবলাম, স্লিপিং পিল খেয়েছে, স্টমাক ওয়াশের জন্যে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ভিতরে ঢুকে দেখি ডাইনিং টেবিল-কিচেনের মাঝামাঝি মেঝেতে সামিরা বসা। কাঁদছে। আমাকে দেখেই ও দৌড়ে এলো। ওকে সান্ত্বনা দেয়ার সময় ৮১ সালের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর ভেতরে তোলপাড় করা অবস্থা। টের পেলাম সুইটি ভাবী, ইয়াসমিন তখনো দাঁড়িয়ে। একটু পরেই ইমনের মা ( নীলা চৌধুরী) এসে বললো, ‘দরজা বন্ধ করো, কাউকে ঢুকতে দেবে না।' আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তিনি সামিরাকে বলে উঠবেন, ‘সামিরা কাইন্দো না, তুমিই ইমনকে মেরেছো।' তখন সামিরা হিষ্টিরিয়া রোগীর মতো বলে উঠলো, ‘আমি কেমন করে আপনার ছেলেকে মারলাম!’ তখনো হীরা ভাইকে (সামিরার বাবা) জানানো হয়নি ইমনের খবর। সুইটি ভাবীর বাসায় গিয়ে ফোনে চট্টগ্রামে হীরা ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। কিছুক্ষণ পরে ফ্ল্যাটের ম্যানেজার ডাক্তার নিয়ে আসেন। ডাক্তার কিছু না বলেই চলে গেলেন। আমি স্লাভো ক্লিনিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন, সালমান মৃত। আমি উল্টো প্রশ্ন করলাম, আপনি নিশ্চিত? ডাক্তার সম্মতি জানাতেই, ভালো হলো না, বলে চলে এলাম। সাথে আমার ছেলে ভিকি। এসেই সামিরা, সালমান মহসীন (সুইটি ভাবির বর) ভাইকে জানালাম ইমন মারা গেছে। কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাট থেকে ফোন করলাম এক উর্ধবতন পুলিশ কর্মকর্তাকে। বললাম পুরো ঘটনা । ওই অবস্থায় সামিরাকে নেবো প্রশ্ন করাতেই তিনি বললেন, ‘আপনি ভুলেও এ কাজ করবেন না। জড়িত হয়ে পড়বেন।' সামিরা তখন আমাকে বললো, ‘ইমন একটা চিঠি লিখে গেছে।' আমি বললাম, কোথায় সেটা? সামিরা বললো, ‘আবুলের হাতে।’ আমি তখন তাকে বললাম, তুমি কি একটা বুদ্ধু মেয়ে? তুমি জানো এ চিঠির মূল্য কতো? এরপর ১/বি-র রুমির আব্বা এসে সামিরাকে ওনার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। আমি আমার বাসায় চলে যাই। আমি বুঝতে পারছি না আমাকে কেন ইমনের আত্মহত্যার সাথে জড়ানো হচ্ছে। গত অক্টোবর’৯৫ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সামিরার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ফ্ল্যাটের দারোয়ানই তার প্রমাণ।

রুবির দেওয়া ব্যাখ্যাই যে সর্বাংশে সত্যি তারও যথাযথ প্রমাণ নেই। তথাকথিত আত্মহত্যার পর রশি কেটে নামানোর পর সালমানের গায়ে তেল মালিশ করার সময় রুবি যে উপস্থিত ছিলেন সেটা সামিরা নিজেই বলেছেন। পত্রিকার পাতা ওল্টালেই এর প্রমাণ মিলবে। তিনি বলেছেন, ‘সালমানকে ধরাধরি করে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পরেই তিনি ফ্ল্যাট ঢোকেন। অথচ নীলা চৌধুরী তাকে ফ্ল্যাটে ঢুকেই দেখতে পান। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করা, 'কাজটা ভালো হলো না,’ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে অতি উৎসাহী আলাপনের রুবির স্ববিরোধিতা প্রকাশ পেয়েছে, বুদ্ধিমতি হলেও তিনি তা বুঝে উঠতে পারেননি। সালমানের লিখে যাওয়া চিঠি আবিষ্কারের সাথে তার নাটকীয় সম্পর্ক তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। ফ্ল্যাটে তিনি এক বছর ধরে যান না এবং ফ্ল্যাটের রেজিষ্ট্রার বই তার প্রমাণ বলে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতেও অসত্য লুকিয়ে আছে। ইস্কাটন প্লাজায় ঢুকতে যে তার সই করতে হয় না কিংবা রিসেপশন থেকে ইন্টারকমের মাধ্যমে সম্মতি নিতে হয় না এ কথা ফ্ল্যাটের সবাই জানে। ফ্ল্যাটের কর্মচারীদের কাছে রুবি ‘তথাকথিত আন্টি’ নামে পরিচিত।

>>>আরও পড়ুন-
আসামিই স্বীকার করলেন সালমান শাহকে খুন করা হয়েছিলো

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এসও 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান